শনিবার, ১ আগস্ট, ২০১৫

নারীবাদ কি মানবতাবাদের বাইরে কিছু?


 আমি যখন নারীবাদ নিয়ে লিখি, অনেকেই বলে,
নারীবাদ পুরুষবাদ এসব বাদ দিয়ে বরং মানবতাবাদ নিয়ে লিখুন। আবার তারাই বলে, নারীদের অধিকার আদায়ে নারীদেরই এগিয়ে আসতে হবে। তারা যদি মানবতাবাদেই বিশ্বাসী হয়ে থাকে, তবে তারা কেন বলে না যে, মানুষের অধিকার আদায়ে মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে! আর তখনই আমার কাছে তাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়ে যায়। আমি যখন নারীবাদ নিয়ে লিখি তখন তারা আমাকে থামিয়ে দেয়ার জন্য মানবতাবাদ নিয়ে লেখার পরামর্শ দেয়। তবে কি তারা মনে করে, নারীবাদ মানবতাবাদের বাইরে কিছু? নারী কি মানব শ্রেনির বাইরের কোন প্রানী? 

অনেকে আবার নারীবাদ আর পুরুষতন্ত্র এই দুই বিষয়কে এক করে ফেলে। নারীবাদ নারীর অধিকারের কথা বলে। আর পুরুষতন্ত্র নারীর অধিকার খর্ব করে পুরুষ লিঙ্গ ধারনের কারনে বিশেষ সুবিধা ভোগের কথা বলে। নারীবাদ মানে তো পুরুষের অধিকার খর্ব করা নয়। তবে এই দুটো বিষয় এক হল কি করে?

কিছু সুবিধাবাদীদের মতে, পুরুষতন্ত্রের পক্ষে কথা বলা যেমন ঠিক না, ঠিক একই ভাবে নারীবাদের পক্ষে কথা বলা ও ঠিক না।

আচ্ছা ধরুন, দুইজন মানুষ একজনের বিলাসী জীবন অন্য জনের বিলাস তো দূরের কথা নিজের বলে কোন কিছু নেই। নেই, কারণ তাকে দেয়া হচ্ছে না। আমি যদি সেই মানুষটির পক্ষে কথা বলি তবে সেটা কি মানবতাবাদ নয়? এখন যদি আপনি বলেন যে, যেই ব্যাক্তি বিলাসী জীবনযাপন করে তার পক্ষে কথা বলা যেমন খারাপ, তেমনি যেই মানুষটি অন্যের দাস হিসেবে জীবনযাপন করে, তার দাসত্ব অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য কথা বলা ও খারাপ, তবে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়ায়? 


বিয়ের আগে বাবার বাড়ি, বিয়ের পর স্বামীর বাড়ি। বাবার বাড়ি চলে বাবার নিয়মে, স্বামীর বাড়ি চলে স্বামীর নিয়মে। একবার ভেবে দেখুন তো আমাদের সমাজে মেয়েদের নিজের বলে কিছু আছে কিনা, নারী নিজেই নিজের না, অন্যের ইচ্ছায় বাঁচে, অন্যের মত করে চলে। আর নারীবাদ পুরুষতান্ত্রিক সমাজের এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে।

আর যেসব সাহসী নারীরা নারীর অধিকার নিয়ে সোচ্চার হয়, সমাজের প্রগতিশীল পুরুষেরা তাদের থামিয়ে দিতে নারীবাদের সীমা সৃষ্টি করে দেয়। তাদের সৃষ্ট সীমা মেনে চললে সেটা নারীবাদ। আর তাদের সৃষ্ট সীমার বাইরে গেলেই, সেই নারী পতিতা বেশ্যা 

নারীর কন্ঠরোধ করে যারা নারীবাদী হয়, নারীর কথা গুলো নারীকে বলতে না দিয়ে যারা পুরুষের কথাগুলোই নারীবাদ নামে প্রচার করে নারীবাদের সীমা সৃষ্টির করার চেষ্টা করে। এসব প্রগতিশীলেরা প্রগতিশীল বটে, তবে তারা কেবলই প্রগতিশীল পুরুষ, প্রগতিশীল মানুষ নয়। তাদের সব প্রগতি পুরুষের স্বার্থে। তারা অফিসে কর্তার চেয়ারে বসে, কর্তার এখন একটা সুন্দরী এসিস্ট্যান্ট লাগবে বলে কর্তাবাবু মধ্যযুগীয় প্রথা থেকে নারীকে বের করে আনতে চায়। তবে সেটা নারীর জন্য নয়, একজন সুন্দরী এসিস্ট্যান্ট এর সঙ্গ পাওয়ার জন্য। 

নারীর অধিকার নিয় আদৌ তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই। নারীর দুঃখকষ্ট গুলো তাদেরকে মোটেই স্পর্শ করে না। দুঃখের বিষয় হল, আমাদের সমাজে প্রগতিশীল মানুষের চেয়ে প্রগতিশীল পুরুষের সংখ্যায়ই বেশি। তাই নারী নিয়ে প্রেম ভালোবাসার গদ্য-পদ্য-গান লেখার অনেক মানুষ পাওয়া গেলেও নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলার মানুষের দেখা পাওয়া যায় না।