বৃহস্পতিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

সিগারেটে পুরুষত্ব!

শুনলাম, বাংলাদেশের সমাজকল্যান মন্ত্রী মহসিন আলী মারা গেছেন। তাঁর সিগারেট খাওয়া নিয়ে একবার বেশ সমালোচনা হয়েছিল। তিনি নাকি কোনো এক স্কুলের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের সামনেই সিগারেট ধরিয়েছিলেন, এই নিয়ে মিডিয়ায় তুমুল নিন্দার মুখে পড়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ক্ষমা চেয়েছিলেন। 
এটা খুব ভালো যে তিনি ক্ষমা চেয়েছিলেন, কারণ বাংলাদেশে মন্ত্রী-এমপিরা ক্ষমা চেয়েছেন এইধরনের দৃষ্টান্ত তো আগে দেখা যায় নি। মহসীন আলীর মৃত্যুর কথা শুনে তাঁর ওই সিগারেট খাওয়ার কথাটাই মনে পড়ে গেলো। এই সিগারেট নিয়েই ভাবছি আজ কিছু লিখি। 

আমার ক্লাসমেইট ছেলেরা অধিকাংশই সিগারেটের স্বাদ গ্রহণ করেছে। নিয়মিত না হলেও বন্ধুবান্ধবের আড্ডায় একবারের জন্য হলেও সিগারেট খেয়েছে, অনেকে তো আবার নিয়মিতই সিগারেট খায়। কৈশোরে সিগারেট খাওয়া ব্যাপারটাকে অনেকটা গর্বের ব্যাপার বলে মনে করা হয়। আর এমনিতেও ওই বয়সে যা যা নিষেধ, তার প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকেই। তাছাড়া সিগারেট না খেলে বন্ধুবান্ধবের কাছে শুনতে হয়, ‘তুই শালা একটা লেডিস’ আর লেডিসের সাথে তুলনা করা পুরুষ মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি অপমানজনক। লেডিসের পেট থেকে বের হয়, লেডিসের দুধ খেয়ে বড় হয়, তারপর লেডিস শব্দটাই তাদের জন্য অপমানের হয়ে যায়। নিমকহারাম আর কাকে বলে!

 ছেলেদের একটু দাড়িগোঁফ গজালেই শার্টের বোতাম কয়েকটা খোলা রেখে চলা, প্যান্টটা আরও একটু নিচে নামিয়ে আনা, আঙ্গুলের ফাঁকে একটা সিগারেট রাখা, রাস্তায় মেয়ে দেখলে টিজ করা - এইসব না হলে কি আর পুরুষ হওয়া যায়? ছেলেরা যতই বড় হতে থাকে ততই তাদের স্বাধীনতা বাড়তে থাকে। আর মেয়েরা যতই বড় থাকে মেয়েদের জগতটা আস্তে আস্তে ছোট হতে থাকে। স্বাধীনতার কথা আর না-ই বা বললাম, সে তো জন্মের পর বাবার হাতে, এরপর ভাইয়ের হাতে, ভাইয়ের পর স্বামীর হাতে, মরার আগ পর্যন্ত ছেলের হাতে বন্ধক থাকে। 

তো সিগারেট খাওয়া নিয়ে বলছিলাম। সিগারেট খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর, কিন্তু এটা না খেলে যেহেতু ‘লেডিস’ হয়ে যায় কাজেই শরীরের ক্ষতি করে হলেও এটা খেতে হবে। স্বাভাবিক ভাবেই, নিষিদ্ধ কিছুর প্রতি আমার আগ্রহও প্রবল। কাজেই সিগারেট,হুইস্কি, ভদকা--কোন কিছুর স্বাদ থেকেই আমি নিজেকে বঞ্চিত করিনি। কিন্তু আমার মেয়ে-বন্ধুদের অধিকাংশেরই নিষিদ্ধ কিছুর প্রতি তেমন কোন আকর্ষণ নেই কিংবা আকর্ষণ তারা দমন করে রাখে। এমনিতেই যে-কোনো কিছুতেই সবাই মেয়েদের দোষটাই আগে দেখে, কাজেই এইসব সিগারেট বিড়ি ছুঁয়ে না জানি কোন কলংকের ভাগীদার হতে হয়, কাজেই তারা এসব থেকে একশ’ হাত দূরে থাকে। 

নিয়মিত সিগারেটের অভ্যাস না থাকলেও বন্ধুবান্ধবের সাথে থাকলে মাঝেমাঝেই সিগারেট খেতাম। নিষিদ্ধ থাকলেও পাবলিক প্লেসে ছেলেদের সিগারেট খাওয়াটা কোন সমস্যা না হলেও মেয়েদের বেলায় বিরাট সমস্যা। যদিও আমি রাস্তা ঘাটে ছেলে-বন্ধুদের সাথে দিব্যি সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে হেঁটেছি, এতে আমার কোনো সমস্যা হয়নি, কারণ কেউ বুঝতেই পারে নি যে আমি মেয়ে। 

বাংলাদেশে আমার বয়সী একটা ছেলে রাস্তায় সিগারেট খেলে কেউ তার দিকে ফিরেও তাকাবে না, কিন্তু ওই একই বয়সী একটা মেয়ে যদি সিগারেট হাতে নিয়ে রাস্তায় বের হয় তবে রাস্তার প্রত্যেকটা লোক তার দিকে তাকিয়ে থাকবে, কেউ কেউ হয়তো তাকে সিগারেট ফেলে মাথায় ওড়না দেয়ার উপদেশ দিতেও এগিয়ে আসতে পারে। যেহেতু সিগারেট খাওয়া পুরুষের জন্য অনেকটা বিনোদনের মত, আর বিনোদনের অধিকার তো কেবলই পুরুষের, তাই কোনো নারী পুরুষের অধিকারে ভাগ বসাবে এটা তারা মেনে নেবে কেন?

 সিগারেট শরীরের জন্য ক্ষতিকর, কারো সিগারেটের নেশা করা উচিত নয়। কিন্তু কারো কারো জন্য সিগারেট খাওয়া পুরুষত্বের লক্ষণ, আবার কারো কারো জন্য সিগারেট খাওয়া নিন্দার কারণ, এ কেমন নিয়ম?

শনিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ধর্মের খেলা!



আমি যখন ছোট ছিলাম, তখন ধর্ম নিয়ে মাথা ঘামাতাম না, ওসব আমি ঠিক বুঝতাম না। আরও একটু বড় হওয়ার পর বুঝলাম ধর্ম,ঈশ্বর, -- সবই কাল্পনিক। তখন ভাবতাম ধর্মটর্ম বুঝি আমার মায়ের মত ইমোশোনাল কিংবা দুর্বল হৃদয়ের মানুষরাই পালন করে। ভাবতাম, ইয়াং জেনারেশন নিশ্চয়ই এই জাতীয় কাল্পনিক বিষয়গুলো বিশ্বাস করে না। 

আমার স্কুল জীবনের অধিকাংশ বন্ধু-বান্ধব ফাজিল টাইপ ছিলো। কাজেই আমাদের ফাজলামি থেকে ধর্মও রেহাই পেতো না। ধর্ম বিষয়টাকে কখনো পাত্তা দিই নি।

ধর্ম-ক্লাসে সাধারণত আমাদের ধর্ম-টিচার ধর্ম-বইয়ের গল্প ‘রিডিং’ পড়তেন, সেসব নিয়ে আলোচনা করতেন। একদিন একটা গল্প পড়া শুরু করেলন, গল্পটা হল--একবার ব্রহ্মা বিশ্রাম নিতে কোনো এক আশ্রমে গেলেন। তো দেবতা-মানব-দানব অনেকেই ব্রহ্মার কাছে উপদেশ নিতে এসেছে। ব্রহ্মা সবাইকে এক কথায় উপদেশ দিলেন, ‘দ’। দেবতারা যেহেতু অনেক ধন সম্পদের মালিক তারা ধরে নিয়েছে যে, ব্রহ্মা তাদেরকে ‘দ’ মানে দান করতে বলেছেন। মানবেরা যেহেতু লোভী প্রকৃতির হয়, কাজেই তারা ধরে নিয়েছে, ‘দ’ বলতে ব্রহ্মা তাদেরকে দমন করতে মানে, নিজেদের লোভকে দমন করতে বলেছেন। আবার দানব অর্থাৎ দৈত্যরা ভাবল যে, তারা যেহেতু নির্দয়, ব্রহ্মা তাদেরকে দয়াশীল হওয়ার উপদেশ দিয়েছেন।

ধর্ম-শিক্ষকের গল্প পড়া শেষ হলে, আমরা বন্ধুরা একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে হাসলাম। একজন বলল, ব্রহ্মা আসলে ‘দ’ বলতে কী বুঝিয়েছিলেন বলতো, আরেকজন বলল, ব্রহ্মা বিশ্রাম নিতে জঙ্গলে এলেন, এরমধ্যে তাকে উপদেশের জন্য বিরক্ত করছিল, তাই বললেন ‘দ’ মানে ‘দূর হও’। আর এইসব মাথা নষ্টগুলো এর কত অর্থ বানিয়ে ফেললো। তারপর এটা নিয়ে কতক্ষন হাসাহাসি হল। তো, এই ছিল আমার ধর্ম। 

মাঝেমাঝে ধর্ম নিয়ে বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম, ধর্ম একটি সিরিয়াস বিষয়। অধিকাংশ মানুষই এই বিষয়টাকে ভয় পায়, কাল্পনিক ঈশ্বরের ভয়ে কত কিছুই যে করে! এসব দেখে আমার হাসি পেতো। মনে হতো, আমার মত একটা ছোট মানুষ বুঝতে পারছে যে, ঈশ্বর আল্লাহ সব কাল্পনিক, ধর্ম মানুষেরই সৃষ্ট কিছু নিয়ম, সেখানে বড় মানুষগুলো বোকার মত এসব হাবিজাবি কাহিনী বিশ্বাস করে কেন? 

ধীরে ধীরে আরও একটু বড় হয়ে, বইপত্র পড়ে টের পেলাম যে, ধর্ম কেবলই একটি সিরিয়াস বিষয় নয়, বরং ভয়ংকর সিরিয়াস জাতীয় কিছু। এটি এতই ভয়ংকর যে, এটি রক্ষা করতে মানুষকে খুন করা হয়, নির্বাসিত করা হয়, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এটি একটি অত্যন্ত মূল্যবান সিঁড়ি। 

রাজনীতিবিদরা এই সিঁড়ির প্রতি খুবই যত্নবান। এটা অপরাধ ঢাকার ঢাল হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। জঘন্য জঘন্য সব অপরাধ করেও যদি ইমেজ ঠিক রাখতে চান, তবে ধর্মিক ইমেজটা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরী। 

আমি এমনিতেই সিরিয়াস টাইপ কিছু ভাবতে পারি না, কাজেই এই ভয়ংকর সিরিয়াস বিষয়টা থেকে সবসময় নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখতাম। কিন্তু দূরে গিয়েও রক্ষা নেই। কেন আমি ধর্ম পালন করি না, এইসব নিয়ে প্রশ্ন, ধর্ম পালনে বাধ্য করা.. এইসবে খুব বিরক্ত হতাম। এভাবে ধর্মের প্রতি আমার তীব্র ঘৃণা সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু কোনো ধর্মের মানুষে প্রতি কোনো রকম ঘৃণা আমার ছিল না। কিন্তু লক্ষ্য করতাম, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই, এক ধর্মের মানুষের অন্য ধর্মের মানুষের প্রতি ঘৃণা ভাব থাকেই।





২৪ জুলাই, ২০১৪ সালে অভিজিৎ রায় তার ফেইসবুকের একটি স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, ‘আমি নাস্তিক। কিন্তু আমার আশে পাশের বহু কাছের মানুষজন বন্ধু বান্ধবই মুসলিম। তাদের উপর আমার কোন রাগ নেই, নেই কোন ঘৃণা। তাদের আনন্দের দিনে আমিও আনন্দিত হই। তাদের উপর নিপীড়ন হলে আমিও বেদনার্ত হই। প্যালেস্টাইনে বা কাশ্মীরে মুসলিম জনগোষ্ঠীর উপর অত্যাচার হলে তাদের পাশে দাঁড়াতে কার্পণ্য বোধ করি না। অতীতেও দাঁড়িয়েছি, ভবিষ্যতেও দাঁড়াবো। এটাই আমার মানবতার শিক্ষা’। 

অভিজিৎ রায়ের জন্মদিনে তাঁকে নিয়ে কিছু লিখব ভাবতেই তাঁর এই স্ট্যাটাসের কথা মনে পড়ে গেলো। অভিজিৎ রায়ের মৃত্যুর পর কলেজের এক বন্ধু মন্তব্য করেছিল, ‘আমাদের দেশে প্রতিদিন কত অভিজিৎ মারা যাচ্ছে, এক অভিজিৎকে নিয়ে এত কান্নাকাটির কী আছে?’ তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমাকে কুপিয়ে ফেলে গেলেও কি সে এই জাতীয় কোনো মন্তব্য করবে কিনা। সে চুপ হয়ে গেলো।

অভিজিৎ রায় একজন নাস্তিক ছিলেন, তিনি ধর্মে বিশ্বাস করতেন না। নিজেকে হিন্দু মুসলিম না ভেবে মানুষ ভাবতেন। মানুষের প্রতি তাঁর কখনো বিদ্বেষ ছিল না, ভালোবাসা ছিল। অভিজিৎ রায়ের মত মানুষ প্রতিদিন জন্মায় না। সমাজটাকে সুন্দর-সভ্য করতে, তাঁর মত মানুষেরা তাঁদের চিন্তা-চেতনা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চান। আর যারা চায়, মানুষ নিজেকে মানুষ না ভেবে ধার্মিক ভাবুক, চোখ বন্ধ করে সত্য কে অস্বীকার করুক, তারা অভিজিৎ রায়দের হত্যা করে। কিন্তু হত্যা করলে, ভয় দেখালেই কি সত্য বদলে যায়?



বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

বেঁচে ফিরার গল্প

আমি প্রায় বিশ দিনের বেশি সময় ধরে অনলাইনে নেই। অনেকে হয়তো ভেবেছেন আমার আইডি রিপোর্টের কারনে বন্ধ, আসলে তা নয়। আমি আমার অপরাধের সাজা স্বরূপ এতদিন অজ্ঞাত জীবনে গিয়েছিলাম। নিশ্চয়ই জানতে চাইছেন কি আমার অপরাধ? আমার অপরাধ, ৯৯ পারসেন্ট মূর্খের দেশে জন্মে মুক্তচিন্তার চর্চা করা, নিজের মতামত স্বাধীন ভাবে প্রকাশ করা, ধর্মে নয় বরং মানবতার মধ্যেই সকল সমস্যার সমধান খোঁজা। আমি আসলে স্বেচ্ছায় চোখ বন্ধ করে থাকতে ভালোবাসে যারা সেইসব অন্ধের দেশে চশমা বিলি করছিলাম, অথচ আমি ভুলেই গিয়েছিলাম যে যাদের চোখ খুলে দেখার ক্ষমতা নেই, তাদের চশমার কি প্রয়োজন? আমার এই ক্ষমার অযোগ্য অপরাধের শাস্তি প্রদানের ‘মহান’ দায়িত্ব যারা পেয়েছেন তারা গত দুই মাস ধরে আমাকে নিয়মিত ফলো করে যাচ্ছিলেন। না ফেইসবুক-টুইটার-ব্লগে ফলো করছেন না, আমার আদর্শকেও ফলো করছেন না। তারা ফলো করছিলেন আমাকে, আমি কোথায় থাকি, কোথায় পড়ি, কখন কোথায় যাই, সরাসরি আসমান থেকে আসা সেই ‘মহান’ দায়িত্ব কিভাবে সফল করবেন তারই ছক আঁকা হচ্ছিল নানাভাবে।

প্রায় দুই মাস আগে আমি প্রথম বুঝতে পারি আমাকে ফলো করা হচ্ছে। খুব ভোরে, সকাল সাড়ে ছয়টায় আমি কলেজের জন্য বাসা থেকে বের হতাম, নির্দিষ্ট স্থানে আমার কলেজ বাসের জন্য অপেক্ষা করতাম। প্রায় দুই মাস আগে, একদিন আমি লক্ষ্য করলাম একজন লোক বেশ কয়েকদিন ধরে আমি যেখানে বাসের জন্য অপেক্ষা করি তার পাশে মুখে হাত দিয়ে গৌতম বুদ্ধের ন্যায় মৌন ভাব ধারন করে দাঁড়িয়ে থাকে এবং আমার দিকে লক্ষ্য রাখে। আমার বাস চলে এলে সেই ব্যক্তি মৌন ভাব ভঙ্গ করে হাঁটা শুরু করে। সে যেমন আমাকে লক্ষ্য রাখছিল আমিও তার কর্মকান্ড পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছিলাম। একদিন দেখি ওই ব্যক্তি একা নয়, তার সাথে আরো দুইজন যারা আমার আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে এবং আমাকে কোণা চোখে লক্ষ্য রাখে। আর প্রথম ব্যক্তি হাঁটা ধরলে অন্য দুইজন ও তার পিছনে পিছনে চলে যায়। এরপর আমার কলেজ রোজার কারনে সময় বদল করলে তাদেরকে আর দেখি নি। রোজার ছুটি শেষ হলে আমি আবার কলেজে যাতায়ত শুরু করি। পরে কলেজে যাতায়তের জন্য অন্য পন্থা অবলম্বন করি। এরপর আমার বাসার আশেপাশে কিছু অচেনা লোকের আনাগোনা দেখতে পাই। যেহেতু এসব নিয়ে ভেবে আমি কিছুই করতে পারব না, রাষ্ট্র যেহেতু খুনীদের পক্ষে কাজেই আমি এসব চিন্তা বাদ দিয়ে আমার কাজে মনযোগী হই। নীল হত্যার ঘটনায় যখন আমরা সবাই স্তব্ধ তখন আমার এক বন্ধু ফোন করে জানায়, তাদের কোচিং ছুটির পর দুজন মোটর সাইকেল আরোহী আমার খোঁজ করছিল, তারা কোচিং এর কয়েকজন স্টুডেন্টকে জিজ্ঞেস করছিল আমার সম্পর্কে। আমি কোন এলাকায় থাকি, কোন সিম ইউজ করি, আমার ফোন নাম্বার সবই তাদের জানা, শুধু জানা নেই- কোন বিল্ডিং, কত নম্বর ফ্ল্যাট। ওই দুই মোটরবাইক আরোহী নাকি নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিল, ‘ইনশাল্লাহ, এই সপ্তাহ না পারলে এই মাসের মধ্যেই সব দেখাই দিব’।

এসব জানতে পেরে আমার মা-বাবা ভীত হয়ে সেদিন রাতের অন্ধকারে আমাকে এক আত্মীয়ের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। আমার ফোন বন্ধ, নেট অফ, সবকিছু অফ, আমি কোথায় আছি সেসব আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাও জানতো না। এভাবেই কাটছিল আমার দিন। এরপর আমার বাবা মা লক্ষ্য করল, আমার বাবা মা অফিসে যাওয়ার পথে তাদেরকেও ফলো করা হচ্ছে। তারা বুঝতে পারছিল, আমি লুকিয়ে আছি, কিন্তু কোথায় আছি তা বুঝতে পারছিল না। বাসায় আছি কিনা তা নিশ্চিত করতে দুইজন ছদ্মবেশে আমার বাসায় কলিংবেল দেয়, আমার পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পেরে দারোয়ানকে ফোন করে তাদেরকে নামিয়ে নিয়ে যায়। আমার খোঁজ বের করতে তারা আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়মিত ফলো করে যাচ্ছিল। তাদের দুই মাসের প্ররিশ্রম এভাবে পন্ড হয়ে যাবে তা তারা কিছুতেই মানতে পারছিল না। তাই তারা আমাকে তন্নতন্ন করে খুঁজছিল।

আর এদিকে আমি নিরাপত্তার জন্য একের পর এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছি। ওড়নার আড়ালে মুখ লুকিয়ে চলাফেরা করছিলাম। এরমধ্যে দেশের বাইরের ভিসার কাজ চলছিল। ভিসা পেতেই আর দেরী না করে, ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে জীবন রক্ষার জন্যে দেশ ত্যাগ করি।

‘কি দরকার ছিল এসব লেখালেখির?’ এইপ্রশ্নের সম্মুখীন আমাকে হতে হয়েছিল এই কয়দিন। দেশের সাধারণ মানুষ মনে করে ধর্মানুভুতিতে আঘাত দেয়ার কারনেই হত্যা করা হয়েছে অভিজিত-বাবু-অনন্ত-নীলয়দের। কোন ব্লগার হত্যার পর সাধারণ মানুষ প্রশ্ন করে, ‘কেন? কি লিখতো সে?’ যেন এমন কিছু কথা আছে যা লিখলে একজন ব্যক্তিকে হত্যা করা যায়। আর ব্লগার হত্যার নমুনা দেখে মনে হচ্ছে যেন, বাংলাদেশে সব নাস্তিক কেবল হিন্দু পরিবার থেকে আসা। আসলে হিন্দু পরিবার থেকে নাস্তিক হওয়া ব্লগারদের হত্যা করলে সেটা সাধারন মানুষের মধ্যে গ্রহনযোগ্যতা পায় বেশি। ‘হেন্দু হইয়া আমাগো ধর্মের বিরুদ্ধে কয়, এত বড় সাহস, যা করছে ঠিক করছে’- হিন্দু পরিবার থেকে নাস্তিক হওয়া ব্লগারদের হত্যা করলে এই এক্সট্রা সুবিধাটুকু পাওয়া যায়। আসলে ব্লগাররা কি লিখে না লিখে, আস্তিক নাকি নাস্তিক এইসব ব্যাপারে খুব বেশি চিন্তিত নয় খুনীরা।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি এদেশে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়ে প্রায় চল্লিশ বছর ধরে কোন বাঁধা না পেয়েই নিজেদেরকে সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী করেছে। এতদিন কোন বাঁধা পায় নি, কেউ তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ করে নি, তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ একটি শব্দ ও উচ্চারণ করে নি। একজন তসলিমা নাসরিন প্রতিবাদ শুরু করেছিল বলে আমরা সবাই মিলে তাঁকে দেশ ছাড়া করলাম। কিন্তু এখন অনেকেই প্রতিবাদ করতে শিখে গেছে। কাজেই যখন থেকে বাঁধা পেতে শুরু হল, যখনই আন্দোলন প্রতিবাদ শুরু হল তখনই তারা বুঝতে পেরেছে, এত বছর তারা নির্বিঘ্নে তাদের কাজ করতে পারলেও এখন তা আর সম্ভব হবে না। কাজেই যারা ভবিষ্যতে তাদের জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছে তাদেরকেই তারা সরিয়ে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রথমে তারা ‘নাস্তিক ব্লগার’ ট্যাগ লাগিয়ে মুক্তচিন্তক ও স্বাধীনতার পক্ষের ব্লগারদের হত্যা শুরু করছে। এই হত্যাকে জায়েজ করতে ‘নাস্তিক ব্লগার’ ট্যাগটা খুব কাজে দিয়েছে, নাস্তিক হত্যার বিচার করতে গিয়ে সরকার ভোট কমাতে চায় না, সাধারণ জনগন ‘নাস্তিক মরছে, তাতে আমার কি?’ এই ভাব নিয়ে নিশ্চিন্তে জীবনযাপন করছে। আর এছাড়া ধার্মিক খুনিরা নাস্তিক হত্যা করে ধর্মমতে কিছু পুণ্য ও অর্জন করে নিচ্ছে। কোন ব্লগারকে হত্যা করা হবে, কারা করবে এইসবই প্রশাসনের জানা। প্রশাসন জানে না, এ আমি বিশ্বাস করি না। শেখ হাসিনাকে নিয়ে অনলাইনেকে কটূক্তি করল তাকে দেশের আরেক প্রান্ত থেকে খুঁজে নিয়ে আসতে পারে আর একেরপর এক খুন হচ্ছে, এসব খুনীদের ধরতে পারে না? হয়তো বলবেন, অভিজিৎ হত্যার সাথে জড়িত তিনজনকে তো গ্রেফতার করা হল। হ্যা। অভিজিৎ যুক্তরাস্ট্রের নাগরিক, এই কেইস নিয়ে এফবিআই ও গবেষনা করছে। সঙ্গত কারনেই এই কেইস নিয়ে সরকার চাপে আছে। তাই অভিজিৎ হত্যার তিনজন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাও প্রকৃত কাউকে ধরছে কিনা তা ও তো বলা যায় না। এফবিআই নীলয় হত্যার ব্যাপারে সাহায্য করতে চাইলে সরকার সাহায্য নিবে না বলে জানায়। নিজেরা অপরাধী ধরতে পারছে না, আবার কেউ সাহায্য করতে চাইলে সাহায্য ও নিচ্ছে না। এতে স্পষ্ট বুঝা যায়, কোন হত্যার রহস্যই প্রশাসনের অজানা নয়।

আইএস ঘোষণা দিয়েছে, পাঁচ বছরের মধ্যেই তারা ভারতসহ সারা বিশ্ব দখলের লক্ষ্যে কাজ করছে। সারা বিশ্ব দখল করতে পারুক কিংবা না পারুক বাংলাদেশ দখল করতে তাদের খুব বেশি সময় লাগবে না। প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে, নাস্তিক হত্যা চলছে। আস্তে আস্তে নাস্তিতদের লিস্ট শেষ হলে অন্য লিস্ট আসবে। দেশ নিয়ে আমরা যারা স্বপ্ন দেখি, সভ্য একটি সমাজ ব্যবস্থার জন্য লড়াই করছি তাদের সবাইকেই একে একে হত্যা করা হবে। দেশবাসী নাকে খাঁটি সরিষার তেল দিয়ে ঘুমান।

‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি’ আসলেই এমন দেশ আর কোথায় পাবেন? যেখানে খুনীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায় আর সতের বছর বয়সী একটা মেয়েকে মুক্তচিন্তা করার অপরাধের শাস্তি দিতে সকলে মিলে চাপাতিতে শান দেয়!

‘সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি’ আমার দেশ নিশ্চয়ই জঙ্গিবাদের রানী। অপরাধীদের জন্য নিরাপদ ভূমি।

যেখানে সরকার-প্রশাসন-অধিকাংশ জনগণ নীরব হয়ে দেশ ধ্বংসের কাজে উৎসাহ যোগাচ্ছে, সেখানে আমরা ক’জন দেশটাকে ভালোবেসে, একটি প্রগতিশীল রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতে দেখতে চাপাতির আঘাতে প্রান দিতে পারব, এর বেশি কিছু নয়। তবুও তো আমরা দেশের সুবিধাবাদী বুদ্ধিজীবীদের ন্যায় মুখ বুজে থাকি নি, মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও কোন অপশক্তির সাথে আপোষ করি নি, এতটুকুই আমাদের সান্ত্বনা।

দেশে আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ালেখা করছিলাম। আগামী বছর ইন্টার পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সব কিছু কেমন ওলটপালট হয়ে গেল। সম্পুর্ন অজানা অচেনা পথে আমি হেঁটে চলছি। এরপর কি হবে আমার জানা নেই।

দেশের কথা ভাবতে গেলেই বুকের ভিতরটা কেমন যেন করে। দেশ বলতে দেশের মানুষরা যা বুঝে, পরদেশে বসে দেশ মানে অন্যরকম কিছু মনে হয়, যেন খুব আপন কিছু, অনেকদিনের চেনা, অনেক স্বপ্ন আর ভালোবাসার স্পর্শ।

বুধবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ধর্ম রক্ষার দায় কি কেবল নারীর?

বাংলাদেশ এই কয়েকবছরে হিজাবী নারীর সংখ্যা প্রচুর পরিমানে বেড়ে গেছে। মনে হয় যেন, হিজাব এইদেশের জাতীয় পোশাক। আমি মিশনারি স্কুলে পড়েছি। তাই ওই স্কুলে হিজাব বোরখা এইসব নিষিদ্ধ ছিল। অনেকে স্কুল থেকে বের হলে হিজাব ওড়না জড়িয়ে নিতো, স্কুলে ঢুকলে সেসব খুলে ফেলতো। কলেজে এসে দেখি হিজাবে চারদিক ছেয়ে গেছে। কলেজের বেশির ভাগ ম্যাডাম হিজাব পরে। আমাদের কলেজে ছেলেদের দাড়ি রাখা নিষিদ্ধ, তবে মেয়েদের হিজাবের ব্যাপারে কোন নিষেধ নেই।

গত বছর শীতকালে ঠান্ডা থেকে বাঁচতে, কলেজে যাওয়ার সময় একটা মাফলার গলায় জড়িয়ে নিতাম। তবে এর অন্য একটি ব্যবহারও ছিল। আমি যখন ক্লাস পালাতাম তখন দূর থেকে আমার ছোট চুল দেখে আমাকে চিনে ফেলতেন অনেক স্যারেরা। তাই শীতাকাল গলায় মাফলার ঝুলিয়ে রাখতাম যাতে শীতও কম লাগে, আবার প্রয়োজনের সময় মাথা মাফলার দিয়ে ঢেকে ক্লাস পালাতেও সুবিধা হয়। যখন আস্তে আস্তে শীত কমতে শুরু করল, তখন এই মাফলার আমার অস্বস্তির কারন হয়ে দাঁড়ালো। ধরা পড়লে পরব, তবে এই মাফলার পেঁচিয়ে থাকা সম্ভব নয়, এই ভেবে মাফলার ত্যাগ করলাম। তখন আমার মাথায় প্রশ্ন এলো, গরম তখনো শুরু হয় নি, অথচ এতেই মাফলার নিয়ে আমার এত বিরক্তি! আর প্রচন্ড গরমে আমার সমবয়সীরা কিনা মাথায় কাপড়ের বস্তা জড়িয়ে ঘর থেকে বের হয়, তারা কিভাবে থাকে? ভাবতে গেলে খুব খারাপ লাগে। তাদের কষ্ট হয় কিনা জিজ্ঞেস করলে বলে, অভ্যাস হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে দেখি গরমে অতিষ্ঠ হয়ে হিজাবীরা ওয়াশরুমে গিয়ে হিজাব খুলে বসে থাকে।

কেন তারা হিজাব পরে, জানতে চাইলে অধিকাংশই বলেছে, তাদের ধর্মে আছে তাই। আবার কেউ বলেছে, আব্বু বলেছে হিজাব পরতে। কেউ বলে ‘খারাপ দৃষ্টি’ থেকে নিজেকে বাঁচাতে হিজাব পরে। 

ধর্মে আছে হিজাব পড়তে তাই পড়েছে, ধর্মে তো আগেও ছিল। আর ধর্মে তো শুধু হিজাব-বোরখা নয়, দাড়ি-টুপি-পায়ের গোড়ালির উপরে প্যান্ট পরার কথা ও আছে। কিন্তু সেসব নিয়ে কয়জন চিন্তিত? তবে হঠাৎ কেবল মেয়েরাই কেন এমন ধর্মকর্মে বিশেষ মনযোগী হয়ে উঠল, এর কারণ আমাকে খুব ভাবিয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে এটা অনেকটা সংক্রামক। কয়েকজন হিজাব পরল, চারপাশের মানুষজন যখন তাদেরকে দেখে যখন ভালো মেয়ে, ধার্মিক মেয়ে ইত্যাদি মন্তব্য করতে লাগলো তখন অন্যেরাও সমাজের চোখে ভালো হতে, ধার্মিক হতে হিজাবের আশ্রয় নিলো। এই যেমন চিত্রনায়িকা হ্যাপি জিন্সের প্যান্ট পড়ে রুবেলের সাথে প্রেম করেছে। যখনই রুবেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে মিডিয়ায় এলো তখনই সবাই হ্যাপিকে ‘পতিতা’ উপাধি দিয়ে রুবেলকে জমজমের পানিতে ধোয়া তুলসী পাতা বানিয়ে দিলো। তাই হ্যাপি সমাজের চোখে ভালো হতে জিন্স ছেড়ে হিজাবের আশ্রয় নিয়েছে। আমাদের সমাজে মেয়েরা সবসময় ভালো মেয়ে, ভদ্র মেয়ে, ধার্মিক মেয়ে হওয়ার চেষ্টা করে। কারণ যা কিছুই হোক না কেন, দোষ তো মেয়েরই হবে। কাজেই মেয়েরা এই বিষয়ে খুব সচেতন।

ছবিটি গতবছর চিটাগাং এর বিনোদন পার্ক ফয়েজলেইক থেকে তোলা
আমার এক হিজাবী বন্ধুর সাথে কথা বলছিলাম, হিজাব নিয়ে তার বিরক্তির শেষ নেই। সে বলে সব কিছুর মূলে হল তার আম্মু। তার আম্মু তার আব্বুর নির্দেশে বোরখা পড়ে এবং আমার ওই বন্ধুকেও বাধ্য করে হিজাব পরতে। সে সব কিছুর মূলে তার আম্মুর দোষ খুঁজে পায়। কিন্তু আমি খুঁজে পাই, ধর্মের দোষ।

বোরখাওয়ালীরাও আনন্দ করতে চায়, তখন তারা অনুভব করে যে বোরখা খুব বিরক্তিকর। তারা তাদেরকে যে বোরখা পরতে বাধ্য করছে, যেমনঃ বাবা, ভাই, স্বামী, তাদের উপর রাগ দেখায়। তারা ভুলে যায় যে, তাদেরকে বস্তাবন্দী থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে ধর্মে। আমরা নাস্তিকরা যদি সেটা দেখিয়ে দিই যে, মূল সমস্যা তোমার পিতা বা স্বামী না, মূল সমস্যা হল ধর্ম, এইসব ধর্মের সৃষ্টিকর্তা হল পুরুষ, তখন এইসব বোরখাওয়ালীরা এর প্রতিবাদ করে, তখন তাদের ধর্ম অনুভুতিতে আঘাত লাগে। তারা মুক্তি চায়, আবার মুক্ত করার রাস্তায় হাঁটতে চায় না। তাদেরই বা দোষ কিভাবে দেই? তারা তো নিজের চিন্তা বুদ্ধি বিবেক বলে যে কিছু আছে, নিজের মতামত বলে যে কিছু একটা আছে, সেটাই জানে না। কারণ জন্মের পর থেকেই তাদের শুধু প্রভুর নির্দেশ অনুযায়ী চলার ট্রেনিংই দেয়া হয়েছে। তারা তাদের নিজস্ব বুদ্ধিবিবেক বিবেচনা বন্ধক রেখেছে ধর্ম আর পুরুষতান্ত্রিকতার হাতে ।

চট্টগ্রামে নার্সিং কলেজের অঞ্জলি নামের এক শিক্ষক তার ছাত্রীদের হিজাব না পরার কথা বললে কয়েকদিন পরই তাকে প্রাণ হারাতে হয় মৌলবাদীদের হাতে। এটা খুব স্পষ্ট যে, এক শ্রেনির মানুষ খুব সচেতন ভাবে মেয়েদের হিজাবী বানানোর ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছে। কেউ বাধা দিলেই তাকে মেরে ফেলছে।

কেন মেয়েরা সব একসাথে তসলিমা নাসরিনের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে বলছে না যে, ‘যৌন উত্তেজনা বেড়েছে তোমার, সে তোমার সমস্যা, আমার নয়। তোমার সেটি বাড়ে বলে আমার নাক চোখ মুখ সব বন্ধ করে দেবে, এ হতে পারে না। আমি তোমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি নই’? নিজেকে অন্যের সম্পত্তি ভাবে বলেই মেয়েরা হিজাব পরে, বোরখা পরে, স্বামীর মঙ্গলের জন্য সিঁদুর পরে। নিজের ভালো লাগা ভুলে গিয়ে অন্যের ইচ্ছায় জীবন চালায়। আমাদের দেশের মেয়েদের নিজের বলে কিছু নেই, তারা নিজেরাই অন্যের সম্পত্তি। কি অসহায় তারা, তাই না? ভাবতে খুব কষ্ট হয়।