রবিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৬

বাংলা চটি


গুগলে কখনো ‘মা ছেলে’ ‘বাবা মেয়ে’ কিংবা ‘ভাই বোন’ লিখে সার্চ দিয়ে দেখেছেন?
না দেখলে এখনই দেখুন। হাজার হাজার চটি কাহিনী পেয়ে যাবেন। ভাবতেই অবাক লাগে!

 ওয়াজ মাহফিলে বলা হয়, ৯৯% মুসলমানের দেশে একজন নাস্তিককেও বাঁচতে দেয়া হবে না। নাস্তিকরা ইসলাম বিরোধী কাজ করে, তারা আল্লাহ্‌ মানে না।

নাস্তিকরা কি ধরণের ইসলাম বিরোধী কাজ করে?

ব্যক্তি জীবনে তারা কোন ধর্মীয় নিয়মকানুন মেনে চলে না, অনেকে আবার পারিবারিক কারণে বাধ্য হয়ে মেনে চলে। অনেক নাস্তিক ব্লগে, ফেসবুকে তাদের মত প্রকাশ করে, যুক্তিতর্ক করে। এগুলো এতটাই ভয়াবহ ইসলাম বিরোধী কাজ যে, এসকল কাজের জন্য তাদেরকে হত্যা করাই যায়।

কিন্তু এই যে হাজার হাজার চটি পেইজ, ওয়েবসাইট, ইউটিউব চ্যানেল, সিডি ভিডিও, রাস্তার ধারে বিক্রি হওয়া চটি বইগুলোতে যে ধরণের নোংরামি করা হয় সেসব কি ইসলাম বিরোধী কাজ? মোটেই না। কারণ, এসব চটি পেইজ, ওয়েবসাইটের লাখ লাখ ভিউয়ার। রাস্তাঘাটে বিক্রি হওয়া চটি বইগুলো নিষিদ্ধ করার দাবী উঠে না। এসব বইয়ের পাঠকেরা ধর্ম মেনে চলে, চটি পেইজ গুলোর লাইকাররাও অধিকাংশই আস্তিক। গ্রুপসেক্স, বাবা, ভাই, মা, বোন ও এনিমেল সেক্স ভিডিও গুলোর দর্শকেরাও অধিকাংশই ধর্ম মেনে চলা আস্তিক। এসব পড়ে কারো কোন অনুভূতিতে আঘাত লাগে না, চটি লেখার জন্য কাউকে এখনো হত্যা করা কিংবা হত্যার হুমকি দেয়া হয় নি। কাজেই বলাই যায় যে, চটি লেখা একটি ইসলাম সম্মত কাজ।

নাইলা নাঈম, সানি লিওনের নাম শুনে ছি ছি করলেও হাত মারার জন্য কিন্তু নাইলা নাঈম কিংবা সানি লিওনই তাদের ভরসা।

মাদ্রাসা গুলোতে ছেলে শিশু, মেয়ে শিশু উভয়ের উপরই যৌন নির্যাতন চলে। এসব নিয়ে পত্রিকায় খবর হয় বটে কিন্তু এসব নিয়ে কোন আন্দোলন হয় না, দোষীদের শাস্তির দাবীতে মিছিল হয় না। মিছিল হয় নাস্তিকদের ফাঁসির দাবীতে। এক সময় নাস্তিক তসলিমার ফাঁসির দাবীতে মিছিল হয়েছিল। মিছিল,মিটিং,ফতোয়া সব তসলিমার ভুলের কারণে হয়েছে, এসব তার ব্যক্তিগত কিছু ধরে নিয়ে, নিজেরা গা বাঁচিয়ে দূর থেকে তামাশা দেখেছি। প্রতিবাদ না করে তামাশা দেখার ফলাফল তো আজ হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছি।

জামায়েত নেতা মওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ওয়াজের জন্য খ্যাত। তার ওয়াজে নারীদের চরিত্র ঠিক রাখার জন্য, বোরখা হিজাব পরানোর কথাও বলা হতো। ইউটিউবে প্রকাশিত হয়েছে, সেই হুজুরের ফোনে সেক্স আলাপের কাহিনী।

 শফিউর রহমান ফারাবী, মুক্তমনাদের তথ্য কালেক্ট করা এবং হুমকি দেয়া যার মূল কাজ। ফারাবীর বেশ কয়েকটি ফেইক আইডি থেকে আমাকে রিকুয়েস্ট পাঠানো হয়েছিল, সাথে প্রেম প্রস্তাবের ম্যাসেজ। সেসব আইডি আমি সাথে সাথেই ব্লক করি। পরে জানতে পারি, মুক্তমনাদের তথ্য কালেক্ট করা, হত্যার হুমকি দেয়া, হত্যার পরিকল্পনা করা ছাড়াও মেয়েদেরকে প্রেম প্রস্তাব দিয়ে, ইনবক্সে সেক্স চ্যাট করা তার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

পুরুষরা নিজেদের প্রয়োজনে নারী’কে উলঙ্গ করে আবার ব্যক্তিগত সম্পত্তি বানানোর জন্য নারীকে বোরকা পরিয়ে গৃহবন্দি করে।

তারা যুবতী মেয়েদের উলঙ্গ নাচ দেখে এসে গভীর রাতে বউ পিটায়। বলে, ‘দুপুর বেলা মাথায় ঘোমটা ছাড়া উঠানে গেছিলি ক্যান? বাইরের বেডারা দেখছে না বিলের আইল থিকা?’ ঘরের বউটি যদি তখন বলতে পারতো, ‘তর সংসারের খ্যাতা পুড়ি। গায়ে হাত দিতে আইবি না সাবধান, চোদাচুদি করতে আইলে পারস না, দশমিনিট পরেই তর বালের দন্ড দড়ি হইয়া যায়, সেই ন্যাতাইয়া যাওয়া দড়ির অহংকার দেখাইতে আইবি না আমার কাছে।’

ভাইয়েরা মেয়েদের উলঙ্গ নাচ দেখে আসে এবং ওইসব মেয়েদের বুক ঠোঁট নিতম্বের কল্পনা করে হাত মারতে মারতে বোনকে বলে, ‘সকাল বেলা স্কুলে যাওনের সময় তোর বোরকার মুখের ঢাকনি খোলা আছিল ক্যান?  মা’কে বলে, ‘তোমার মাইয়ার লজ্জা শরম নাই, বোরকার মুখের ঢাকনি তুইল্যা অন্য মাইয়াগো লগে হাসাহাসি করতে করতে রাস্তা দিয়া স্কুলে যাইতেছিল, অরে শাসন কর, তোমার মাইয়া কিন্তু নষ্ট হইয়া যাইতেছে’। এসব ভাইদের মেয়েরা যদি বলতে পারতো, ‘আমার লজ্জা-শরম- চরিত্র নিওয়া ভাইবো না, তুমি যেভাবে সানি লিওন দেইখ্যা হাত মারা ধরছ, দুইদিন পর তো বিচি খুইল্যা আইয়া পরব, সেটা নিয়া ভাবো।’

নিজেরা দুনিয়ার সব নষ্টামি করে এসে হিজাব বোরখা না পরা মেয়েটিকে ‘নষ্ট’ উপাধি দিয়ে তার চরিত্র নিয়ে গবেষণা, সমালোচনা করে।

ধর্ষণের ভিডিও দেখে হাত মারা বাঙালি আমরা। ধর্মানুভূতি ছাড়া বাকিসব অনুভূতি আমাদের মধ্যে বিলুপ্ত প্রায়। সারা বছর মুখের ভাষায়, চোখের ভাষায় অন্যের বোনকে ধর্ষণ করে, রোজার মাসে ১২ ঘণ্টা না খেয়ে বিশাল ত্যাগ ও সংযম করি।

মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী, ২০১৬

বুক!

আমি স্লোভাকিয়ায় একজন বাঙালি মহিলার সাথে থাকি। এই ৪মাসের মধ্যে তার সাথে আমার যথেষ্ট ভাব হয়েছে। তিনি এখন আমার সবকিছুর সঙ্গী। কথায় কথায় তিনি জানতে পারলেন যে আমি কখনও ব্রা পরিনি। শুনে খুব অবাক হলেন।তিনি আমার বুকের সাইজ নিয়ে খুব চিন্তিত। তার মতে, আঠারো বছরের মেয়ের বুকের গঠন যেমন হওয়া উচিত, আমার বুকের গঠন ঠিক সেরকম নয়। আমাকে গায়োনকলিজিস্ট দেখানোর চিন্তাও করছিলেন তিনি।

সেদিন হটাত আমাকে ডেকে, একটা লাল রঙের ব্রা দেখিয়ে বললেন, এটি তার অনেক আগের ব্রা, সবচেয়ে ছোট সাইজের ব্রা বলতে যা বুঝায়, এটি তাই। একবার মাত্র পরেছেন, তিনি ওই ব্রা আমাকে উপহার দিতে চান। তিনি আমার ব্রার ‘হাতেখড়ি’ করাতে চান। বললাম, এটা ‘হাতেখড়ি’ হবে না, ‘বুকে-খড়ি’ হবে। আমি তার উপহার গ্রহণ করলাম বটে, তবে আমি জিজ্ঞেস  করলাম ব্রা কেন পরা জরুরি? উনি বললেন, গুগল করে যেন জেনে নিই। 

ব্রা যেহেতু আমি পরি নি, কাজেই এই বিষয়ে আমার জ্ঞান নেই বললেই চলে। তাই আমার আজকের লেখার বিষয় ব্রা নয়, বুক। বাংলাদেশে, মায়েরা সবসময় খেয়াল রাখে মেয়ের ওড়না ঠিক জায়গায় আছে কিনা। রাস্তায় চলাফেরার সময় লোকেরাও মেয়েদের বুকের ওড়নাটা ঠিক ওই জায়গাটাতে আছে কিনা দেখে নেয়, তারপর কোন একটা বাজে মন্তব্য করে নিজের পুরুষত্বের প্রমাণ দেয়। ঠিক এই কারণেই মেয়েরা সবসময় নিজের বুক নিয়ে চিন্তিত থাকে। কেউ দেখে ফেলল কিনা, কেউ যেন আবার বাজে মন্তব্য না করে। বুকের সাইজ বড় হতে থাকলে সেটা নিয়ে তারা খুব বিরক্ত হয়। কারণ এজন্য হয়তো তাকে ওড়নার উপর আরও কিছু পরতে হতে পারে, বুক ঢাকার জন্য।

আমাদের কলেজে আমরা ছেলেমেয়ে একসাথে লেখাপড়া করতাম। কলেজের মাঠটাতে ছেলেরা সবসময়ই কিছু না কিছু খেলতও।কখনও কলেজের কোন মেয়েকে ওই মাঠে খেলতে দেখি নি। একবার আমার মেয়ে বন্ধুরা নিজেদের মধ্যে মজা করতে করতে দৌড়চ্ছিল, দৌড়ানোর সময় ক্রস বেল্ট বাতাসে উল্টেপাল্টে গিয়েছিল, সেসব দেখে ছেলেদের হাসির শেষ নেই। এরপর থেকে ওই মেয়ে বন্ধুদের দৌড়ানোটুকুও বন্ধ হয়ে গেলও। কেউ দৌড়লে খুব সাবধানে, যেন ওড়নার কিছু না হয়, জামা যেন বাতাসে না উড়ে। অথচ ছেলেরা কলেজের ফুল প্যান্ট খুলে থ্রি কোয়াটার, আর শার্ট খুলে সেন্ডও গেঞ্জি পরে দিব্যি খেলছে। খেলার সময় কারও কারও প্যান্ট নিচে নামতে নামতে শেষ পর্যায়ে এসে গেলেও সেদিকে তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। না থাকাটাই স্বাভাবিক। খেলার সময় এসব নিয়ে ভাবলে চলে নাকি! কিন্তু মেয়েদের এসব নিয়ে ভাবতে হবে।

একদিন কলেজে গিয়ে জানতে পারলাম, আমাদের কলেজে নাকি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হবে। আমার মেয়ে বন্ধুরা বলল, ‘ইতু তোর তো ক্রিকেট পছন্দ, তুই টুর্নামেন্টে নাম দিস’। জিজ্ঞেস করলাম, ‘শুধু আমি কেন? তোরা দিবি না?’ বলল, ‘তুই দিলে আমরাও দিব।’ আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকলাম কখন টুর্নামেন্টের জন্য নাম নিতে আসবে।

পরদিন আমাদের ক্লাসে কয়েকজন ছেলে এসে জিজ্ঞেস করল, ক্রিকেট টুর্নামেন্টে কারা কারা খেলতে ইচ্ছুক? আমি সহ আমার মেয়ে বন্ধুরা হাত তুললাম, ছেলেরা হেসে আমাদেরকে হাত নামাতে বলল। ছেলেদের কেউ ইচ্ছুক কিনা তারা সেটা জানতে এসেছে। মেয়েরা কিভাবে ক্রিকেট খেলবে সেটা তাদের বোধগম্য হল না। আমার ক্রিকেট এত পছন্দ হওয়া সত্ত্বেও, আমি সেদিন খেলতে পারলাম না, আমি মেয়ে বলে।

আমাদের বুকের সাইজ ঠিক ছেলেদের মত নয় বলে, ছেলেরা আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করবে, এই ভয়ে আমরা খেলতে পারব না। আমাদের সেই স্তনের দুধ পান করেই হয়তো কোন শিশু মোটা তাজা পুরুষ হয়ে অন্যকোন মেয়ের খেলা বন্ধের কারণ হবে।

আমি গার্লস স্কুলে পড়েছি। সেই স্কুলে তো আমি দিব্যি ক্রিকেট খেলেছি, স্কুলে একটা ক্রিকেট টীমও ছিল।
টেনিস বল নয়, কাঠের বল দিয়ে আমরা স্কুলের বাইরে অন্য স্কুলের সাথেও খেলেছি। সেসময় তো মেয়ে বলে আমার খেলায় কোন সমস্যা হয় নি। আমাদের স্কুলের মেয়েরা সারাদিন দৌড়তও, কেউ তাদের নিয়ে হাসে নি। দৌড়ানোর সময় তাদের ওড়না, জামা এসব নিয়ে কখনও ভাবতে হয় নি। 

ফেইসবুকে একদিন কেউ একজন ম্যাসেজ করল, ‘তোমার দুধ খেতে চাই’। আমি উত্তর দিলাম, ‘লাত্থি মাইরা বিচি
ফাটাইয়া বিচির রস বাইর কইরা দিমু, তারপর নিজের বিচির রস নিজে খাইশ’।
আমি জানি, এই ধরনের মন্তব্য বাস্তব জীবনে কিংবা ভার্চুয়াল জীবনে অধিকাংশ মেয়েরই শুনতে হয়েছে। ছেলেরা সাধারণত মেয়েদের বিব্রত করতে এধরনের মন্তব্য গুলো করে থাকে। তারা যখন দেখে, মেয়ে বিব্রত না হয়ে পাল্টা আঘাত করছে তখন তাদের পুরুষানুভূতি আহত হয়।

ছেলেরা মেয়েদের বুককে লজ্জা-স্থান বানিয়ে, সেই লজ্জা-স্থান নিয়ে হাসাহাসি করতে পছন্দ করে। যদি কোন মেয়ে নিজের হাত,পা, মুখের মত বুককে শরীরের স্বাভাবিক একটি অঙ্গের মত উন্মুক্ত করে, তবে ছেলেরা খুব রাগ করে। এমনিতে তসলিমা নাসরিনের শরীর ফটোশপ করে, উলঙ্গ ছবিতে তাঁর মুখ বসিয়ে দিয়ে অনেক পুরুষলিঙ্গধারীরা মজা নেয়। কিন্তু যেই না তসলিমা নাসরিন একদিন প্রেশার কুকার এক্সিডেন্টে তাঁর পুড়ে যাওয়ার কথা লিখে, পুড়ে যাওয়া হাতের সাথে, বুকের পোড়াটুকুর ছবিও দিলেন, সাথে সাথেই নিন্দার তুফান শুরু হল। কেন তসলিমা নিজের বুক এভাবে কোন রাখঢাক ছাড়াই দেখাবে? তসলিমার লজ্জা নেই। তসলিমাদের লজ্জা পেতে হবে। লজ্জা পেলেই তো সেই লজ্জার নিয়ে তসলিমাদের ভয় দেখানো যাবে, বিব্রত করা যাবে, হাসিঠাট্টা করা যাবে, দমিয়ে রাখা যাবে।

আমার মনে হয়, মেয়েদের এখন নিজের বুক নিয়ে চিন্তা ঝেড়ে ফেলা উচিত। কারণ বুক শরীরের অন্য অঙ্গগুলোর
মতোই একটি অঙ্গ। এটা যতদিন মেয়েরা ঢেকে রাখবে, ততদিন ছেলেরা বুকে ছোবল মারতে চাইবে, বিব্রত করতে চাইবে। যখন থেকে মেয়েরা নিজেদের বুক নিজেরাই উন্মুক্ত করবে, তখন ছেলেদের অনুভূতিতে আঘাত লাগবে, তারা মেয়ের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। কিন্তু এসব রাস্তার ধুলোর মত ঝেড়ে ফেলে দিয়ে স্বাধীন ভাবে চলতে পারলেই মেয়েরা নিজেদের জীবনটাকে উপভোগ করতে পারবে।