শুনলাম, বাংলাদেশের সমাজকল্যান মন্ত্রী মহসিন আলী মারা গেছেন। তাঁর সিগারেট খাওয়া নিয়ে একবার বেশ সমালোচনা হয়েছিল। তিনি নাকি কোনো এক স্কুলের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের সামনেই সিগারেট ধরিয়েছিলেন, এই নিয়ে মিডিয়ায় তুমুল নিন্দার মুখে পড়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ক্ষমা চেয়েছিলেন।
এটা খুব ভালো যে তিনি ক্ষমা চেয়েছিলেন, কারণ বাংলাদেশে মন্ত্রী-এমপিরা ক্ষমা চেয়েছেন এইধরনের দৃষ্টান্ত তো আগে দেখা যায় নি। মহসীন আলীর মৃত্যুর কথা শুনে তাঁর ওই সিগারেট খাওয়ার কথাটাই মনে পড়ে গেলো। এই সিগারেট নিয়েই ভাবছি আজ কিছু লিখি।
আমার ক্লাসমেইট ছেলেরা অধিকাংশই সিগারেটের স্বাদ গ্রহণ করেছে। নিয়মিত না হলেও বন্ধুবান্ধবের আড্ডায় একবারের জন্য হলেও সিগারেট খেয়েছে, অনেকে তো আবার নিয়মিতই সিগারেট খায়। কৈশোরে সিগারেট খাওয়া ব্যাপারটাকে অনেকটা গর্বের ব্যাপার বলে মনে করা হয়। আর এমনিতেও ওই বয়সে যা যা নিষেধ, তার প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকেই। তাছাড়া সিগারেট না খেলে বন্ধুবান্ধবের কাছে শুনতে হয়, ‘তুই শালা একটা লেডিস’ আর লেডিসের সাথে তুলনা করা পুরুষ মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি অপমানজনক। লেডিসের পেট থেকে বের হয়, লেডিসের দুধ খেয়ে বড় হয়, তারপর লেডিস শব্দটাই তাদের জন্য অপমানের হয়ে যায়। নিমকহারাম আর কাকে বলে!
ছেলেদের একটু দাড়িগোঁফ গজালেই শার্টের বোতাম কয়েকটা খোলা রেখে চলা, প্যান্টটা আরও একটু নিচে নামিয়ে আনা, আঙ্গুলের ফাঁকে একটা সিগারেট রাখা, রাস্তায় মেয়ে দেখলে টিজ করা - এইসব না হলে কি আর পুরুষ হওয়া যায়? ছেলেরা যতই বড় হতে থাকে ততই তাদের স্বাধীনতা বাড়তে থাকে। আর মেয়েরা যতই বড় থাকে মেয়েদের জগতটা আস্তে আস্তে ছোট হতে থাকে। স্বাধীনতার কথা আর না-ই বা বললাম, সে তো জন্মের পর বাবার হাতে, এরপর ভাইয়ের হাতে, ভাইয়ের পর স্বামীর হাতে, মরার আগ পর্যন্ত ছেলের হাতে বন্ধক থাকে।
তো সিগারেট খাওয়া নিয়ে বলছিলাম। সিগারেট খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর, কিন্তু এটা না খেলে যেহেতু ‘লেডিস’ হয়ে যায় কাজেই শরীরের ক্ষতি করে হলেও এটা খেতে হবে। স্বাভাবিক ভাবেই, নিষিদ্ধ কিছুর প্রতি আমার আগ্রহও প্রবল। কাজেই সিগারেট,হুইস্কি, ভদকা--কোন কিছুর স্বাদ থেকেই আমি নিজেকে বঞ্চিত করিনি। কিন্তু আমার মেয়ে-বন্ধুদের অধিকাংশেরই নিষিদ্ধ কিছুর প্রতি তেমন কোন আকর্ষণ নেই কিংবা আকর্ষণ তারা দমন করে রাখে। এমনিতেই যে-কোনো কিছুতেই সবাই মেয়েদের দোষটাই আগে দেখে, কাজেই এইসব সিগারেট বিড়ি ছুঁয়ে না জানি কোন কলংকের ভাগীদার হতে হয়, কাজেই তারা এসব থেকে একশ’ হাত দূরে থাকে।
নিয়মিত সিগারেটের অভ্যাস না থাকলেও বন্ধুবান্ধবের সাথে থাকলে মাঝেমাঝেই সিগারেট খেতাম। নিষিদ্ধ থাকলেও পাবলিক প্লেসে ছেলেদের সিগারেট খাওয়াটা কোন সমস্যা না হলেও মেয়েদের বেলায় বিরাট সমস্যা। যদিও আমি রাস্তা ঘাটে ছেলে-বন্ধুদের সাথে দিব্যি সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে হেঁটেছি, এতে আমার কোনো সমস্যা হয়নি, কারণ কেউ বুঝতেই পারে নি যে আমি মেয়ে।
বাংলাদেশে আমার বয়সী একটা ছেলে রাস্তায় সিগারেট খেলে কেউ তার দিকে ফিরেও তাকাবে না, কিন্তু ওই একই বয়সী একটা মেয়ে যদি সিগারেট হাতে নিয়ে রাস্তায় বের হয় তবে রাস্তার প্রত্যেকটা লোক তার দিকে তাকিয়ে থাকবে, কেউ কেউ হয়তো তাকে সিগারেট ফেলে মাথায় ওড়না দেয়ার উপদেশ দিতেও এগিয়ে আসতে পারে। যেহেতু সিগারেট খাওয়া পুরুষের জন্য অনেকটা বিনোদনের মত, আর বিনোদনের অধিকার তো কেবলই পুরুষের, তাই কোনো নারী পুরুষের অধিকারে ভাগ বসাবে এটা তারা মেনে নেবে কেন?
সিগারেট শরীরের জন্য ক্ষতিকর, কারো সিগারেটের নেশা করা উচিত নয়। কিন্তু কারো কারো জন্য সিগারেট খাওয়া পুরুষত্বের লক্ষণ, আবার কারো কারো জন্য সিগারেট খাওয়া নিন্দার কারণ, এ কেমন নিয়ম?