নারায়ণগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত বর্বরতম নিপীড়নের শিকার হয়েছেন স্কুল কমিটি ও স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমান দ্বারা। তার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মিথ্যা গুজব রটিয়ে একদল লোক তাকে শারীরিকভাবে আঘাত ও অপমানিত করেছেন। শিক্ষক শ্যামল কান্তি ধর্ম অবমাননা করেছেন কিনা প্রথম ক’দিন এ নিয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। তাই সবাই ধরে নিয়েছে, নিশ্চয়ই ওই মালাউন ব্যাটা আমাদের আল্লাহ রসুলকে নিয়ে কটুক্তি করেছে। কাজেই তাকে যা করা হয়েছে, তার অপরাধের তুলনায় তা কিছুই না।
তারপর সাংবাদিকেরা তাদের ক্যামারায় খবর নিয়ে এলেন যে, শ্যামল কান্তি ধর্ম নিয়ে কোনো ধরণের মন্তব্য করেননি। যেই ছাত্রের অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে অপমানিত করা হয়েছিলো, সেই ছাত্রই পরবর্তীতে ক্যামেরার সামনে বলেছে, “স্যার ধর্ম নিয়ে কিছু বলেননি”। শিক্ষক শ্যামল কান্তি ধর্ম নিয়ে বলেছেন, এলাকাবাসীও এরকম কিছুর প্রমাণ পাননি বলে জানিয়েছেন।
বিষয়টির সাথে নাস্তিকতা জাতীয় ভয়ংকর কোনো কিছুর সম্পর্ক না থাকায় মডারেট মুসলমানগণ ধীরে ধীরে মুখ খুলতে শুরু করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ নিজেদের কানে ধরা ছবি দিয়ে শ্যামল কান্তির এমন দুরবস্থায় তার পাশে আছেন বলে জানিয়েছেন, তার প্রতি হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু হলো, সেলিম ওসমান নামের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ট্যাগ থাকায়, অনেকেই সেলিম ওসমানের শাস্তি দাবী করতেই শ্যামল কান্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। হুজুগে বাঙালি, যারা ১২ ঘন্টা আগে মালাউন শ্যামল কান্তির ফাঁসির দাবী করছিলো, তারাই আবার ঢেউয়ের তালে তাল মিলিয়ে শ্যামল কান্তির পক্ষ নিয়েছেন। এভাবেই মালাউনের বাচ্চা থেকে ধীরে ধীরে শ্যামল কান্তি হয়ে গেলেন, আমাদের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত।
যেহেতু জনগণ শ্যামল কান্তির পক্ষে নিয়েছেন, কাজেই সরকারের মন্ত্রী এমপিরাও ধীরে ধীরে এ বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হলো। এটা তো তার প্রাপ্য। কিন্তু অপরাধীদের প্রাপ্যটার তবে কী হবে?
একবার ভাবুন, যদি প্রমাণ করা না যেতো যে শ্যামল কান্তি আসলে ধর্ম নিয়ে কিছুই বলেননি, কিংবা যদি প্রমাণ হতো যে, শ্যামল কান্তি আসলেই ধর্ম নিয়ে কিছু বলেছেন, তবে এইসব প্রতিবাদী কন্ঠরা কিন্তু মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকতেন। আর বেচারা শ্যামল কান্তির পরিণতি হতো রাজীব, অভিজিৎদের মতো। প্রতিবাদের তো প্রশ্নই উঠে না, বরং অনেকে সুর তুলতেন, ‘ধর্ম নিয়ে কটুক্তি বরদাস্ত করা হবে না’।
শ্যামল কান্তির ইস্যু নিয়ে যখন আমরা প্রতিবাদ করছি, ঠিক তখন নিবন্ধন পরীক্ষা দিতে গিয়ে প্রধান শিক্ষক দ্বারা ধর্ষণের শিকার হলেন একজন শিক্ষিকা। যেহেতু হুজুগে বাঙালি তখন অন্য ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত তাই এইদিকে নজর দেয়ার সময় হয়নি। আর কয়েকদিন আগেই তো তনু ধর্ষণের ইস্যু নিয়ে প্রতিবাদ হলো, এখন নতুন কিছু নিয়ে প্রতিবাদ করা যাক, ধর্ষণের ইস্যু তো পুরাতন।
এরপর ঢাকার ধামরাইয়ে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকাকে টয়লেট থেকে বের করে মারধর ও লাঞ্ছিতের অভিযোগ উঠেছে ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সহসভাপতির বিরুদ্ধে। না, এই বিষয়েও কারও প্রতিবাদ নেই, কাজেই সরকারের কারও এই নিয়ে মুখ খোলার কিংবা কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন হয়নি।
শ্যামল কান্তি ইস্যুটা থেকে ফায়দা লুটতে এখন আবার হেফাজতে ইসলাম মাঠে নেমেছে, দেখা যাক শেষ পর্যন্ত নাটক কোনদিকে মোড় নেয়।
কিছুদিন আগে তনু হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগে দেশ উত্তাল ছিলো। ময়না তদন্তে প্রথমে ধর্ষণের কোনো আলামতই পাওয়া গেলো না। পরে প্রতিবাদের অবস্থা বুঝে, ময়নাতদন্ত পাল্টে গেলো। দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তে তনুর কাপড়ে দুইজনের বীর্য পাওয়া গেছে বলে জানা যায়।
এসব ঘটনাগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে গিয়ে কিছু বিষয় মাথায় এসেছে। প্রথমে যেকোনো অন্যায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা হয়। এরপর যদি দেখা যায়, ওই অন্যায়ের বিরুদ্ধে জাতি সোচ্চার, তখন সেটিকে অন্যায় হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় এবং সরকার-প্রশাসন এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
২০১৩ সালে কাদেরমোল্লাকে যাবজ্জীবন দেয়ার কথা কি মনে পড়ে আপনাদের? জনগণ এই রায়ের বিরুদ্ধে গেলে পরবর্তীতে কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ হয়, দণ্ড কার্যকরও হয়। যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে যদি জনগণ এক না হতো, তবে কিন্তু এসব ভয়ংকর অপরাধীদের কারও ফাঁসি হতো না।
দেখা যাচ্ছে, যেই ইস্যুতে জনগণ সোচ্চার হয়, প্রতিবাদী হয়, সেই ইস্যুতে সরকার কোনো একটা ব্যবস্থা নেয়। এখনও পর্যন্ত যেই ইস্যুতে জনগণের কোনো প্রতিবাদ দেখা যায়নি, তা হলো নাস্তিক মুক্তমনাদের হত্যা। কাজেই এগুলো এখনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই রয়ে গেছে। আমি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি, জনগণ যদি নাস্তিক হত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় নামে, তবে নাস্তিক হত্যার বিচার করার ব্যাপারেও সরকার পদক্ষেপ নেবে।
ইসলাম ধর্মে নাস্তিক হত্যার নির্দেশ দেয়া আছে, এরকম রেফারেন্স হাজির করলে বলা হয়, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম ধর্মে এসব বলা হয়নি, এসব সহিহ অনুবাদ নয়, ইসলাম হত্যাকে সমর্থন করে না’। ইসলাম যদি হত্যাকে সমর্থন না করে, তবে একের পর এক নাস্তিক প্রগতিশীলদের হত্যায় শান্তিকামীদের কোনো প্রতিবাদ দেখি না কেন? ইসলাম যদি এতোই শান্তির ধর্ম হয়, তবে ‘নাস্তিক হত্যা ওয়াজিব হয়ে গেছে’ নাস্তিকদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দাতাদের বিরুদ্ধে কেন ইসলাম অবমাননার অভিযোগ উঠে না? কেন প্রকাশ্যে এসব হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করেন না? এই কেন-এর উত্তরটা নিজেই বুঝে নিন, আবার রেফারেন্স দিতে পারবো না।
এখন আবার নতুন নাটক, ছয় জঙ্গিকে ধরতে পুরষ্কার ঘোষণা করা হয়েছে। যেহেতু একের পর এক মুক্তমনা হত্যার পর সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে উন্নত দেশগুলো, তাই সরকার এটি নিয়ে কিছুটা চাপের মধ্যেই আছে বলা যায়। আন্তর্জাতিক মিডিয়ার কাছে এখন সরকার জানিয়ে দিলো যে, আমরা নাস্তিক হত্যার বিষয়গুলো এতোটাই সিরিয়াসলি নিচ্ছি যে, জঙ্গি সনাক্ত করে এখন খুঁজে বের করার জন্য মরিয়া হয়ে লাখ টাকার পুরষ্কার পর্যন্ত ঘোষণা করে ফেলেছি। আর কী চাও তোমরা?
আর যেসব জঙ্গিকে হাতে নাতে ধরা হলো, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হলো? বাবু হত্যায় দুই জঙ্গিকে ধরে দিয়েছিলো ভিন্ন লিঙ্গের দুইজন মানুষ। ওই দুই জঙ্গির অপরাধীর কোনো শাস্তি না হলেও খুনি ধরিয়ে দেয়ার অপরাধে সেই ভিন্ন লিঙ্গের দুজনকে হুমকির মুখে ঢাকা ছাড়তে হয়েছে। অভিজিতের খুনীদের নাকি চিহ্নিত করা হয়েছে, নজরদারিতে রয়েছে, এরকম খবর শুনে আসছিলাম। এরপর খবর এলো, খুনীরা বিদেশে পালিয়ে গেছে।
হয়তো শিক্ষক লাঞ্ছনার ইস্যু চাপা দিতেই এই জঙ্গি শনাক্ত ও পুরস্কারের নাটক শুরু হলো। এতে ইস্যু চাপা পরলে তো খুব ভালো। নয়তো একটা নাস্তিক কিংবা প্রগতিশীল কাউকে বলি করা হবে। পুরাতন ইস্যু পাল্টে নতুন ইস্যু হেডলাইনে আসতে বাধ্য।
জুম্মাবারের আপডেট, কুষ্টিয়া সদরের বটতৈলে সানোয়ার রহমান নামে এক হোমিও চিকিৎসককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। জানা যায়, নিহত সানাউর রহমান একজন বাউল ভক্ত ছিলেন। একসময় বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। একটা হোমিও দোকান দিয়েছিলেন যেখানে বিনা পয়সায় চিকিৎসা সেবা দেয়া হতো। তার দোকানে সম্ভবত প্রগতিশীল ও বাউলতত্বে বিশ্বাসী লোকজনের আড্ডা হতো। দেখা যাক, এই ইস্যু নিয়ে কী ধরনের নাটক হয়।
এভাবেই ইস্যু যায়, ইস্যু আসে। এসব ইস্যুর স্রোতেই আমরা হারিয়েছি রাজীব, অভিজিৎ, বাবু, অনন্ত, নীল, দীপন, নাজিমউদ্দীন, রেজাউল করিম, জুলহাজ, তনয়, সানোয়ারদের….
তারপর সাংবাদিকেরা তাদের ক্যামারায় খবর নিয়ে এলেন যে, শ্যামল কান্তি ধর্ম নিয়ে কোনো ধরণের মন্তব্য করেননি। যেই ছাত্রের অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে অপমানিত করা হয়েছিলো, সেই ছাত্রই পরবর্তীতে ক্যামেরার সামনে বলেছে, “স্যার ধর্ম নিয়ে কিছু বলেননি”। শিক্ষক শ্যামল কান্তি ধর্ম নিয়ে বলেছেন, এলাকাবাসীও এরকম কিছুর প্রমাণ পাননি বলে জানিয়েছেন।
বিষয়টির সাথে নাস্তিকতা জাতীয় ভয়ংকর কোনো কিছুর সম্পর্ক না থাকায় মডারেট মুসলমানগণ ধীরে ধীরে মুখ খুলতে শুরু করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ নিজেদের কানে ধরা ছবি দিয়ে শ্যামল কান্তির এমন দুরবস্থায় তার পাশে আছেন বলে জানিয়েছেন, তার প্রতি হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু হলো, সেলিম ওসমান নামের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ট্যাগ থাকায়, অনেকেই সেলিম ওসমানের শাস্তি দাবী করতেই শ্যামল কান্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। হুজুগে বাঙালি, যারা ১২ ঘন্টা আগে মালাউন শ্যামল কান্তির ফাঁসির দাবী করছিলো, তারাই আবার ঢেউয়ের তালে তাল মিলিয়ে শ্যামল কান্তির পক্ষ নিয়েছেন। এভাবেই মালাউনের বাচ্চা থেকে ধীরে ধীরে শ্যামল কান্তি হয়ে গেলেন, আমাদের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত।
যেহেতু জনগণ শ্যামল কান্তির পক্ষে নিয়েছেন, কাজেই সরকারের মন্ত্রী এমপিরাও ধীরে ধীরে এ বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত বাতিল করা হলো। এটা তো তার প্রাপ্য। কিন্তু অপরাধীদের প্রাপ্যটার তবে কী হবে?
একবার ভাবুন, যদি প্রমাণ করা না যেতো যে শ্যামল কান্তি আসলে ধর্ম নিয়ে কিছুই বলেননি, কিংবা যদি প্রমাণ হতো যে, শ্যামল কান্তি আসলেই ধর্ম নিয়ে কিছু বলেছেন, তবে এইসব প্রতিবাদী কন্ঠরা কিন্তু মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকতেন। আর বেচারা শ্যামল কান্তির পরিণতি হতো রাজীব, অভিজিৎদের মতো। প্রতিবাদের তো প্রশ্নই উঠে না, বরং অনেকে সুর তুলতেন, ‘ধর্ম নিয়ে কটুক্তি বরদাস্ত করা হবে না’।
শ্যামল কান্তির ইস্যু নিয়ে যখন আমরা প্রতিবাদ করছি, ঠিক তখন নিবন্ধন পরীক্ষা দিতে গিয়ে প্রধান শিক্ষক দ্বারা ধর্ষণের শিকার হলেন একজন শিক্ষিকা। যেহেতু হুজুগে বাঙালি তখন অন্য ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত তাই এইদিকে নজর দেয়ার সময় হয়নি। আর কয়েকদিন আগেই তো তনু ধর্ষণের ইস্যু নিয়ে প্রতিবাদ হলো, এখন নতুন কিছু নিয়ে প্রতিবাদ করা যাক, ধর্ষণের ইস্যু তো পুরাতন।
এরপর ঢাকার ধামরাইয়ে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকাকে টয়লেট থেকে বের করে মারধর ও লাঞ্ছিতের অভিযোগ উঠেছে ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সহসভাপতির বিরুদ্ধে। না, এই বিষয়েও কারও প্রতিবাদ নেই, কাজেই সরকারের কারও এই নিয়ে মুখ খোলার কিংবা কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন হয়নি।
শ্যামল কান্তি ইস্যুটা থেকে ফায়দা লুটতে এখন আবার হেফাজতে ইসলাম মাঠে নেমেছে, দেখা যাক শেষ পর্যন্ত নাটক কোনদিকে মোড় নেয়।
কিছুদিন আগে তনু হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগে দেশ উত্তাল ছিলো। ময়না তদন্তে প্রথমে ধর্ষণের কোনো আলামতই পাওয়া গেলো না। পরে প্রতিবাদের অবস্থা বুঝে, ময়নাতদন্ত পাল্টে গেলো। দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তে তনুর কাপড়ে দুইজনের বীর্য পাওয়া গেছে বলে জানা যায়।
এসব ঘটনাগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে গিয়ে কিছু বিষয় মাথায় এসেছে। প্রথমে যেকোনো অন্যায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা হয়। এরপর যদি দেখা যায়, ওই অন্যায়ের বিরুদ্ধে জাতি সোচ্চার, তখন সেটিকে অন্যায় হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় এবং সরকার-প্রশাসন এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
২০১৩ সালে কাদেরমোল্লাকে যাবজ্জীবন দেয়ার কথা কি মনে পড়ে আপনাদের? জনগণ এই রায়ের বিরুদ্ধে গেলে পরবর্তীতে কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ হয়, দণ্ড কার্যকরও হয়। যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে যদি জনগণ এক না হতো, তবে কিন্তু এসব ভয়ংকর অপরাধীদের কারও ফাঁসি হতো না।
দেখা যাচ্ছে, যেই ইস্যুতে জনগণ সোচ্চার হয়, প্রতিবাদী হয়, সেই ইস্যুতে সরকার কোনো একটা ব্যবস্থা নেয়। এখনও পর্যন্ত যেই ইস্যুতে জনগণের কোনো প্রতিবাদ দেখা যায়নি, তা হলো নাস্তিক মুক্তমনাদের হত্যা। কাজেই এগুলো এখনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই রয়ে গেছে। আমি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি, জনগণ যদি নাস্তিক হত্যার প্রতিবাদে রাস্তায় নামে, তবে নাস্তিক হত্যার বিচার করার ব্যাপারেও সরকার পদক্ষেপ নেবে।
ইসলাম ধর্মে নাস্তিক হত্যার নির্দেশ দেয়া আছে, এরকম রেফারেন্স হাজির করলে বলা হয়, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম ধর্মে এসব বলা হয়নি, এসব সহিহ অনুবাদ নয়, ইসলাম হত্যাকে সমর্থন করে না’। ইসলাম যদি হত্যাকে সমর্থন না করে, তবে একের পর এক নাস্তিক প্রগতিশীলদের হত্যায় শান্তিকামীদের কোনো প্রতিবাদ দেখি না কেন? ইসলাম যদি এতোই শান্তির ধর্ম হয়, তবে ‘নাস্তিক হত্যা ওয়াজিব হয়ে গেছে’ নাস্তিকদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দাতাদের বিরুদ্ধে কেন ইসলাম অবমাননার অভিযোগ উঠে না? কেন প্রকাশ্যে এসব হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করেন না? এই কেন-এর উত্তরটা নিজেই বুঝে নিন, আবার রেফারেন্স দিতে পারবো না।
এখন আবার নতুন নাটক, ছয় জঙ্গিকে ধরতে পুরষ্কার ঘোষণা করা হয়েছে। যেহেতু একের পর এক মুক্তমনা হত্যার পর সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে উন্নত দেশগুলো, তাই সরকার এটি নিয়ে কিছুটা চাপের মধ্যেই আছে বলা যায়। আন্তর্জাতিক মিডিয়ার কাছে এখন সরকার জানিয়ে দিলো যে, আমরা নাস্তিক হত্যার বিষয়গুলো এতোটাই সিরিয়াসলি নিচ্ছি যে, জঙ্গি সনাক্ত করে এখন খুঁজে বের করার জন্য মরিয়া হয়ে লাখ টাকার পুরষ্কার পর্যন্ত ঘোষণা করে ফেলেছি। আর কী চাও তোমরা?
আর যেসব জঙ্গিকে হাতে নাতে ধরা হলো, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হলো? বাবু হত্যায় দুই জঙ্গিকে ধরে দিয়েছিলো ভিন্ন লিঙ্গের দুইজন মানুষ। ওই দুই জঙ্গির অপরাধীর কোনো শাস্তি না হলেও খুনি ধরিয়ে দেয়ার অপরাধে সেই ভিন্ন লিঙ্গের দুজনকে হুমকির মুখে ঢাকা ছাড়তে হয়েছে। অভিজিতের খুনীদের নাকি চিহ্নিত করা হয়েছে, নজরদারিতে রয়েছে, এরকম খবর শুনে আসছিলাম। এরপর খবর এলো, খুনীরা বিদেশে পালিয়ে গেছে।
হয়তো শিক্ষক লাঞ্ছনার ইস্যু চাপা দিতেই এই জঙ্গি শনাক্ত ও পুরস্কারের নাটক শুরু হলো। এতে ইস্যু চাপা পরলে তো খুব ভালো। নয়তো একটা নাস্তিক কিংবা প্রগতিশীল কাউকে বলি করা হবে। পুরাতন ইস্যু পাল্টে নতুন ইস্যু হেডলাইনে আসতে বাধ্য।
জুম্মাবারের আপডেট, কুষ্টিয়া সদরের বটতৈলে সানোয়ার রহমান নামে এক হোমিও চিকিৎসককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। জানা যায়, নিহত সানাউর রহমান একজন বাউল ভক্ত ছিলেন। একসময় বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। একটা হোমিও দোকান দিয়েছিলেন যেখানে বিনা পয়সায় চিকিৎসা সেবা দেয়া হতো। তার দোকানে সম্ভবত প্রগতিশীল ও বাউলতত্বে বিশ্বাসী লোকজনের আড্ডা হতো। দেখা যাক, এই ইস্যু নিয়ে কী ধরনের নাটক হয়।
এভাবেই ইস্যু যায়, ইস্যু আসে। এসব ইস্যুর স্রোতেই আমরা হারিয়েছি রাজীব, অভিজিৎ, বাবু, অনন্ত, নীল, দীপন, নাজিমউদ্দীন, রেজাউল করিম, জুলহাজ, তনয়, সানোয়ারদের….
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন