কিছুদিন আগে অনলাইনে একজন ছাত্রীর সাথে স্কুল শিক্ষকের কথোপকথন শুনছিলাম। ওই শিক্ষক ক্লাস এইটে কিংবা নাইনে পড়ে এমন একজন বাচ্চা মেয়েকে বিছানায় নেয়ার প্রলোভন দেখাচ্ছিলেন। কথোপকথনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ তুলে ধরছি-
স্যারঃ তুমি কি আমার কথা রাখবা না? আমাকে একটু সময় দাও, আসো কথা বলি।
ছাত্রীঃ কী কথা স্যার? শিক্ষা বিষয়ক কথা?
স্যারঃ তোমাকে কেনাকাটা করে দিব।
ছাত্রীঃ আমার বাপ কি আমারে টাকা দেয় না? আপনের টাকা কেন নিব?
স্যারঃ তোমাকে আমার ভালো লাগে। মনটা উথাল পাতাল করে তোমাকে দেখলে।
ছাত্রীঃ ছিঃ ছিঃ স্যার। আপনি এসব কী বলেন? স্যার আপনার বউ নাই?
স্যারঃ বউ আছে, কিন্তু বউ কী সবসময় ভালো লাগে?
ছাত্রীঃ বউকে সবসময় ভালো না লাগলে আরেকটা বিয়া করেন।
স্যারঃ তুমি কী পারবা না? তুমি পারবে কিনা বলো।
ছাত্রীঃ আমি পারব মানে? কয়লা ধুইলে কখনো ময়লা যায় না। আমি যদি এখন এই কথা গুলো সবাইকে শোনাই? স্যারঃ না, প্লিজ। আমি আর বলব না।
ছাত্রীঃ বলবেন না কেন স্যার? আজকে আপনি আমাকে বলছেন, কালকে আরেকজন স্টুডেন্টকে বলবেন।
স্যারঃ আমি যা বলছি ভুল করছি। আর কখনো বলব না।
ছাত্রীঃ স্যারদের একটা আলাদা নলেজ থাকে, আর একজন স্টুডেন্টের কথায় যদি স্যারের নলেজ হয় তাহলে সেই স্যারের কোনও যোগ্যতাই নাই স্কুলে শিক্ষকতা করার। আমি সব হেডমাস্টার স্যারকে শুনাইয়া দিব।
একজন শিক্ষক কী নোংরাভাবে বাচ্চা মেয়েটিকে শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দিলো! ভাবতে অবাক লাগে শিক্ষকদের মধ্যে এই মানসিকতার মানুষও আছেন। হেড স্যারের কাছে জানিয়ে কোনও ফল পেয়েছে কিনা জানি না। তবে মেয়েটির বুদ্ধির প্রশংসা করতেই হচ্ছে। অনেকক্ষেত্রেই মেয়েরা সমাজে সম্মানী ব্যক্তিদের নষ্ট চরিত্রের কথা প্রকাশ করে কোনও ফল পায় না। উল্টো মেয়েটির চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠে, দোষ দেওয়া হয় মেয়েটিকে। এই ভয়ে অনেকে অভিযোগ করতেও ভয় পায়।
আমি ফেসবুকে এরকম একজন ব্যক্তিকে চিনি, যিনি নিজেকে নাস্তিক দাবি করেন, টুকটাক কপিপেস্ট নারীবাদী লেখা লিখেন, আবার মাঝেমাঝে নারী নিয়ে মস্করাও করেন। তিনি সাধারণত নারীকে দুর্বল দাবি করে তার একটি লেখা বিভিন্ন মেয়েদের ইনবক্সে পাঠান। যেসব মেয়েরা ওই লেখার কোনও প্রতিবাদ করে না তাদেরকে তিনি নিয়মিত ইনবক্সে নক দিয়ে রূপের প্রশংসা, শরীরের প্রশংসা ইত্যাদি করে সম্পর্ক বিছানা পর্যন্ত নেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। আর নিজের সম্পর্কে সবাইকে বলেন, তিনি ইয়াং হ্যান্ডসাম, বিয়ে একবার করেছিলেন তবে বৌয়ের সাথে ছাড়াছাড়ি, একা থাকেন। যদিও আমি তার বাসায় গিয়ে তার স্ত্রীর হাতের রান্না খেয়ে এসেছি। নিজেকে ইয়াং দাবি করলেও তার মেয়ের বয়স এখন ত্রিশের কাছাকাছি।
সরকারি চাকরি করেন, টাকা পয়সা ভালোই আছে, সমাজে সম্মান আছে, শুধু চরিত্রের ঠিক নেই। অনলাইনে নাস্তিকতা নিয়ে টুকটাক লিখেন বলে ঝুঁকির কথা চিন্তা করে আমি তার নাম ঠিকানা প্রকাশ না করে তার সম্পর্কে একবার লিখেছিলাম, অন্যদের সচেতন করতে। বদলা নিতে তিনি আমার নাম ঠিকানা সব প্রকাশ করতে বেশ কিছু ফেক আইডি, ফেক চ্যাট বানিয়েছিলে। যদিও শেষ পর্যন্ত খুব বেশিদূর আগাতে পারেননি। আমি যদি তার নিরাপত্তার কথা চিন্তা না করে তার নাম প্রকাশ করে তার সম্পর্কে লিখতাম, তবে অধিকাংশ মানুষই আমার কথা বিশ্বাস করতেন না। পুরুষ হওয়ার এই এক সুবিধা। সব ধরনের নোংরা কাজ করেও সমাজের চোখে সম্মানী পুরুষ হিসেবে সমর্থন পাওয়া যায়।
খাদিজাকে কোপানোর ভিডিওটা পাওয়া না গেলে হয়তো খুনি বদরুলের ফেসবুকে মায়াভরা ‘পবিত্র’ চেহারা আর স্ট্যাটাস হিসেবে দেয়া জ্ঞানের কথাগুলো দেখে খাদিজার পোশাকের দোষ ত্রুটি খোঁজার চেষ্টা করতাম। ভাগ্যিস কেউ একজন সেদিন ভিডিও করেছিলেন! প্রেমের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়ার কারণে এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ এসব প্রতিদিন খবরের পাতার কোণায় অবহেলিত ভাবে থাকে, আমাদের নজর এড়িয়ে যায় । প্রেমের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়ায় কুপিয়ে হত্যা- ব্যাপারটিতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে এসব খবর আবার পত্রিকার মাঝখান থেকে ছোট্ট কোনও কোণায় স্থান পাবে।
মের প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ার ব্যাপারটা সমাজের পুরুষেরা অনেকেই মেনে নিতে পারে না। পুরুষের আধিপত্য সমাজের প্রতিটি স্তরে। পরিবার, স্কুল কলেজ, কর্মস্থল সব জায়গাতে সিদ্ধান্ত বা গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো থাকে পুরুষের দখলে। তাই নারী, পুরুষের হ্যাঁ তে হ্যাঁ, না তে না মেলাচ্ছে এমনটাতেই অভ্যস্ত পুরুষ। এর ব্যতিক্রম তারা সহ্য করতে পারে না। তাদের কোনও প্রস্তাবে নারী ‘না’ বলছে, এটা মেনে নিতে পারে না। নারী স্বাধীনতার মূল কথাই হল, নারীর স্বেচ্ছায় ‘না’ বা ‘হ্যাঁ’ বলার অধিকার। বদরুলের বিচার চাওয়ার মিছিলে পুরুষের সংখ্যা দেখে অনেকে মনে করতে পারেন সমাজে বদরুলদের সংখ্যা কম। যদিও বাস্তবে ওই মিছিলে অংশ নেয়া পুরুষদের অনেকেই নারীর এই ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলার স্বাধীনতাতে বিশ্বাস করে না। সমাজে পুরুষের আধিপত্য যতদিন জারি থাকবে ততদিন সমাজে নতুন নতুন বদরুলের সৃষ্টি হবে এতে কোনও সন্দেহ নেই।
ভালই ছিলো লেখাটা।
উত্তরমুছুন