নাস্তিক ব্লগাররা এখন বাংলাদেশের মিডিয়ার জন্য বড় নিউজ। এদেরকে কিছুদিন পরপর রাস্তায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। সেসব নিয়ে টক শো হয়, ব্রেকিং নিউজ হয়, রাজনীতি হয়। ব্লগারদের নিয়ে দেশের অনেকেরই প্রচুর আগ্রহ। ওরা কি লিখে? কেন লিখে? দেশের সুশীল-বুদ্ধিজীবি সমাজ ব্লগারদের নির্বুদ্ধিতার কথা ভেবে মুচকি হাসে, ‘কি দরকার তাদের এসব লেখালেখির, মুখ খুললেই মৃত্যু যখন জানোই তাহলে বাপু মুখ খুলতে যাও কেনও?’
ব্লগারদের অনেকেই দেশে এখন লুকিয়ে আছে, পালিয়ে বেড়াচ্ছে। দেশ থেকে বের হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। কিন্তু নিজের দেশ, নিজের মানুষদের ফেলে হুট করে বললেই তো চলে যাওয়া যায় না।
পরিচিত এক ব্লগার, যে তার পরিবারের একমাত্র ভরসা। তার রোজগারের উপর নির্ভর করে মা-বাবা-ভাই-বোনের জীবন। দিনে আনে দিনে খায় অবস্থা। তাকে নিয়মিত ফলো করা হচ্ছে। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জীবিকার তাগিদে তাকে কাজে বের হতে হচ্ছে। ওদিকে ঘরেও তো নিরাপত্তা নেই। ঘরে এসে কুপিয়ে যাচ্ছে। এই যার অবস্থা সে কিভাবে সব দায়িত্ব ফেলে দেশ ছাড়ার কথা ভাববে? অথচ দেশ ত্যাগ ছাড়া তার জীবন বাঁচানোর আর কোন রাস্তাও নেই।
এমন অনেক ব্লগার আছে, যারা নাস্তিক হওয়ার কারণে পরিবার থেকে আলাদা। নিজের পরিবার যাদেরকে ত্যাজ্য বলে দেয় সেখানে তারা এই অবস্থায় আর কার কাছে আশ্রয় চাইবে?
মেয়েকে বাবা বিয়ে দিতে চায়। আর মেয়ে পড়ালেখা শেষ করতে চায়। প্রথমত বাবার কথার বিরুদ্ধে গিয়ে পড়ালেখা করছে। দ্বিতীয়ত, মেয়ে নাস্তিক, লেখালেখি করে। এসব জানার পর বাড়ি থেকে টাকা আসা বন্ধ। মেয়ে চলছে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে। এই অবস্থায় নিজের খরচ জোগাতে টিউশনি করে। জীবন বাঁচাতে দেশ ছাড়তে হবে। অর্থের যোগান দিবে কে? অর্থ না হয় কোন ভাবে পেয়েই গেলো, দেশ ত্যাগ করতেও সক্ষম হল, তারপর? এরপর কি করবে? নতুন পরিবেশ, নতুন দেশে কোথায় থাকবে, কি করবে?
দেশে যার লেখাপড়া শেষ করে, নিশ্চিত একটা সচ্ছল জীবনযাপন করার কথা, সে এখন ইউরোপের কোন একটি দেশে রিফিউজি হিসেবে বেঁচে আছে।
শিক্ষকরা যাকে নিয়ে ভাবতো যে, এই ছাত্র বিসিএস এ টিকে যাবে। সেই ছাত্র সব ছেড়ে এখন ইউরোপের কোন এক রেস্টুরেন্টে সকাল থেকে রাত পরিশ্রম করে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছে।
আর এদিকে শান্তির পতাকাবাহীদের কর্মকাণ্ডে তিক্ত হয়ে উদার ইউরোপও অন্যদেশের নাগরিকদের মুখের উপর ‘না’ বলে দিচ্ছে। নিজের দেশে নিরাপত্তা নেই, বাঁচার আশা নিয়ে যেই দেশে এসেছিল, সেখানেও থাকার অনুমতি নেই। অবৈধ হয়ে কতদিন ঘুরে বেড়াবে?
নিলয় নীল মৃত্যুর আগে পুলিশের কাছে গিয়েছিল সাহায্যের জন্য। পুলিশ তাকে দেশ ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু দেশ ছাড় বললেই তো দেশ ছাড়া যায় না।
একদিকে মৌলবাদী জঙ্গিরা চাপাতি নিয়ে তাড়া করছে, আরেকদিকে সরকার ৫৭ ধারার খড়গ উঁচিয়ে গ্রেফতারের জন্য তাড়া করছে ব্লগারদের। ৫৭ধারাটা আবার শুধু অমুসলিমদের জন্য। শুধু ইসলাম নিয়ে কিছু বললেই গ্রেফতার, কিন্তু মুসলমানরা অমুলিমদের মন্দির মূর্তি ভাঙলে, খুন করলে কেউ গ্রেফতার হয় না। এমনকি খুনিকে হাতে নাতে প্রমাণসহ ধরিয়ে দেয়ার পরেও তাদের বিচার হয় না।
সেদিন বাংলাদেশের এক পত্রিকায় ব্লগারহত্যা প্রতিরোধে বিশিষ্টজনদের মতামত পড়ছিলাম। তাদের মতে, ব্লগারদের লেখার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী যথাযথ (?) ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই ব্লগার হত্যা অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা সম্ভব হলে তারা মনে করছেন। না, তারা অপরাধীদের আইন অনুযায়ী ‘যথাযথ’ শাস্তির ব্যবস্থার ব্যাপারে কিছু বলেননি। ব্লগাররা হয়তো দেশের এইরকম মাথা বেচা বুদ্ধিজীবিদের মত নয় বলেই তাদের মাথার মূল্য এত বেশি। তাদের মাথায় কোপ দিতে জঙ্গিরা কত নকশা, ছক আঁকে। মাথা বেচাদের মাথার মূল্য নেই বলেই তাদের মাথা নিরাপদ।
ব্লগে লিখে অধিকাংশই মধ্যবিত্ত অথবা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা। উচ্চবিত্তদের দেশ সমাজ এসব নিয়ে না ভাবলেও চলে। আর নিম্নবিত্তরা এসব নিয়ে ভাবার সুযোগ পায় না, তারা প্রতিমুহুর্তে লড়াই করে বাঁচে। আর এই ব্লগাররা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ায়। তাদের বেশিরভাগেরই সামর্থ্য নেই লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে পাড়ি দেয়ার। ব্লগারদের মৃত্যুর পর, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা তাদেরকে সাহায্য করবে বলে ঘোষণা দিলেও, পরবর্তীতে খুব কমই তা বাস্তবায়িত হয়। হ্যাঁ, হাতে গোনা এক দুইজন হয়তো দেশ ছেড়ে একটি সচ্ছল জীবনের নিশ্চয়তা পেয়েছে। এই সৌভাগ্য তো আর সবার হয় না। দেশে বিদেশে বেশির ভাগ ব্লগারই এখন একটি অনিশ্চিত জীবনযাপন করছে। দেশে যারা আছে তারা মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে চলছে, আর বিদেশে যারা আছে, তারা একটি অচেনা রাস্তায় অনিশ্চিত ভাবে হেঁটে চলছে, জানে না তার ভবিষ্যৎ কি।
অথচ দেশে এদের সবারই একটা নিশ্চিত জীবন ছিল। কেউ লেখাপড়া করছিল, বড় হয়ে বড় কিছু হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। কেউ চাকরি করে পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে ছিল। পত্রিকাওয়ালারা লোমহর্ষক কাহিনী খুঁজে, চ্যানেল ওয়ালারা ব্রেকিং নিউজ খুঁজে। কিন্তু এসব ব্লগারদের কথা কয়জন ভাবে?
লেখালেখির জন্য, আদর্শের জন্য, আমরা কি কম ত্যাগ করেছি? আমার এই মুহূর্তে এইচএসসি পরীক্ষার হলে থাকার কথা। নিয়মিত ফলো করছিল আমাকে, দাঁতে দাঁত চেপে বসেছিলাম, বাবা মা তাদের কাল্পনিক ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছিল, মেয়ে যেন অন্তত ইন্টার পরীক্ষাটা দেয়া পর্যন্ত জীবিত থাকে। পরীক্ষা দিয়ে না হয় অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেয়া যাবে। কিন্তু কোথায় পাঠাবে, জানা নেই তাদের। ওই অবস্থায়ও প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম পরীক্ষার জন্য। কিন্তু এরপর যখন শান্তিরদূতেরা দরজায় চাপাতি নিয়ে কড়া নাড়ল, তখন তো আর পরীক্ষার চিন্তা করলে চলে না। অবশেষে দেশ ছাড়লাম, তবে অন্যদেশ যে আমাকে স্বাগত জানাতে বসে আছে তাতো নয়। নিজের দেশে আমার জীবনের নিরাপত্তা নেই। অন্য দেশ কেনও আমাকে আশ্রয় দিবে? এদেশের উপর তো আমার কোন অধিকার নেই। মানবতার খাতিরে ভিসার মেয়াদ বাড়িয়েছে ঠিক, তবে এরপর কি হবে জানা নেই। ইয়ার লস তো হল, এরপরও যে স্কুলে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া চালিয়ে নেয়া যাবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই।
আমি হয়তো অন্য ব্লগারদের চেয়ে বয়সে সবচেয়ে ছোট অবস্থায় এইরকম পরিস্থির সম্মুখীন হয়েছি। অন্যদের কথা জানি না। এখনও মাঝেমাঝে অস্থির লাগে, কলেজ জীবনের মজার স্মৃতিগুলো মনে পড়লে। বন্ধুরা ম্যাসেজ করে তাদের কথা জানায়, তারা কি করেছে, কত ইন্টারেস্টিং ঘটনা ঘটেছে, শেষ বলে দেয়, ‘তোকে খুব মিস করেছি’, তখন ছুটে চলে যেতে মন চায় দেশে, আমার সেই আনন্দের জগতে। কিন্তু আমি যে একজন ৫৭ ধারার ‘অপরাধী’। সব ধরণের অপরাধীরা সোনার বাংলায় নিরাপদ হলেও ৫৭ ধারার অপরাধীদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা। সেই শাস্তি প্রশাসন দিবে নয়তো শান্তিরদূতেরা। তবে শাস্তি তাদের পেতেই হবে, গ্রন্থের কথা অমান্য করে কি করে!
ব্লগারদের অনেকেই দেশে এখন লুকিয়ে আছে, পালিয়ে বেড়াচ্ছে। দেশ থেকে বের হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। কিন্তু নিজের দেশ, নিজের মানুষদের ফেলে হুট করে বললেই তো চলে যাওয়া যায় না।
পরিচিত এক ব্লগার, যে তার পরিবারের একমাত্র ভরসা। তার রোজগারের উপর নির্ভর করে মা-বাবা-ভাই-বোনের জীবন। দিনে আনে দিনে খায় অবস্থা। তাকে নিয়মিত ফলো করা হচ্ছে। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জীবিকার তাগিদে তাকে কাজে বের হতে হচ্ছে। ওদিকে ঘরেও তো নিরাপত্তা নেই। ঘরে এসে কুপিয়ে যাচ্ছে। এই যার অবস্থা সে কিভাবে সব দায়িত্ব ফেলে দেশ ছাড়ার কথা ভাববে? অথচ দেশ ত্যাগ ছাড়া তার জীবন বাঁচানোর আর কোন রাস্তাও নেই।
এমন অনেক ব্লগার আছে, যারা নাস্তিক হওয়ার কারণে পরিবার থেকে আলাদা। নিজের পরিবার যাদেরকে ত্যাজ্য বলে দেয় সেখানে তারা এই অবস্থায় আর কার কাছে আশ্রয় চাইবে?
মেয়েকে বাবা বিয়ে দিতে চায়। আর মেয়ে পড়ালেখা শেষ করতে চায়। প্রথমত বাবার কথার বিরুদ্ধে গিয়ে পড়ালেখা করছে। দ্বিতীয়ত, মেয়ে নাস্তিক, লেখালেখি করে। এসব জানার পর বাড়ি থেকে টাকা আসা বন্ধ। মেয়ে চলছে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে। এই অবস্থায় নিজের খরচ জোগাতে টিউশনি করে। জীবন বাঁচাতে দেশ ছাড়তে হবে। অর্থের যোগান দিবে কে? অর্থ না হয় কোন ভাবে পেয়েই গেলো, দেশ ত্যাগ করতেও সক্ষম হল, তারপর? এরপর কি করবে? নতুন পরিবেশ, নতুন দেশে কোথায় থাকবে, কি করবে?
দেশে যার লেখাপড়া শেষ করে, নিশ্চিত একটা সচ্ছল জীবনযাপন করার কথা, সে এখন ইউরোপের কোন একটি দেশে রিফিউজি হিসেবে বেঁচে আছে।
শিক্ষকরা যাকে নিয়ে ভাবতো যে, এই ছাত্র বিসিএস এ টিকে যাবে। সেই ছাত্র সব ছেড়ে এখন ইউরোপের কোন এক রেস্টুরেন্টে সকাল থেকে রাত পরিশ্রম করে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছে।
আর এদিকে শান্তির পতাকাবাহীদের কর্মকাণ্ডে তিক্ত হয়ে উদার ইউরোপও অন্যদেশের নাগরিকদের মুখের উপর ‘না’ বলে দিচ্ছে। নিজের দেশে নিরাপত্তা নেই, বাঁচার আশা নিয়ে যেই দেশে এসেছিল, সেখানেও থাকার অনুমতি নেই। অবৈধ হয়ে কতদিন ঘুরে বেড়াবে?
নিলয় নীল মৃত্যুর আগে পুলিশের কাছে গিয়েছিল সাহায্যের জন্য। পুলিশ তাকে দেশ ছাড়ার পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু দেশ ছাড় বললেই তো দেশ ছাড়া যায় না।
একদিকে মৌলবাদী জঙ্গিরা চাপাতি নিয়ে তাড়া করছে, আরেকদিকে সরকার ৫৭ ধারার খড়গ উঁচিয়ে গ্রেফতারের জন্য তাড়া করছে ব্লগারদের। ৫৭ধারাটা আবার শুধু অমুসলিমদের জন্য। শুধু ইসলাম নিয়ে কিছু বললেই গ্রেফতার, কিন্তু মুসলমানরা অমুলিমদের মন্দির মূর্তি ভাঙলে, খুন করলে কেউ গ্রেফতার হয় না। এমনকি খুনিকে হাতে নাতে প্রমাণসহ ধরিয়ে দেয়ার পরেও তাদের বিচার হয় না।
সেদিন বাংলাদেশের এক পত্রিকায় ব্লগারহত্যা প্রতিরোধে বিশিষ্টজনদের মতামত পড়ছিলাম। তাদের মতে, ব্লগারদের লেখার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী যথাযথ (?) ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই ব্লগার হত্যা অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা সম্ভব হলে তারা মনে করছেন। না, তারা অপরাধীদের আইন অনুযায়ী ‘যথাযথ’ শাস্তির ব্যবস্থার ব্যাপারে কিছু বলেননি। ব্লগাররা হয়তো দেশের এইরকম মাথা বেচা বুদ্ধিজীবিদের মত নয় বলেই তাদের মাথার মূল্য এত বেশি। তাদের মাথায় কোপ দিতে জঙ্গিরা কত নকশা, ছক আঁকে। মাথা বেচাদের মাথার মূল্য নেই বলেই তাদের মাথা নিরাপদ।
ব্লগে লিখে অধিকাংশই মধ্যবিত্ত অথবা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা। উচ্চবিত্তদের দেশ সমাজ এসব নিয়ে না ভাবলেও চলে। আর নিম্নবিত্তরা এসব নিয়ে ভাবার সুযোগ পায় না, তারা প্রতিমুহুর্তে লড়াই করে বাঁচে। আর এই ব্লগাররা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ায়। তাদের বেশিরভাগেরই সামর্থ্য নেই লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে পাড়ি দেয়ার। ব্লগারদের মৃত্যুর পর, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা তাদেরকে সাহায্য করবে বলে ঘোষণা দিলেও, পরবর্তীতে খুব কমই তা বাস্তবায়িত হয়। হ্যাঁ, হাতে গোনা এক দুইজন হয়তো দেশ ছেড়ে একটি সচ্ছল জীবনের নিশ্চয়তা পেয়েছে। এই সৌভাগ্য তো আর সবার হয় না। দেশে বিদেশে বেশির ভাগ ব্লগারই এখন একটি অনিশ্চিত জীবনযাপন করছে। দেশে যারা আছে তারা মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে চলছে, আর বিদেশে যারা আছে, তারা একটি অচেনা রাস্তায় অনিশ্চিত ভাবে হেঁটে চলছে, জানে না তার ভবিষ্যৎ কি।
অথচ দেশে এদের সবারই একটা নিশ্চিত জীবন ছিল। কেউ লেখাপড়া করছিল, বড় হয়ে বড় কিছু হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। কেউ চাকরি করে পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে ছিল। পত্রিকাওয়ালারা লোমহর্ষক কাহিনী খুঁজে, চ্যানেল ওয়ালারা ব্রেকিং নিউজ খুঁজে। কিন্তু এসব ব্লগারদের কথা কয়জন ভাবে?
লেখালেখির জন্য, আদর্শের জন্য, আমরা কি কম ত্যাগ করেছি? আমার এই মুহূর্তে এইচএসসি পরীক্ষার হলে থাকার কথা। নিয়মিত ফলো করছিল আমাকে, দাঁতে দাঁত চেপে বসেছিলাম, বাবা মা তাদের কাল্পনিক ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছিল, মেয়ে যেন অন্তত ইন্টার পরীক্ষাটা দেয়া পর্যন্ত জীবিত থাকে। পরীক্ষা দিয়ে না হয় অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেয়া যাবে। কিন্তু কোথায় পাঠাবে, জানা নেই তাদের। ওই অবস্থায়ও প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম পরীক্ষার জন্য। কিন্তু এরপর যখন শান্তিরদূতেরা দরজায় চাপাতি নিয়ে কড়া নাড়ল, তখন তো আর পরীক্ষার চিন্তা করলে চলে না। অবশেষে দেশ ছাড়লাম, তবে অন্যদেশ যে আমাকে স্বাগত জানাতে বসে আছে তাতো নয়। নিজের দেশে আমার জীবনের নিরাপত্তা নেই। অন্য দেশ কেনও আমাকে আশ্রয় দিবে? এদেশের উপর তো আমার কোন অধিকার নেই। মানবতার খাতিরে ভিসার মেয়াদ বাড়িয়েছে ঠিক, তবে এরপর কি হবে জানা নেই। ইয়ার লস তো হল, এরপরও যে স্কুলে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া চালিয়ে নেয়া যাবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই।
আমি হয়তো অন্য ব্লগারদের চেয়ে বয়সে সবচেয়ে ছোট অবস্থায় এইরকম পরিস্থির সম্মুখীন হয়েছি। অন্যদের কথা জানি না। এখনও মাঝেমাঝে অস্থির লাগে, কলেজ জীবনের মজার স্মৃতিগুলো মনে পড়লে। বন্ধুরা ম্যাসেজ করে তাদের কথা জানায়, তারা কি করেছে, কত ইন্টারেস্টিং ঘটনা ঘটেছে, শেষ বলে দেয়, ‘তোকে খুব মিস করেছি’, তখন ছুটে চলে যেতে মন চায় দেশে, আমার সেই আনন্দের জগতে। কিন্তু আমি যে একজন ৫৭ ধারার ‘অপরাধী’। সব ধরণের অপরাধীরা সোনার বাংলায় নিরাপদ হলেও ৫৭ ধারার অপরাধীদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা। সেই শাস্তি প্রশাসন দিবে নয়তো শান্তিরদূতেরা। তবে শাস্তি তাদের পেতেই হবে, গ্রন্থের কথা অমান্য করে কি করে!
দেশে একের পর এক একই কায়দায় লেখক,মুক্তমনাদের হ্ত্যা পর আইএস এর দ্বায় স্বীকার করছে।অন্যদিকে প্রধান মন্ত্রী থেকে শুরু করে সরাষ্ট্রমন্ত্রী,প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকতা বিভিন্ন সময় মিডিয়াতে বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে এসব হ্ত্যাকান্ডকে বৈধতা দেওয়ার চেস্টা করছে।এদিকে যুক্তরাষ্ট্র এসব খুনের ঘটনায় বাংলাদেশকে সহায়তার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে।যদিও কিছু হত্যাকান্ডের
উত্তরমুছুনঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের গোযেন্দা সংস্থা কাজ করলেও তেমন সন্তোষজন কোন ফলাফল এখনও আসেনি।তারপরও সন্ত্রাস মোকাবেলায় দুই দেশের একযোগে কাজ করতে সম্মত হওয়ার কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস আছে দাবি করে আবারও বিষয়টি আলোচনায় আনলেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। যদিও আইএস সহ ধর্মীয় জঙ্গিবাদ মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্টি বলে বিভিন্ন সময় কথা উঠেছে।তাহলে কি ধরে নিব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মুখে সন্ত্রাস মোকাবেলায় সহায়তার আশ্বাস আর তলে জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটিয়ে দেশকে অস্থীতিশীল করে তাদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে।
সব কথার শেষ কথা, জাতি আবারও মেধা শূন্যের দিকে ধাবমান।আর এই নাটকের রূপকার বাংলাদেশ সরকার।
উত্তরমুছুন