প্রায় ৮ বছর বন্ধ থাকার পর, ২০১৫ সালে আবার শুরু হয় সৌদি আরবে নারী শ্রমিক পাঠানো। গৃহকর্মী হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়া এসব নারীরা আরবদের নিপীড়নের শিকার হতে পারে, অনেকে এমন আশঙ্কা করলেও বিভিন্ন দায়িত্বশীল জায়গা থেকে এসব ব্যাপারে তখন আশ্বস্থ করা হয়েছিলো। কিন্তু বাস্তবে এসব আশ্বাস কোন কাজে লাগে নি।
কর্মস্থলে নির্যাতনের কারণে ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কা যখন তাদের নারীদের সৌদি আরবে পাঠানো বন্ধ করে দিচ্ছে সেখানে বাংলাদেশ কেন নারী শ্রমিকদের সৌদি আরবে পাঠানো শুরু করে তা আমার কাছে বোধগম্য নয়।
অন্যান্য দেশগুলো নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করে দেওয়ায়, দেশটি বাংলাদেশ থেকে নারী গৃহকর্মী নিতে আগ্রহী হয়ে উঠে।
সৌদি সরকার দুই লাখের বেশি নারীকর্মীর চাহিদা জানালে বাংলাদেশ থেকে মাসে দশ হাজার নারীকর্মী পাঠানোর কথা বলা হয়। অথচ ২০১৫ সালের হিসেবে মাত্র ২০ হাজার ৯শ ৫২ জন নারী সৌদি আরবে গিয়েছে। চুক্তির এক বছরে চাহিদার দশ ভাগের একভাগ নারী বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে গেছেন। কাজ করতে যাবার অল্প দিনের মধ্যে আবার নারীদের ফেরত আসার প্রবণতাও দেখা গেছে।
বাংলাদেশ থেকে পুরুষ কর্মীরা যেখানে টাকা খরচ করে সৌদি যাওয়ার জন্য উদগ্রীব সেখানে বিনা খরচে নারীকর্মীরা কেন আরবে যেতে চান না? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ইন্টারনেট ঘেঁটে সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মীদের কি ধরণের অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়, সেসব নিয়ে অনেক তথ্য পেয়ে গেলাম।
সৌদি আরবে বাসার কাজ করে মাসে ১৫-১৬ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব এবং সেখানে নারীরা পর্দার মধ্যে নিরাপদে থাকেন, এ আশ্বাস দিয়ে দরিদ্র অসহায় মেয়েদের সৌদিতে নিয়ে যাওয়া হয়। যাওয়ার পর দেখা যায় সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র।
দেশে ধর্ষণ হলেই শোনা যায়, ওই মেয়ের কাপড় ঠিক ছিল না, পর্দা করতো না, তাই ধর্ষণের শিকার হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে দেখানো হয়, ইসলামী দেশগুলোতে নাকি ধর্ষণ নেই। কারণ তাদের মেয়েরা পর্দা মেনে চলে। সেই পর্দার নিরাপত্তার দোহায় দিয়েই এদেশ থেকে নারী শ্রমিক পাঠানো হয়। শেষ পর্যন্ত, কামুক ধর্ষকদের কাছে পর্দা আর বেপর্দার মধ্যে যে কোন পার্থক্য নেই সেটাই প্রমাণিত হয়, সৌদি আরবে গৃহকর্মীদের অবস্থা দেখে। বর্বর আরবদের কাছে গরীব দেশ থেকে তাদের দেশে কাজ করতে যাওয়া খেটে খাওয়া নারীরা ভোগ লালসার পণ্য ছাড়া আর কিছু নয়।
সৌদি আরবে গৃহকর্মীদের শারীরিক মানসিক নির্যাতন করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, গৃহকর্মীদের মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়া হয়, তাদের সাথে দেশের স্বজনদের যোগাযোগ করতে দেয় না।
প্রায় সব নারী শ্রমিকদের একটিই অভিযোগ ‘ধর্ষণ’। তারা ধর্ষণের শিকার হয়, একই পরিবারের পিতা এবং ছেলে দ্বারা। অতিরিক্ত নির্যাতনের শিকার হয়ে তারা নির্ধারিত সময়ের আগেই দেশে ফিরে আসেন। দেশে এসে তারা অনেকেই আর স্বাভাবিক হতে পারেন না, কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন।
বাংলাদেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছিল, নারী কর্মীরা যেন কোনও সমস্যায় না পড়েন, সেদিকে খেয়াল রাখা হবে, এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। যদিও বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায়, বিষয়টি যথেষ্ট দুশ্চিন্তার কারণ। কেননা, বেশিরভাগ সময়ই দেখা গেছে, নির্যাতনের শিকার এসব নারীরা দায়িত্বরতদের কাছ থেকে সাহায্য পায় না।
রিয়াদে একটি কোম্পানির কক্ষে আটকে থাকা ২০ থেকে ২৫ জন বাংলাদেশী নারী শ্রমিকের আকুতি, ‘ভাই আমাদের বাঁচান’। অডিওটা শুনে সৌদি আরবে গৃহকর্মীদের নির্যাতনের চিত্রটা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠে।
সুন্দরী গৃহকর্মীদের ঘরে আনতে জোর আপত্তি খোদ সৌদি আরবের নারীদের। তাদের অভিমত, বিভিন্ন দেশ থেকে সুন্দরী এবং কমবয়সী নারী গৃহকর্মীরা এসে সংসারের অশান্তি বাড়ায়। তাই সৌদি নারীরা সুন্দরী ও কমবয়সী মেয়েদের গৃহকর্মী করতে চান না।
ভেবে দেখুন সৌদি পুরুষেরা মানসিক ভাবে কতটা অসুস্থ। আমাদের দৃষ্টিতে তারা অসুস্থ হলেও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তারা সম্পূর্ণ সুস্থ। তাদের সুস্থতার রেফারেন্স --
কোরান ৩৩:৫০ ও অহীবাহক, আমরা আপনার জন্য হালাল করেছি(যৌনকর্মে লিপ্ত হতে) আপনার স্ত্রীদের সাথে যাদের মোহরানা আপনি পরিশোধ করেছেন, এবং তাদের(নারী) সাথে যারা আপনার ডান হস্তের অন্তর্গত(দাসী) এবং যারা আপনার যুদ্ধবন্দী যাদেরকে আল্লাহই আপনার প্রতি দিয়েছেন"
কোরান ২৩ আয়াত ৫,৬
"তারা যারা অন্যদের সাথে যৌনকর্ম হতে বিরত থাকে শুধু নিজের স্ত্রী,দাসী
এবং অন্য যাদেরকে তাদের জন্য হালাল করা হয়েছে(যুদ্ধবন্দী) ছাড়া।"
তিনি(নবী মুহাম্মদ) তার(দাসী) সাক্ষাতে গেলেন এবং তাকে হিজাবে থাকতে নির্দেশ দিলেন, অতঃপর তিনি তার সাথে যৌন কর্মে লিপ্ত হলেন কারন সে ছিল তারই সম্পত্তি। -কিতাব আল তাবাক-ত আল-কাবীর ভলুম ৩৯, পৃষ্ঠা ১৯৪
সূরা আল মুমিনূন ২৩: ৬: “তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে (নিজেদের যৌনাঙ্গকে) সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না।”
মালিকের মুয়াত্তা হাদিস ২৯.৩২.৯৯:
ইয়াহিয়া—মালিক—দামরা ইবনে সাইদ আল মাজনি—আল হাজ্জাজ ইবনে আমর ইবনে গাজিয়া থেকে: উনি (অর্থাৎ আল হাজ্জাজ) জায়েদ ইবনে সাবিতের সাথে বসে ছিলেন। এই সময় ইয়ামান থেকে ইবনে ফাহদ আসলেন। ইবনে ফাহদ বললেন: “আবু সাইদ! আমার কাছে ক্রীতদাসী আছে। আমার কোন স্ত্রীই এই ক্রীতদাসীদের মত উপভোগ্য নয়। আমার স্ত্রীর কেউই এমন তৃপ্তিদায়ক নয় যে আমি তাদের সাথে সন্তান উৎপাদন করতে চাই। তা হলে কি আমি আমার স্ত্রীদের সাথে আজল করতে পারি?” জায়েদ ইবনে সাবিত উত্তর দিলেন: “হে হাজ্জাজ, আপনি আপনার অভিমত জানান”। আমি (অর্থাৎ হাজ্জাজ) বললাম: “আল্লাহ্ আপনাকে ক্ষমা করুন। আমরা আপনার সাথে বসি আপনার কাছে কিছু শিক্ষার জন্যে”। তিনি (অর্থাৎ জায়েদ) বললেন: “আপনার মতামত জানান”। আমি বললাম: “ঐ ক্রীতদাসী হচ্ছে তোমার ময়দান। তুমি চাইলে সেখানে পানি ঢাল অথবা তৃষ্ণার্ত রাখ। আমি এইই শুনেছি জায়েদের কাছ থেকে”। জায়েদ বললেন; “উনি সত্যি বলেছেন”।
সমস্যা হল, এসব বলতে গেলেই অনুভূতিতে আঘাত লেগে যায়। সবচেয়ে বেশি আঘাত লাগে রেফারেন্স দিয়ে কথা বললে। প্রধানমন্ত্রীর মতে নাস্তিকরা পর্ন লিখে, পর্ন তো আসলে দেয়া আছে আপনার পবিত্র গ্রন্থগুলোতে। আমরা শুধু সেসব কপি পেস্ট করি। পবিত্র গ্রন্থগুলো থেকে পবিত্রতার ঢাল উঠিয়ে অন্য যেকোনো বইয়ের মত করে পড়ে দেখুন। তাহলেই বুঝে যাবেন।
এবার শুনেছি নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ থেকে যেসব নারী শ্রমিক যাবে তাদের সঙ্গে একজন পুরুষ নিকটাত্মীয়কে নেবে সৌদি আরব। এই হল বোনাস। নারী শ্রমিক ধর্ষণ করে এবার সাথে একটা করে গেলমান পেয়ে গেলও। বেহেশতে গেলে পাওয়া যাবে- হুরপরী,গেলমান। এই লোভ যাদের মগজে ঢোকানো আছে, তারা পৃথিবীতে হুরপরী-গেলমান পেলে নিজেদেরকে আটকে রাখতে পারবে, এই নিশ্চয়তা কি আপনি দিতে পারেন?
মন্ত্রী বলেছেন, এখন থেকে নারীদের পাঠানোর আগে প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠানো হবে। দেশে কি প্রশিক্ষণ দেয়া হবে জানি না, তবে উপরে যেই রেফারেন্স দিলাম, সেসবের প্রশিক্ষণ সৌদিরা জন্মগত ভাবেই প্রাপ্ত কাজেই, আপনাদের প্রশিক্ষণ কতটুকু কাজে লাগবে বলার উপায় নেই।
এতকিছুর পরও কেন সৌদি আরবে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধ হচ্ছে না? কেন নিজের দেশেই এসব নারী শ্রমিকদের কর্মস্থানের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না? নারী শ্রমিকদের অত্যাচারের বিনিময়ে কিছু বৈদেশিক মুদ্রা দেশে না এলে কি দেশের অর্থনীতিতে ধ্বস নেমে যাবে?
সৌদি যদি এরকমই অত্যাচার করে তাতে কি?
উত্তরমুছুনতারা তো মুসলমান?
হাদিসেই তো আছে এক মুসলমান আরেক মুসলমানের দোষ গোপন রাখবে।
আরো একটা কথা আছে না?
আল্লার মাল আল্লায় নিয়ে গেছে।
বলুন আলহামদুলিল্লা..
এরকম একটি লেখা আমাদের জন্যে প্রয়োজন ছিল।
উত্তরমুছুন