শুক্রবার, ১৩ মে, ২০১৬

ভেদাভেদের মাধ্যম রেজাল্ট!

ক্লাস টেনের কেমিস্ট্রি ক্লাস চলছে। মোটু পাতলু দুই বন্ধু সদ্য নাইন পাশ করে ক্লাস টেনে উত্তীর্ন হলো। কেমিস্ট্রি স্যার প্রায় দুই সপ্তাহ পড়িয়ে একটি অধ্যায় শেষ করেছেন। এবার পড়া নেয়ার পালা। স্যার সামনের কয়েকজনকে প্রশ্ন করে সঠিক উত্তর না পেয়ে হতাশ হয়ে সারা ক্লাসকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘এতোদিন ধরে আমি কী পড়িয়েছি তোমাদের’ বলে স্যার মাইক্রোফোনটা পড়া না পারা একজন স্টুডেন্টের কাছে দিয়ে বললেন, ‘নাও স্যার, এটা দিয়ে আমাকে মারো, আমি তোমাদেরকে পড়া বোঝাতে ব্যর্থ’। ওই স্টুডেন্ট লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখলো। এরপর স্যার একে একে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে চলেছেন, আর যারা পারছে না তাদেরকে মাইক্রোফোন হাতে দিয়ে বলছেন, ‘আমাকে মারো’ আর স্টুডেন্টরা লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। মোটু পাতলুর ব্যাপারটা খুব পছন্দ হয়েছে, ওরা ঝটপট একটা প্ল্যান করে নিলো। এরপর স্যার একটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে বললেন, কে পারবে? ওদের আশেপাশের সব স্টুডেন্টকে মোটু শিখিয়ে দিলো যাতে সবাই পাতলুর নাম নেয়। তাই হলো, সবাই পতলুর নাম বললো। স্যার সাবাসি দিতে দিতে পাতলুর দিকে মাইক্রোফোন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। সামনের বেঞ্চের কয়েকজন বলে উঠলো, ‘স্যার ও পড়া পারবে না’। স্যার জিজ্ঞেস করলেন, ‘ও পড়া পারবে না, তুমি কীভাবে জানো? নিজে পারো না সেটা বলো’। স্টুডেন্টটি বললো, ‘স্যার, আপনি পড়া না পারলে মাইক্রোফোন দিয়ে আপনাকে মারতে বলেন, তাই ওরা আপনাকে পড়া জিজ্ঞেস করতে বলছে, যাতে ও পড়া না পারলে, মাইক্রোফোন দিয়ে আপনাকে…..’। স্যার থামিয়ে দিলেন তাকে। স্তম্ভিত হয়ে গেলেন, এরকম কিছু হতে পারে স্যারের কল্পনাতেও আসেনি। এবার স্যার মোটু পাতলু গ্যাংয়ের দিকে তাকালেন, ওদের চোখ-মুখের ভাষা পড়েই বুঝে ফেললেন ওদের উদ্দেশ্যটা আসলে কী ছিলো। গম্ভীর মুখ করে স্যার বেশিক্ষণ থাকতে পারলেন না, দুষ্টু স্টুডেন্টদের কাণ্ড দেখে হেসে ফেললেন। ক্লাসটা শেষ হলেই মোটু-পাতলু গ্যাং সামনের বেঞ্চের স্টুডেন্টদের উত্তম মধ্যম দিয়ে গেলো, ওদের কারণেই স্যারকে মারার প্ল্যানটা তাদের নষ্ট হয়ে গেলো। এই হলো ক্লাসে সবচেয়ে ফাজিল মোটু,পাতলু ও তাদের গ্যাং। স্কুল তাদের খুব প্রিয়। কারণ স্কুলে তারা কেউ লেখাপড়া করে না; আড্ডা, ফাজলামো করেই কাটায়।

এবার বলি পাতলুর কথা। পাতলুর পড়ালেখা বলতে মূলত সেটা বাসার স্যারের কাছেই। স্যার হোমওয়ার্ক দেয়, পরদিন জিজ্ঞেস করে, ‘হোম ওয়ার্ক করেছো?’ পাতলু প্রতিদিন হোমওয়ার্ক না করার নিত্যনতুন অজুহাত দেখায়। অজুহাতের ঝুড়ি যখন প্রায় শেষের দিকে, তখন একদিন সে স্যারকে বললো, ‘আচ্ছা স্যার, এটা তো আমারই হোম, আমি তো এখনও চাইলে কালকের পড়াগুলো এখানেই শেষ করতে পারি, এটা তো হোমওয়ার্কের মধ্যেই পরে’। স্যার বেচারা আর কী করবেন। বললেন, ‘ঠিকই তো, এটা তো তোমারই হোম, তোমার হোমে যখনই করো, সেটাকে তো হোমওয়ার্কই বলতে হবে, ঠিক আছে, করো’।
স্কুলে রেজাল্টের পর তার বাবা-মা যখন হিসেব দিতে শুরু করে যে, তার পিছনে কত টাকা খরচ করা হয়েছে, আর সে কিনা এই রেজাল্ট করল? তখন পাতলুর উত্তর, ‘আমি কি বলেছিলাম নাকি আমার জন্য এত টাকা খরচ করতে? তোমাদের ভালো রেজাল্টের প্রতি লোভ তাই করেছো, আমার তো ওসব লোভ নেই। তোমার লোভ করেছ, লোভে পরে লস খেলে, আমি কী করব?’

লেখাপড়া-রেজাল্ট ব্যাপারগুলোকে তাদের বাবা মায়েরা যতোটা সিরিয়াসলি নেন, তারা ততোটাই অবেহলা করে।  এসএসসির আগে মোটু পাতলু একটা কোচিংয়ে ভর্তি হয়। সেখানে প্রতিদিন দুইটা সাবজেক্টের পরীক্ষা নেয়া হয়। আর পাতলুর বাবা প্রতিটা পরীক্ষার খাতা নিয়ে গবেষণা করেন, প্রতিটা খাতার নাম্বার টুকে রাখেন, কোনটাতে কেমন উন্নতি-অবনতি হচ্ছে, অবনতি কেন হলো, সেসব নিয়ে বাসার স্যারদের নিয়ে মিটিং বসান। কোনো কারণে একটা পরীক্ষা দিতে না পারলে পরদিন কোচিং থেকে প্রশ্ন নিয়ে এসে বাবা বাসায় পরীক্ষা নেন। আর এদিকে পাতলু কোচিংয়ে নিয়মিত পরীক্ষা দেয় না। সংগঠন করে বেড়ায়, এছাড়া পড়ালেখার চাপে অতিষ্ঠ হয়ে প্রায়ই এদিক সেদিক ঘুরতে চলে যায় তারা। কিন্তু পাতলুর বাসায় তো খাতা দেখাতে হবে। তাই কোচিংয়ের সিল দেয়া কিছু খাতা যোগাড় করে সেসবে নিজে লিখে, নিজেই নাম্বার বসিয়ে পাতলু তার বাবাকে সন্তুষ্ট করে। 

কিন্তু এরপর কোচিংয়ে নিয়ম করা হলো এক সপ্তাহের সব পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়ালে ঝুলিয়ে দেয়া হবে। পাতলু পরলো মহাবিপদে। এখন থেকে তো সব পরীক্ষা সিরিয়াসলি দিতে হবে। নিয়মিত পরীক্ষা দেয়া শুরু করলো তারা। কিন্তু পরীক্ষায় এতো কম সময় দেয়া হয় যে, টাইমের মধ্যে লেখা শেষ করা সম্ভব হয় না। তাই মোটু অবজেক্টিভ দাগিয়ে পাতলুকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে তার শিট দিয়ে দেয়, আর পাতলু সৃজনশীল লেখে। মোটুর বাসায় পরীক্ষা নিয়ে কারো মাথাব্যাথা নাই। কোচিংয়ে পরীক্ষা চলাকালীন সিসিটিভির দিকে কড়া নজর রাখেন একজন স্যার, আর গার্ড তো আছেই। এভাবে রোবোটিক সিস্টেমে পরীক্ষা দিতে দিতে একপর্যায়ে তারা বিরক্ত হয়ে গেলো। তারপর তারা কোচিংয়ের কয়েকজনকে ধরলো। পাতলুর বায়না, ‘তোরা আমার নামে পরীক্ষা দিবি’। মাঝেমাঝে ওরা কোচিংয়ে না গিয়ে, প্রক্সি পরীক্ষার্থীকে ফোনে সেটা জানিয়ে দিয়ে ওরা ঘুরতে চলে যায়।  

কোচিংয়ের স্যারেরা হঠাৎ পাতলুকে বিশেষ নজরে রাখা শুরু করলেন। পাতলুর খাতাটা সবার আগে চেক করা শুরু করলেন। সে কতো পেয়েছে, কেন খারাপ করলো, এসব নিয়ে আগে তাদের এতো মাথাব্যাথা ছিলো না। মোটু পাতলু বুঝতে পারলো, সবই পাতলুর পিতার কর্ম। পাতলুর অজান্তে বাবা কোচিংয়ে গিয়ে স্যারদের সঙ্গে তার ব্যাপারে কথা বলেন, খাতা দেখেন। এমনিতেই যথেষ্ট যন্ত্রণায় ছিলো, এখন আবার নতুন বিপদ শুরু হলো। মোটু পাতলু গ্যাংয়ের আরেক সদস্যকে কোচিংয়ে আনা নেয়ার জন্য একজন মহিলা নিয়োজিত আছেন। যতোক্ষণ কোচিং চলে, ততোক্ষন উনি বাইরেই বসে থাকতেন। একদিন ওই মহিলাকে পাতলুর বাবার একটা ছবি দেখিয়ে পাতলু বললো, ‘এই লোকটা আমাকে বেশ কিছুদিন ধরে ফলো করছে। এই লোকটাকে কোচিংয়ের আশেপাশে দেখলে জানাবেন, উনি কোচিংয়ে কার সঙ্গে কথা বলে, কী করে সব খেয়াল করবেন’। এরপর থেকে পাতলুর বাবা কখন কোচিংয়ে আসেন, কোন স্যারের সঙ্গে কথা বলেন, সব খবর পাতলুর কাছে চলে আসে। একদিন বাবাকে গিয়ে পাতলু বললো, ‘তুমি আজকে কোচিংয়ে গেছিলা?’ বাবা জিজ্ঞেস করে, ‘কে বললো?’ পাতলু বলল, ‘জানি, গেছো, সব খবর আমার কাছে চলে আসে।’ বাবাকে বুঝিয়ে দিলো যে, পাতলুর অজান্তে তার উপর নজরদারি করে সুবিধা করা যাবে না। এই করেই চলছিলো।

এসএসসি পরীক্ষার কয়েকমাস আগে তাদের মনে ভয় ধরে গেলো। রেজাল্ট নিয়ে তাদের কোনো চিন্তা নেই, কিন্তু তাদেরকে ঘিরে সবার এতো আশা। তারা তো সেসব আশা পূরণ করতে পারবে না। আর সবার এতো আশা পূরণ না হলে তাদের উপর কী ধরনের ঘুর্নিঝড় আছড়ে পড়বে, সেটা ভেবে দুজনেই পড়ায় মনযোগী হলো। 

পরীক্ষায় সময় পরীক্ষা দিলো দুজনে। পরীক্ষা কেমন হয়েছে জিজ্ঞেস করলে, তাদের উত্তর, 'পরীক্ষা তো সবসময়ই ভালো হয়, কিন্ত রেজাল্টটাই কেনো জানি খারাপ হয়ে যায়, আর সব ভালো হতে হবে এমন তো কথা নেই। যেকোন একটা ভালো হলেই হলো'। 
পরীক্ষা পর্ব শেষ, এবার রেজাল্ট। রেজাল্টের আগের দিন তারা ঠিক করলো, যদি ৪ পয়েন্ট পায় তবে বাসা থেকে পালাবে। মা-বাবার হাতে খুন হওয়ার কোনো মানে হয় না। প্ল্যান হলো, কক্সবাজার যাওয়ার। তারা সমুদ্রে ঘুরবে কিছুদিন। তারপর বাবা-মাকে ম্যাসেজ করে জানাবে, যদি রেজাল্টের বিষয়ে কোনো প্রশ্ন না করে তাহলে বাসায় ফিরতে রাজি তারা। পরদিন সকাল ৯টায়, পাতলুর ফোন বেজে উঠলো। এক বন্ধু ফোন করে জানালো, সে বোর্ডে গিয়ে রেজাল্ট নিয়ে এসেছে, মোটু পাতলু দুজনেই জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। পাতলু তখন গভীর ঘুমে, ঘুমন্ত অবস্থাতেই মোটুকে জানালো, আপাতত কক্সবাজারের ট্রিপটা তাদের মিস।

 এদিকে বাসায় পাতলুর বাবা-মার ফোনে একের পর এক আত্মীয়স্বজনের কল। ‘পাতলু কি টেনশন করছে? ওকে বলেন টেনশন না করতে, এসময় এরকম লাগে সবার’। পাতলুর মা-বাবার উত্তর, ‘ও ঘুমাচ্ছে’। শুনে তো ওদের মাথা নষ্ট। পাতলু টেনশন করছে না কেন— এটা নিয়ে তাদের টেনশন শুরু হলো। সাড়ে দশটার দিকে ঘুম থেকে উঠে, পিসি অন করলো সে। পাতলুর বাবা তার একটা ছবি তুলে বললেন, ‘কোনো এসএসসি পরীক্ষার্থী রেজাল্টের দিন, দিনের বারোটা বাজে ঘুম থেকে উঠে, কম্পিউটার নিয়ে বসছে, এ ঘটনা তো সচরাচর ঘটে না, তাই ছবি তুলে রাখলাম’। বুঝলো বাসায় আর বেশিক্ষণ শান্তিতে থাকা যাবে না। মোটুকে ফোন করে বললো, ‘গোল্ডেন না হলে তো কপালে খাওয়া জুটবে না, চল কোথাও খেয়ে আসি।’ বাসায় জানিয়ে গেলো, স্কুলে যাচ্ছে।

ভালো একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে অনেককিছু অর্ডার দিলো। কিন্তু শান্তিমতো খাওয়ার উপায় নেই। স্কুলের টিচারদের ফোন। তারা জানালো, ‘যাচ্ছি স্কুলে’। খেয়ে, কিছুক্ষণ ঘুরে তারা স্কুলে গেলো তিনটার দিকে।
গিয়ে দেখে স্কুল ফাঁকা, সবাই রেজাল্ট জেনে চলে গেছে। এরপর তারা মোটুর মামার বাসার ছাদে গিয়ে উঠলো, সাথে কিছু চিপস-চকলেট-আইসক্রিম। গোল্ডেন কনফার্ম না হওয়া পর্যন্ত বাসায় যাওয়া উচিত হবে কিনা বুঝে উঠতে পারছে না তারা। বিকালের দিকে গোল্ডেনের রেজাল্ট নেটে পাওয়া যাবে, ফোনের নেট সর্বক্ষণ অন। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে, মামার বাসার ছাদের তালা বন্ধ করে দিতে পারে তাই কতক্ষণ এদিক সেদিক হেঁটে, দুজনে মোটুর বাসার ছাদে গিয়ে বসলো। নেটে সার্চ দিতে দিতে হঠাৎ পাতলুর রেজাল্ট পেয়ে গেলো, ‘গোল্ডেন’ আর মোটুরটা সার্চ দিয়ে দেখলো, বাংলায় মিস। ঠিক সেই মূহুর্তে মাথায় আকাশ ভাঙলো দুজনের। তারা এতোদিন পর্যন্ত যা কিছু করেছে সব দুইজনে মিলে, একসঙ্গে করেছে। এই প্রথম দুইজনের ভিন্ন রেজাল্ট। মোটুর চেহারার দিকে তাকিয়ে পাতলু কি বলবে বুঝতে পারছে না। এদিকে পাতলুর বাবা-মা বাসায় নেটে রেজাল্ট দেখে ফোন করে বাসায় যেতে বললেন। পাতলু মোটুকে ছাদে রেখে বাসায় চলে গেলো। মোটু ওখানে কতক্ষণ স্থির বসেছিলো, পাতলুর জানা নেই। বাসায় ফিরে পাতলুর মাথার ভেতরটা কেমন যেন করছে! মোটুর বাংলায় মিস— এটা মেনে নিতে পারছে না। আর দুইজনই মিস করলে হয়তো এতক্ষণে তারা কক্সবাজার যাওয়ার টিকেট কাটতো। এরপর সাহস করে মোটুকে ফোন করতে পারলো না পাতলু। রাতে ফোন করলে, মোটু কিছু কড়া কথা শুনিয়ে ফোন কেটে দিলো। মোটু পাতলুর কাহিনী আর না টানি।


আমি জানি এই কাহিনী অনেকের বাস্তব অভিজ্ঞতার সাথে মিলে যাবে। এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দিল দুই দিন হলো। সব দিকে শুধু রেজাল্ট আর রেজাল্ট। কার ছেলে মেয়ে কেমন করলো, গোল্ডেন পেলো নাকি শুধু এ+ নাকি তাও পেলো না
এইসব নিয়ে আলোচনা চারদিকে। যাদের সন্তান ভাল করলো তারা সবাইকে গর্ব করে রেজাল্ট বলছে, আর যাদের সন্তান প্রত্যাশা অনুযায়ী রেজাল্ট করতে পারেনি, সেসব বাবা-মায়েরা মুখ লুকাচ্ছে আর সন্তানকে বোঝাচ্ছে, সে কতটা অযোগ্য! স্কুল লাইফের প্রিয় বন্ধুরা যারা একসঙ্গে খেলতো, একসঙ্গে আড্ডা দিতো তারা হঠাৎ একদিনে আলাদা হয়ে গেল। এক বন্ধু গোল্ডেন পেলো অন্য বন্ধু পেলো না। তাদের মধ্যে নিজেদের অজান্তেই এক ধরনের দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে যায়। তাদের মধ্যে বিভেদের দেয়াল তৈরি করে দেয় এই রেজাল্ট। এতোদিনের বন্ধুত্ব ধ্বংস করতে এই রেজাল্টই যথেষ্ট। সব পরীক্ষার রেজাল্ট বের হলেই পত্রিকায় কিছু আত্মহত্যার খবরও বের হয়। এইবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী বেশ কয়েকজন ছেলেমেয়ে আত্মহত্যা করে ফেলেছে ইতিমধ্যেই। এইরকম আরও কিছু খবর এই কিছুদিন নিয়মিত পাবেন। প্রতিটা পরীক্ষার ফলাফল মানে অবধারিতভাবে কিছু বাচ্চা ছেলেমেয়ের মৃত্যু পারোয়ানা। আমাদের সবকিছু কেমন যেন সফলতা-কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। তুমি ভালো রেজাল্ট করেছো, ‘তুমি সফল’। তোমাকে সবাই মাথায় তুলে নাচবে। স্তুতিবাক্য ফুলঝুড়ি হয়ে ঝরে পড়বে। রেজাল্ট খারাপ কিংবা প্রত্যাশার তুলনায় খারাপ হলে সব শেষ। সমাজ, পরিবার, আত্মীয়, স্বজন কানে বারবার মনে করিয়ে দিতে থাকে, ‘তুমি অযোগ্য’। বাবা-মা হিসেব দিতে শুরু করেন এতোদিন তার পেছনে কতো টাকা খরচ হয়েছে। বাবা মায়েরা ছেলেমেয়ের সফল বন্ধুটিকে দেখিয়ে সন্তানকে বলে, ‘তুই কি করলি?’ এই কথাগুলা তাদের মানসিকভাবে কতোটা পীড়া দেয়, সেটা শুধু সেই সন্তানই জানে।
 এভাবেই সন্তানের মনে জন্ম নেয় প্রবল হীনমন্যতা, নিজের প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণাবোধ। একটা মানুষ নিজেকে কতোটা ঘেন্না করলে, কতোটা অসহায় বোধ করলে আত্মহত্যা করে তা আমাদের ধারনারও বাইরে।
এ কেমন সমাজে আমরা বাস করি, কেমন শিক্ষা ব্যবস্থা; যেখানে জীবনের মূল্য শেখানো হয় না? যেখানে সফলতার কাছে মানুষ দাস হয়ে যায়।

 ঘুণেধরা শিক্ষাব্যবস্থায় রেজাল্ট হচ্ছে মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টির মাধ্যেম মাত্র। আমি চাই এইসব ফালতু রেজাল্টের কারবার বন্ধ হোক। ভেদাভেদ দূর হোক। কিসের রেজাল্ট নিয়ে আমরা গর্ব করবো? আমাদের দেশে প্রতি বছর এতো এতো গোল্ডেনপ্রাপ্ত স্টুডেন্ট বের হচ্ছে, কি লাভ হচ্ছে আমাদের দেশের? তারা দেশের জন্য কি করছে? সবাই তো সেই টাকার পেছনে ছুটছে। সব যেন একেকটা গোল্ডেন রোবট তৈরি হচ্ছে।

1 টি মন্তব্য: