সুন্দরবন রক্ষার হরতালে একটি মেয়েকে ক্যামেরা হাতে সিগারেট ফুঁকতে দেখা গেল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবিটি ছড়িয়ে পড়লে মেয়েটি তীব্র সমালোচনাও নিন্দার মুখোমুখি হয়। যেন রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রও এতটা পরিবেশ দূষণ করতে পারবে না, যতটা একটি মেয়ে সিগারেট ধরিয়ে করে ফেলেছে।
সিগারেট খাওয়া তো বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। ছেলে মানেই সিগারেট মদ একটু আধটু হলেও খাবে। সিগারেট খায় নি এমন ছেলের সংখ্যা হাতে গোণা কয়েকজন হবে হয়তো। অনেককেই দেখি সিগারেট ফুঁকছে, ধোয়া উড়ছে এমন ছবি ডিএসএলআর ক্যামেরায় তুলে সেসব প্রোফাইল পিকচার দেয়। কাউকে তো সমালোচনা করতে দেখি নি। তবে এই মেয়েটির ছবি নিয়ে এত নিন্দের কারণ কী? মেয়েটি কি এমন কিছু করেছে যা সমাজে নিষিদ্ধ? এর উত্তর একইসাথে হ্যাঁ এবং না। কারণ সিগারেট খাওয়া নিষিদ্ধ না হলেও মেয়েটির জন্য নিষিদ্ধ। বঙ্গবন্ধুর বেশ কয়েকটি বিখ্যাত ছবির মধ্যে অন্যতম হল, পাইপ হাতে মুজিব। মুজিব কন্যা’র যদি এমন কোনও ছবি পাওয়া যায়? প্রধানমন্ত্রীত্ব যাবে, বঙ্গবন্ধু তার মেয়েকে সুশিক্ষা দিতে পারেননি বলে তিনিও সমালোচিত হবেন। নিজের পাইপ হাতে ছবি’তে কিন্তু তার কোনও সম্মানহানি হয় নি, মেয়েরটিতে হবে। এ কেমন নিয়ম?
সুশীল সমাজ মেয়েটিকে বোঝাচ্ছেন, সিগারেট খাওয়া কতটা ক্ষতিকর। যেন এই প্রথম সবাই মিলে বুঝতে পারলেন, সিগারেট খাওয়া ক্ষতিকর কিছু! রাস্তাঘাটে এত পুরুষ সিগারেট খায়। কই, কেউ তো কখনো তাদের স্বাস্থ্য সচেতন করতে আসেন না, মেয়ে হলেই উপদেশ দিতে ছুটে আসতে হবে? মজার ব্যাপার হল- সিগারেট বলে নয়, মেয়েদের যেকোনো কাজেই পুরুষেরা ছুটে আসে উপদেশ দিতে। দুপায়ের ফাঁকের অঙ্গটির কারণে নিজেকে সকল বিষয়ে বোদ্ধা ভেবে ফেলেন বোধহয়। যখন বিদেশী সিগারেট আমদানী করা হয়, তখন আপনাদের কেন মনে হয় না দেশের, সমাজের জন্য ক্ষতিকর এই জিনিসটির আমদানী বন্ধ করা উচিত? তামাক চাষ বন্ধের আন্দোলনে আপনাদের পাওয়া যায় না কেন?
কেউ কেউ বলছেন, ‘সিগারেট খেলেই কি পুরুষ হওয়া যায় ? কাজেকর্মে পুরুষ হও।’ হেসে বাঁচি না। তাদের ধারণা মেয়েটি পুরুষ হতে প্যান্ট শার্ট পরেছে, পুরুষ হতেই সিগারেট খাচ্ছে। যেন পুরুষ হওয়া গর্বের কিছু! শিশ্ন আর অণ্ডকোষ নিয়ে তাদের গর্বের শেষ নেই। প্যান্টশার্ট পরে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, তাই পরেছে। সিগারেট খেতে ইচ্ছে হয়েছে তাই খেয়েছে- এ ব্যাপারটা তাদের চিন্তায় আসে না কেন? প্যান্ট,শার্ট, সিগারেট এসবে পুরুষের একচেটিয়া অধিকার এমন ধারণার কারণ কী?
সিগারেট হাতে মেয়ের জন্য ‘সিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’ এই উপদেশ নিয়ে হাজির হয়ে যায় লক্ষ লক্ষ শুভাকাঙ্ক্ষী । ইভটিজিং, ধর্ষণ, নির্যাতনের শিকার নারীদের পাশে কেন শুভাকাঙ্ক্ষীরা সংখ্যায় নগণ্য হয়?
সিগারেটে আগুন জ্বালিয়ে পুরুষতন্ত্র ধ্বংস করা যায় না, বিপ্লব হয় না- এসব আমি জানি। আমি সিগারেট খাওয়া’কে ভালো বলছি না। কিন্তু একটি মেয়ের ক্ষেত্রে, মেয়েটি কী খাবে, কী পরবে এসব নিয়ে সমাজের মাথা ঘামানো, চোখ রাঙানোর স্বভাবটির প্রতিবাদ করছি। সিগারেট যেহেতু বাংলাদেশে নিষিদ্ধ কিছু নয়, তাই ছেলেমেয়ে যেকেউ চাইলে সিগারেট খেতে পারে। কিন্তু একজন ছেলে ধূমপায়ীকে কেউ খারাপ চরিত্রের অধিকারী ভাববে না। কিন্তু একজন মেয়ে ধূমপায়ীর শুধুমাত্র ধূমপান করে বলে চরিত্রের দোষ ধরা হবে কেন? ধূমপানের সাথে ছেলের চরিত্রের সম্পর্ক না থাকলে মেয়ের চরিত্রের সম্পর্ক থাকে কী করে? একই কাজ ছেলে করলে এক নিয়ম, মেয়ে করলে ভিন্ন নিয়ম হবে কেন?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন