সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

চুল সমাচার

অনেকদিন পর লিখতে বসেছি। নতুন স্কুলে ভর্তি হলাম, মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগছে, তাই লেখার সময় হয়ে উঠছিল না। চুল লম্বা হয়ে গেছে, কাটানোর সময় পাচ্ছিলাম না। দুদিন ছুটি পাওয়াতে আজ গিয়েছিলাম চুল কাটাতে। চুল কাটানো নিয়ে আমার জীবনে অনেক ধরণের অভিজ্ঞতা হয়েছে। দেশে ছোটবেলা বাবার সাথে যেতাম সেলুনে চুল কাটাতে। একটু বড় হতেই জানতে পারলাম সেলুনে যেহেতু পুরুষ নাপিত থাকে কাজেই আমার সেলুনে চুল কাটা চলবে না। পুরুষ নাপিত একজন মেয়ের চুল কাটছে, ব্যাপারটা আমার ‘অতি উন্নত’ সমাজ ভালোভাবে নেয় না। কিন্তু আমার চুলের কাট তো পার্লারের মেয়েরা জানে না। একজনকে দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করাতে পার্লারে নিয়ে আমি নির্দেশনা দিয়ে তার চুল কাটালাম। উদ্দেশ্য, তারটা যদি ঠিকভাবে কেটে দিতে পারে তবে আমিও কাটাতে বসব। কিন্তু না, পার্লারে আমি যেমনটা চাচ্ছিলাম সেভাবে কাটতে পারলো না। তাই আমি সেই সেলুনেই ফিরে গেলাম। সেলুনের নাপিতেরা আমাকে ছেলে হিসেবে নিয়ে চুল কাটতো। কারও কোনও সমস্যা হতো না।
আজকে একটা ইন্ডিয়ান সেলুনে গিয়েছিলাম চুল কাটাতে। এখানে চুল কাটার দাম অনেক। একটু কম দামে কাটতেই মূলত ইন্ডিয়ান সেলুনে যাওয়া। এখানে ছেলে মেয়ে সবাই চুল কাটাচ্ছে। ছেলে নাপিত যেমন আছে, মেয়ে নাপিতও আছে। ছেলের চুল মেয়ে কাটছে, মেয়ের চুল ছেলে। এতে কারও কোন সমস্যা হচ্ছে না।
আমার চুল যে কাটলো সে জানে আমি মেয়ে। বয় কাট দিতে বললাম। দিলো। বয় কাটের দামটা অন্যগুলোর তুলনায় কম আর মেয়েদের জন্য কিছু কাটের নাম দেখলাম, সেসব অনেক টাকার। কাটানো শেষে বিল দিতে গিয়ে হঠাৎ ক্যাশিয়ারের মনে হল আমি মেয়ে। পরমূহুর্তেই সে আমার কাছ থেকে বয় কাটের তিনগুন দাম চাইল। জিজ্ঞেস করলাম, ‘বয় কাটের দাম তো এত না, আপনি তো একটু আগেই সেই দাম নিচ্ছিলেন। এখন আবার তিন গুন দাম চাইছেন কেনও?’ সে বলল ‘ওটা তো ছেলেদের জন্য। মেয়েদের জন্য অন্য দাম।’ বললাম, ‘দাম তো নির্দিষ্ট হবে। একই কাট ছেলের মাথায় হলে এক দাম, মেয়ের মাথা হলে অন্য দাম কেনও হবে? আপনারা তো কাটের দাম নিবেন, আমি ছেলে নাকি মেয়ে তাতে আপনাদের কী আসে যায়?’ জানালো, এটাই নাকি তাদের নিয়ম। বললাম, ‘এই কাট যদি কোন ট্রান্স জেন্ডারের মাথায় যায় তাহলে কোন দাম দিয়ে তার মাথা ভেঙে খাবেন সেটা তো লিখেন নি’। তারপর সে বলল, ট্রান্সজেন্ডার নাকি মানুষের মনের ভুল। একজন হ্যান্ডসাম,শিক্ষিত লোকের মুখে একথা শুনে তো আমি অবাক! তাকে জানালাম, সে যেই দেশে বসবাস করছে এখানে ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকারের পক্ষে আইন রয়েছে। এমনকি তার নিজের দেশ ইন্ডিয়াতেও ট্রান্সজেন্ডারদের বৈধতা দেয়া হয়েছে। কোনও উত্তর খুঁজে না পেয়ে বলল, তাদের নিয়মই এটা। নিয়মের বাইরে সে যেতে পারবে না। নিয়ম চেইঞ্জ করার পরামর্শ দিয়ে বেরিয়ে এলাম।
প্রথমত, একই কাট ছেলের মাথায় দিলে এক দাম, মেয়ের মাথায় সেটার তিনগুন দাম কীভাবে হয় সেটা আমার কোনও ভাবেই বোধগম্য হলও না। আর দ্বিতীয়্ত, ওই সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত লোকের মুখে ট্রান্সজেন্ডারের সংজ্ঞা শুনে আমাদের সমাজের অধিকাংশের মানসিকতা আসলে কেমন, সেটা বুঝলাম।
আমার ছোট চুল নিয়ে আমি যথেষ্ঠ স্বাচ্ছেন্দ্যে থাকলেও আমার আশেপাশের মানুষ প্রতিনিয়ত আমার ছোট চুলের ব্যাপারে তাদের ঘোর আপত্তি প্রকাশ করতো। বলতো, এমন ছোট চুল রাখলে আমার ক্লাসে ছেলেরা আমাকে পছন্দ করবে না। নিজেকে অস্বস্তিতে রেখে অন্যের চোখে সুন্দর হওয়ার কাজটা আমার দ্বারা কখনোই হয়ে উঠে নি। বিশাল চুলের যত্ন করার সময় ও ইচ্ছে কোনটাই আমার নেই। আর কারও চোখের সুখের জন্য আমি আমার মাথাকে উকুনের আবাস ভূমি বানাতে রাজি না।
অন্যের কাছে ভালো মেয়ে খেতাব পেতে আমাদের দেশের মেয়েরা প্রচন্ড গরমেও মাথায় কাপড়ের পাহাড় বানিয়ে চুল ঢাকছে, বোরখা পরছে। নিজের স্বাচ্ছন্দ্য অনুভবের বিষয়টি সম্পর্কেই তাদের ধারণা নেই। একটিই জীবন, সেটাই কাটিয়ে দিচ্ছে অন্যের ইচ্ছেকে মেনে নিয়ে, নিজে কষ্টে থেকে অন্যকে সুখী করে। সমাজে ‘ভালো মেয়ে’ হওয়াটা জরুরী কিনা!

বুক নিয়ে লজ্জা!



বুক নিয়ে লিখেছিলাম মাসখানেক আগে। মেয়েদের বুক নিয়ে কিসের এত লজ্জা, কী কারণে এ লজ্জা- এসব প্রশ্ন প্রায় আমার মাথায় ঘুরপাক খায়।

একবার কোচিং ক্লাসে কারেন্ট ছিলও না, আইপিএস নষ্ট হয়ে গেছে। প্রচন্ড গরমে ক্লাস করছি। ছেলেরা শার্টের বোতাম খুলে বসেছে। অন্যদিকে মেয়েরা সেলোয়ার কামিজ, ওড়না, হিজাব আরও ভালোভাবে পেঁচিয়ে বসেছে। কারণ ঘামে ভিজে যদি ভিতরের কিছু দেখা যায়! আমি শার্টের একটা বোতাম খুলে বসলাম দেখে স্যার জিজ্ঞেস করলেন, কী ইতু? খুব গরম লাগছে নাকি? আমি আরও দুটো বোতাম খুলতে খুলতে উত্তর দিলাম, ‘হ্যাঁ স্যার’। হয়তো ভেবেছিলেন, আমি স্যারের প্রশ্নে বিব্রত হয়ে বোতামটা লাগিয়ে নিবো। কিন্তু উল্টো আমাকে আরও দুটো বোতাম খুলতে দেখে স্যার-ই মনে হয় খানিকটা বিব্রত হয়েছিলেন।

আমি আমার শরীর নিয়ে একটুও লজ্জিত নই। ছেলে এবং মেয়ে বেড়ে উঠতে থাকলে ছেলেটির স্বাধীনতা বাড়তে থাকে, আর মেয়েটির কমতে থাকে। মেয়েটির স্বাধীনতা কমে মেয়েটির শরীরের কারণে। শরীর নিয়ে ভয়। এই বুঝি কেউ দেখে ফেলল, বাজে ইঙ্গিত করল, ধর্ষন করতে এলো। আমি ভেবে পাই না সারাক্ষণ এসব চিন্তা মাথায় নিয়ে মেয়েরা বাঁচে কীভাবে?

অনেকের কাছে শুনি, নারী স্বাধীনতা মানেই কি শরীরের স্বাধীনতা? অর্থনৈতিক স্বাধীনতা চাও, শিক্ষার অধিকার চাও ঠিক আছে। কিন্তু শরীরের স্বাধীনতা চেও না। শরীরটা পুরুষের কাছে বন্ধক রেখে বাকি স্বাধীনতা চাও। কিন্তু আমার মতে নারী যতদিন নিজের শরীরকে পুরুষতান্ত্রিক শেকল থেকে মুক্ত করতে না পারছে, ততদিন নারীর কোনও স্বাধীনতাই আসবে না। ধরুন, একজন শিক্ষিত মেয়ে। অর্থনৈতিক ভাবে স্বাধীন। সেও কিন্তু রাতের অন্ধকারে, ভীড়ের মাঝে পুরুষের নষ্ট মানসিকতা থেকে রক্ষা পায় না। ওই সচ্ছল মেয়েটিও ধর্ষনের শিকার হলে তার অন্যসব পরিচয় মুছে গিয়ে তার পরিচয় হবে ‘একজন ধর্ষিতা’। আর যতদিন পুরুষ নারীর শরীরকে নিজেদের সম্পত্তি বলে মনে করছে ততদিন এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।

আমি বাসায় গরমকালে সেন্ডোগেঞ্জি পরি। ছোটবেলায় এটা নিয়ে কারও আপত্তি না থাকলেও ধীরে ধীরে পরিবারের সবার আপত্তি শুরু হল। এই পোশাক পরে দরজা খুলতে যাবে না। একদিন বাসায় এক আত্মীয় এলে আমাকে বলা হল, ‘যাও গিয়ে নমস্কার করে এসো’। আমি তো আমার পোশাকেই রওনা হলাম। মা থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘উপরে কিছু একটা পরে নাও’। আমি রেগে গিয়ে বললাম, ‘যেই লোকের আমাকে সেন্ডো গেঞ্জি পরা অবস্থায় দেখলে মাথায় বদ মতলব আসতে পারে বলে তোমার মনে হয় তাকে আমি নমস্কার করতে যাবো? অসম্ভব’।

একদিন মা বললেন, ‘তুমি এখন বড় হচ্ছো, তোমার বাবার সামনে এধরণের পোশাক পরে চলা ঠিক না’ জিজ্ঞেস করলাম, ‘বাবা কি মাঝেমাঝে ভুলে যান যে আমি তার সম্পর্কে মেয়ে হই?’ এরপর থেকে মা আমাকে এসব বিষয় নিয়ে কিছু বলতে কিছুটা ভয় পেতেন সম্ভবত। কারণ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আমাকে দিয়ে কোন কিছু করাতে বাধ্য করা সম্ভব নয়। আর প্রশ্নের কোনও উত্তর দেয়াও সম্ভব নয়।

আমার ছোট বোনকেও আস্তে আস্তে ঢেকে চলার পরামর্শ দেয়া শুরু হল। মা’র খুব চিন্তা, বড় বোনের কাছ থেকে শিখে যদি ছোটজনও নষ্ট হয়ে যায়। ছোটবোনকে মা ঢেকে চলার উপদেশ দিতে গেলেই সে আমাকে ডাকতো। আর আমাকে ডাকা মানেই প্রশ্ন। কার জন্য আমাকে ঢাকতে হবে? তার কী কী সমস্যা হয়? তার সমস্যার জন্য আমাকে কেন কাপড়ের বস্তা জড়াতে হবে? মেয়েরা যদি এখন থেকে ছেলেদের ঠোঁট বুক কোমরের দিকে অস্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে থাকে, তবে ছেলেরাও কি বোরখা হিজাব জাতীয় ঢেকে রাখা পোশাক পরবে? নাকি নিজেকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করতে ব্যস্ত হবে?

যেসব মেয়েরা নিজের শরীর নিয়ে অত্যন্ত লজ্জিত, তারা কি একবার এসব প্রশ্ন ভেবে দেখবেন? যারা আপনাকে কাপড়ের বস্তা পেঁচাতে বাধ্য করে তাদের কাছ থেকে একবার এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইবেন?

অলম্পিকের ভারতীয় প্রতিযোগী দীপা কর্মকারের ছবি দিয়ে এক বাংলাদেশী মুসলমান ছেলে পোস্ট দিয়েছে, দীপা নাকি অশ্লীল সব ড্রেস পরে খেলছে। একজন বাঙালি হিসেবে ব্যাপারটা নাকি সে মেনে নিতে পারছে না, সে বাঙালি হিসেবে লজ্জা পাচ্ছে। সাধারণত এদেশীয় মুসলমানরা মনে করে, তারা আগে মুসলমান পরে বাঙালি। এখানে মেয়েটির ড্রেস নিয়ে দুটো জ্ঞানের বাণী শোনাতে নিজের মুসলমান পরিচয়কে পিছনে রেখে বাঙালি পরিচয় নিয়ে হাজির হয়েছেন ওই অসভ্য মালটি।

ফেসবুকে একজন প্র্যাগনেন্ট নারী তার পেটের ছবি দিয়ে জানিয়েছেন, ‘সাত মাস চলছে’। ছবির কমেন্টে দেখলাম ওই নারীকে গালাগাল দিচ্ছে, ছবি সরিয়ে নিতে বলছে। ছবিটি নাকি অত্যন্ত অশ্লীল। বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে এমন ছবিও নাকি ভয়ংকর অশ্লীল। যাদের চিন্তাচেতনা অন্ডকোষ দিয়ে পরিচালিত মস্তিষ্ক দিয়ে নয়, তারা সব কিছুতেই অশ্লীলতা খুঁজে পাবেন। স্বাভাবিক।

কিন্তু কোনও অসুস্থ চিন্তা চেতনার মানুষের ভয়ে কেন আমি নিজেকে অস্বস্তিতে রেখে শরীরে কাপড়ের পাহাড় জড়াব? বুক ওড়না দিয়ে ঢেকে রাখা, মাথা কাপড়ের বস্তা দিয়ে পেঁচিয়ে রাখা, কাপড়ের উপর আবার বোরখা পরে পুরা শরীর ঢাকা। এত ঢাকাঢাকির কারণ আমি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারি না।

দেশে হিজাবের পরিমাণ বাড়ছে। হিজাব যেন একটি সংক্রামক ব্যাধি। একজন পরলে তার কাছ থেকে শিখে আরেকজন পরছে। এখন নাকি বোরখা নামক ব্যাধিতেও আক্রান্ত হচ্ছে দেশের মেয়েরা। হিজাব যদি সংক্রামক হয়, তবে নিজের শরীর নিয়ে লজ্জা না থাকা কোনও মেয়ে যদি তার ব্রা পরা ছবিটি প্রকাশ করে তবে কি অন্য মেয়েরাও এতে সাহস পাবে? এটিও সংক্রামক হবে? লজ্জা ভাঙবে? হয়তো কেউ কেউ সাহস পাবে, নিজের শরীর নিয়ে আর লজ্জিত হবে না। যদিও ‘ব্যাধিই সংক্রামক, স্বাস্থ্য নয়’ তবুও মেয়েরা আর নিজের শরীর নিয়ে লজ্জিত হচ্ছে না, ভয় পাচ্ছে না, স্বাধীন জীবন উপভোগ করছে এমন একটি সুন্দর সমাজের স্বপ্ন আমি সবসময় দেখি।

পাকিস্তান থেকে মুক্ত হয়েছি, ধর্মান্ধতা থেকে নয়

প্রতিবার যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকরের পর ফাঁসির পক্ষে বিপক্ষে মতভেদের সৃষ্টি হয়। যারা যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির বিপক্ষে তবে নাস্তিকদের ফাঁসি-কতল চান তাদের কথা বলছি না। যারা মানবতাবাদী, যারা মনে করেন প্রত্যেক মানুষের বাঁচার অধিকার আছে আমি তাদের কথা বলছি।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে এ নিয়ে কম আলোচনা তর্ক বিতর্ক হয় নি। এমনই এক আলোচনায় একজন বলছিলেন, ‘এখন যদি বাংলাদেশ রাষ্ট্র থেকে চট্টগ্রাম মুক্ত হয়ে নিজেদের স্বাধীনতা চায় তবে তুমি কি এর পক্ষে থাকবে নাকি বিপক্ষে?’
বললাম, ‘বিপক্ষে’।
‘ঠিক একই অপরাধটাই করেছিল ৭১ সালে জামায়েত শিবিরের নেতারা। তারা পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল, তাই আজকে আওয়ামীলীগ এটাতে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়ে তাদেরকে ফাঁসি দিচ্ছে।’
আমি সাথে সাথে আপত্তি জানালাম। তাকে জানালাম যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা না চাওয়ার জন্য তাদেরকে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে না। ৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে তারা নিরীহ বাঙালীদের উপর যে বর্বরতা করেছে, তাদের সেসকল মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হচ্ছে।

এসব যুদ্ধাপরাধীরা কেবল ৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেই ক্ষান্ত হয় নি। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে দেশে এসে মেজর জিয়ার শাসনামলে পুনর্বাসিত হয়ে বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস না করে স্বাধীন দেশে তারা দেশবিরোধী রাজনীতি করেছে। বড় রাজনৈতিক দলগুলোর আশ্রয়ে, ধর্মভীরু জনগণের সহানুভূতি’কে কাজে লাগিয়ে তারা আজ অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ভাবে যথেষ্ট পরিমাণ শক্তিশালী। তারা তাদের মৃত্যুকে শহীদি মৃত্যু বলে ঘোষণা দিলেও ফাঁসি থেকে বাঁচতে কিন্তু কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছে। শেষপর্যন্ত ফাঁসি আটকাতে না পেরে শহীদি মৃত্যুর সান্ত্বনা নিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় হয়েছে। তারা মনে করে, ৭১এর মুক্তিযুদ্ধে তারা ইসলাম রক্ষার জন্য গণহত্যা করেছে। একইভাবে বর্তমানে তাদের ফাঁসিকে তারা ইসলামের জন্য মৃত্যু বলেই মনে করে।

যদিও আমি মনে করি প্রত্যেক মানুষেরই বাঁচার অধিকার আছে, অপরাধী অনুতপ্ত হলে তার সাজা কমিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনের অধিকার থাকা উচিত। কিন্তু এ মৃত্যুতে আমি কোনোভাবেই দুঃখিত নই। এসকল অপরাধীরা মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত তাদের অপরাধ স্বীকার করে নি, তাদের কৃত কর্মের জন্য তারা মোটেই অনুতপ্ত নয়। মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও কাদের মোল্লা‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়ে গেছে। কামারুজ্জামানের মৃত্যুর পর তার পরিবার মিডিয়ায় ‘ভি’ চিহ্ন প্রদর্শন করেছে। সাকা-মুজাহিদ ক্ষমা চাওয়ার নাটক করে একদিন বেশি বাঁচার আশা করেছিল। কিন্তু যখন দেখল এতে কাজ হচ্ছে না, তখন তার পরিবারের সদস্যরা বাইরে এসে জানিয়ে দিলো তাদের বাবা ক্ষমা চায় নি। এসব ভয়ংকর অপরাধীদের যদি কোনোভাবে ক্ষমা করা হয় তবে ভবিষ্যতে সরকার বদলের পরই তারা জেল থেকে মুক্ত হয়ে হয়তো ট্রাইব্যুনালের বিচারকার্যের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেক সদস্যকে হত্যা করবে। বিচার চলাকালীনই কিছু সাক্ষীকে হত্যা করা হয়েছে, আহত করা হয়েছে। কাজেই যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি মানবতা দেখানোর কোনও কারণ আমি খুঁজে পাই না।
তবে প্রশ্ন হল, এই কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দিলেই কি দেশের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? জঙ্গিবাদ নির্মূল হবে? জামায়েত নিষিদ্ধ হলেই কি দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চিরতরে মুছে যাবে? না।

কিছুদিন আগে ইউটিউবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি টেলিফিল্ম দেখছিলাম। এটাকে টেলিফিল্ম না বলে ডকুমেন্টারি ফিল্মও বলা যায়। কারিগর নামে পরিচিত এক লোক তার গ্রামে মুসলিম ছেলেদের মুসলমানি করাতেন। ৭১এ গ্রামে গ্রামে যখন হিন্দুদের হত্যা করা হচ্ছিল, তখন কারিগর ও তার স্ত্রী মিলে একটি বুদ্ধি বের করলেন। তারা রাত জেগে সকল হিন্দুদের একটি মুসলিম নাম বানিয়ে লিস্ট করলেন। পাকিস্তানি মিলিটারি এলে কারিগর তাদেরকে লিস্টটি দিয়ে জানালেন এরা সবাই মুসলিম, তিনি নিজে এদের মুসলমানি করিয়েছেন। কথার সত্যতা যাচাই করতে মিলিটারিরা তাঁকে কোরান মাথায় নিয়ে একথা বলতে বলল। তিনি বললেন। ওই গ্রামের অনেক হিন্দুই নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে কোরান মাথায় নিয়ে মিথ্যে বলার কারণে তাঁকে এক ঘরে করা হয়। স্বাধীন দেশে বিচার বসিয়ে তাঁকে অপমানিত করা হয়। আসলে আমরা পাকিস্তান থেকে মুক্ত হলেও সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা থেকে মুক্ত হতে পারে নি।

৪৪ বছর ধরে যেই জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িক বীজ বপন করা হয়েছে তা এত সহজে দমন হওয়ার নয়। মুক্তমনা, সংখ্যালঘুদের হত্যার পর সরকারের ভূমিকায় আমি হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু গুলশানের ঘটনার পর জঙ্গি দমনে সরকারের ভূমিকা কিছুটা আশা জাগিয়েছে। যদিও জানি যে আবার একজন মুক্তমনাকে হত্যা করা হলে নির্লজ্জ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিহতের লেখা খতিয়ে দেখার বিষয়কে গুরুত্ব দিবেন। হাসিনা জানাবেন, লেখার কারণে মেরে ফেললে তার সরকার এর দায় নিতে পারবে না। ঠিক এ কারণেই স্বাধীন দেশে যুদ্ধাপরাধীরা রাজনীতি করার সাহস পেয়েছিল। আমাদের সমস্যা হল, আমরা এক পা এগিয়ে গেলে আবার তিন পা পিছিয়ে যাই।

দেশ নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখতে চাই, স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখতে চাই। তাই যুদ্ধাপরাধীদের রায় কার্যকরে সরকারের সাহসী ভূমিকার প্রশংসা করার পাশাপাশি সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম বাতিলের দাবী জানাই, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক, মুক্তমনা-সংখ্যালঘু হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হোক, ভিন্নমতের মানুষেরাও স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার পাক।

মেয়েদের ফুটবল নাকি মেয়েরাই ফুটবল?

দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনা নারী ফুটবলারদের লোকাল বাসে কুরুচিকর মন্তব্যের মুখোমুখি হওয়া নিয়ে চারদিকে আলোচনা দেখে আমার ক্রিকেট খেলার সময়ে আমাকে এবং আমার খেলোয়াড় বান্ধবীদের কী ধরনের পরিবেশ মোকাবেলা করতে হতো সেসব মনে পড়ে গেল।

খেলাধূলা ব্যাপারগুলো মেয়েদের বিষয় না- সোজাসাপটা এটাই মনে করা হয় আমাদের সমাজে। মেয়েরা বড়জোর পুতুল খেলা, এক্কা দোক্কা এসব খেলতে পারে, তবে ক্রিকেট ফুটবল তো একদমই না! ওসব ছেলেদের খেলা। আমার ক্রিকেট ক্লাবে মেয়ের সংখ্যা ছিল ছেলেদের ১০ ভাগের এক ভাগ। অধিকাংশ মেয়েদের খেলার সরঞ্জাম ঠিকমত ছিল না। না, আর্থিক সমস্যার জন্য নয়। মেয়ের খেলার পেছনে টাকা খরচ করাটা বাবা-মায়েরা অপচয় মনে করে বলেই তাদেরকে ঠিকমত সরঞ্জাম কিনে দেয়া হত না। অনেকেই তাদের বড় ভাইদের খেলার সরঞ্জাম নিয়ে খেলত।

খেলাশেষে মেয়েরা খেলোয়াড়ের পোশাকে বাড়ি ফেরার সময় নানান অশ্লীল মন্তব্য ও অঙ্গভঙ্গির মুখোমুখি হতো। এ অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে কয়েকজন বোরকা পরে মাঠে আসতো এবং খেলার পর বোরখা চাপিয়ে বাড়ি ফিরত। বাংলাদেশে একজন নারী খেলোয়াড়ের কী ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করে টিকে থাকতে হয়, সেসবই আমি নিজে দেখেছি বলে সেদিন নারী ফুটবলারদের সঙ্গে যা ঘটেছে তা আমাকে মোটেই অবাক করেনি। আমাদের দেশে শিক্ষিত-অশিক্ষিত অধিকাংশের কাছেই ‘মেয়েদের খেলাধূলা’ শব্দটি একটি হাস্যরসাত্মক শব্দ। “মেয়েরা খেলবে? খেলতে হলে শক্তি লাগে, মেয়েদের খেলার শক্তি আছে নাকি, মেয়েদের শরীর তো নরম। খেলার জন্য শক্ত বডি লাগে। কাঠের বল একবার লাগলেই তো তারা চিত”। ২০৬টি হাড় ভাঙার মত ব্যাথা সহ্য করে, পেলেপুষে বড় করে মুখ ফুটার পর তাদের মুখে এ ধরনের মন্তব্য শুনলে ইচ্ছা করে অণ্ডকোষ বরাবর লাথি মেরে বুঝিয়ে দেই, নরম কী জিনিস আর চিত হওয়া কাকে বলে।

একদল ছোটবেলা থেকেই ব্যাটবল হাতে নিয়ে মাঠে ঘুরে বেড়ানোর স্বাধীনতা উপভোগ করে, আরেকদল শত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে গিয়ে খেলতে আসে। তাহলে দুজনের খেলায় পার্থক্য তো থাকবেই। ক্রিকেটার সালমা খাতুনের একটি ইন্টারভিউ থেকে জেনেছি, তাদের প্র্যাকটিসের জন্য কোনও মাঠ পর্যন্ত বরাদ্দ নেই, ঠিকমত স্পন্সর পাওয়া যায় না। মেয়েদের কোনও খেলা টিভিতে দেখানো হয় না। ফেসবুকে পুরুষ ক্রিকেটারদের ছবির পোস্টে লাখ লাখ লাইক-কমেন্টের বন্যা। ‘মাশাল্লা ভাই, আপনি এভাবেই খেলে যান’ আর মেয়েদের খেলার কোনও ছবি পোস্ট করলে, ‘চেহারা তো কামের বেটির মত’ ‘**গুলা খুব সুন্দর’ ‘ওইগুলা এত বড় কেন?’। মেয়েরা কেমন খেলছে বা খেলায় উৎসাহ দেয়ার ধারে কাছেই কেউ যায় না! কারণ ‘মেয়েরা আবার কেমনে ক্রিকেট খেলবে?’

কিছুদিন আগে ঢাকায় মেয়েদের ম্যারাথন নিয়ে বিবিসির একটি রিপোর্টের কমেন্ট সেকশন দেখে বমির উদ্রেক হয়েছিল। মানুষের চিন্তাধারা এত নোংরা কীভাবে হয়? একজন সুস্থ মানুষ কীভাবে এমন মন্তব্য করতে পারে? প্রোফাইল ঘাঁটলে দেখা যাবে তাদের বেশিরভাগই শিক্ষিত, চাকরি জীবনে প্রতিষ্ঠিত, সমাজে সম্মানিত ব্যক্তি। ভেবেছিলাম তাদের কমেন্টের স্ক্রিনশট নিয়ে যদি তাদের ওয়ালে পোস্ট করি তাহলে কেমন হবে? লজ্জা হবে নিশ্চয়ই? তারপর আবার ভাবলাম, লজ্জা হবে কীভাবে? আমাদের দেশের অধিকাংশ পুরুষেরা তো এমন চিন্তাধারাই লালন করে।

এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে কিছুদিন আগে। মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় রেজাল্ট ভালো করেছে। এইচএসসির ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিং করানো হয়। যেহেতু স্টুডেন্টের তুলনায় পাবলিক ভার্সিটির সংখ্যা নগন্য, তাই বেশির ভাগ ছাত্ররা দেশের প্রায় সব ভার্সিটিতেই পরীক্ষা দেয়। আমার বান্ধবীরা এবার এইচএসসি দিয়েছে। অনেকেই জানিয়েছে, নিজেদের শহরের বাইরে পরীক্ষা দেয়ার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে তাদের। ভার্সিটি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ঢাকার ভালো কোনও কোচিংয়ে ভর্তি করানো হচ্ছে না। মেয়ে মানুষ, কোথায় থাকবে, কী করবে এসব নিয়ে বাবা মায়ের চিন্তা। ছেলেরা কিন্তু বন্ধুবান্ধব দলবল সমেত কিংবা একা মেসে থেকে কোচিং করছে, নিজেদের শহর থেকে অনেক দূরে এসে সেরা কোচিং সুবিধাটুকু নিচ্ছে। আমার এক বান্ধবী জানালো, সে নিজ শহরের বাইরে অন্য শহরেও পরীক্ষা দিবে। যেখানে চান্স পাবে, সেখানেই পড়বে। তারা বাবা-মায়ের এতে কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু আপত্তি সমাজের মানুষের। আত্মীয়-প্রতিবেশিরা তার বাবা-মাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে, মেয়েকে দূরে একা ছেড়ে পড়ানো উচিত না। এক্ষেত্রে নিরাপত্তা সমস্যাটাই আমার কাছে প্রধান মনে হয়েছে। আবার অনেক বাবা মায়েরা পড়ালেখা চলাকালীন অথবা অনার্সটা পাশ হলেই ভালো পাত্র পেয়ে গেলে বিয়ে দেয়ার প্ল্যান করেন। তাই মেয়েদের ভালো ভার্সিটিতে ভর্তির ব্যাপারে আগ্রহী নন। এভাবে এইচএসসিতে দারুণ রেজাল্ট করা অনেক মেয়েরই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। ছেলেরা যখন ক্যারিয়ার শুরু করে, ঠিক সেসময়েই একটি মেয়ের ক্যারিয়ারের ইতি ঘটে বিয়ের মাধ্যমে।

চমক হাসানের ফেসবুক পেজে একটি পরিসংখ্যান পেলাম। সেটি অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭৪ লাখ। এদের মধ্যে নারী ২১%, পুরুষ ৭৯%। নারীর সংখ্যা এত কম শুনে অনেকেই রিপোর্টিকে নকল মনে করতে পারেন। রিপোর্টটির সত্যতা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীর সংখ্যা যে ২১-২৫ শতাংশের বেশি নয়, এই তথ্যে কোনও ভুল নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীরা নানাভাবে হেনস্থার শিকার হয়। নকল ছবি, নকল আইডি বানিয়ে অনেক নারীদের বিব্রত করা হয়। আর নারীদের ইনবক্সে যা খুশি তাই লেখার স্বাধীনতা যেন সব পুরুষের মৌলিক অধিকার। এসব কারণে নারীদেশ একটি বড় অংশ ফেসবুক থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পছন্দ করেন। বাইরের জগতে নারীকে ধর্ষণ, তথাকথিত সম্ভ্রমহানির(?) ভয় দেখিয়ে বাইরের স্বাধীন পরিবেশ থেকে বঞ্চিত করা হয়। ভার্চুয়াল জগতে সাইবার ক্রাইম করে নারীদের প্রযুক্তির সুবিধা লাভ থেকে বঞ্চিত করা হয়।

জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী ঠিক কী কারণে একমাত্র সংসদের স্পিকার আসনে বসলেই ঘোমটা দেন তার কারণ আমার এখনও জানা হল না। তাকে সংসদ ছাড়া অন্য কোনও জায়গায় ঘোমটা দিতে দেখা যায় না। তবে সংসদে মাথা ঢাকাটা জরুরি কেন? যখন বর্তমান রাষ্ট্রপতি সংসদের স্পিকার ছিলেন, তখন তো তাঁকে মাথায় টুপি দিয়ে বসতে দেখি নি। আর বিরোধী দলীয় নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী তো জনসমক্ষে কখনো ঘোমটা ছাড়া আসেনই না। কাজেই প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার সব নারী হওয়ায় নারীর ক্ষমতায়ন হয়ে গেছে বলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার কোনও সুযোগ নেই।

সমস্যা যেমন আছে, সমাধানও আছে। সমস্যা নিয়ে লিখছি কিন্তু সমাধান নিয়ে লিখছি না কেন? কারণ সমস্যাগুলো এতছর ধরে চলতে চলতে এতটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে যে, সমস্যাগুলোকে মানুষ নিয়ম মনে করে। তাই সমস্যাগুলো নিয়ে বেশি লিখি, মানুষকে জানাতে যে এগুলো নিয়ম নয়, ‘সমস্যা’। সমস্যাকে সমস্যা মনে করলে সমাধান দ্রুত ঘটবে বলেই মনে করি।