দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনা নারী ফুটবলারদের লোকাল বাসে কুরুচিকর মন্তব্যের মুখোমুখি হওয়া নিয়ে চারদিকে আলোচনা দেখে আমার ক্রিকেট খেলার সময়ে আমাকে এবং আমার খেলোয়াড় বান্ধবীদের কী ধরনের পরিবেশ মোকাবেলা করতে হতো সেসব মনে পড়ে গেল।
খেলাধূলা ব্যাপারগুলো মেয়েদের বিষয় না- সোজাসাপটা এটাই মনে করা হয় আমাদের সমাজে। মেয়েরা বড়জোর পুতুল খেলা, এক্কা দোক্কা এসব খেলতে পারে, তবে ক্রিকেট ফুটবল তো একদমই না! ওসব ছেলেদের খেলা। আমার ক্রিকেট ক্লাবে মেয়ের সংখ্যা ছিল ছেলেদের ১০ ভাগের এক ভাগ। অধিকাংশ মেয়েদের খেলার সরঞ্জাম ঠিকমত ছিল না। না, আর্থিক সমস্যার জন্য নয়। মেয়ের খেলার পেছনে টাকা খরচ করাটা বাবা-মায়েরা অপচয় মনে করে বলেই তাদেরকে ঠিকমত সরঞ্জাম কিনে দেয়া হত না। অনেকেই তাদের বড় ভাইদের খেলার সরঞ্জাম নিয়ে খেলত।
খেলাশেষে মেয়েরা খেলোয়াড়ের পোশাকে বাড়ি ফেরার সময় নানান অশ্লীল মন্তব্য ও অঙ্গভঙ্গির মুখোমুখি হতো। এ অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে কয়েকজন বোরকা পরে মাঠে আসতো এবং খেলার পর বোরখা চাপিয়ে বাড়ি ফিরত। বাংলাদেশে একজন নারী খেলোয়াড়ের কী ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করে টিকে থাকতে হয়, সেসবই আমি নিজে দেখেছি বলে সেদিন নারী ফুটবলারদের সঙ্গে যা ঘটেছে তা আমাকে মোটেই অবাক করেনি। আমাদের দেশে শিক্ষিত-অশিক্ষিত অধিকাংশের কাছেই ‘মেয়েদের খেলাধূলা’ শব্দটি একটি হাস্যরসাত্মক শব্দ। “মেয়েরা খেলবে? খেলতে হলে শক্তি লাগে, মেয়েদের খেলার শক্তি আছে নাকি, মেয়েদের শরীর তো নরম। খেলার জন্য শক্ত বডি লাগে। কাঠের বল একবার লাগলেই তো তারা চিত”। ২০৬টি হাড় ভাঙার মত ব্যাথা সহ্য করে, পেলেপুষে বড় করে মুখ ফুটার পর তাদের মুখে এ ধরনের মন্তব্য শুনলে ইচ্ছা করে অণ্ডকোষ বরাবর লাথি মেরে বুঝিয়ে দেই, নরম কী জিনিস আর চিত হওয়া কাকে বলে।
একদল ছোটবেলা থেকেই ব্যাটবল হাতে নিয়ে মাঠে ঘুরে বেড়ানোর স্বাধীনতা উপভোগ করে, আরেকদল শত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে গিয়ে খেলতে আসে। তাহলে দুজনের খেলায় পার্থক্য তো থাকবেই। ক্রিকেটার সালমা খাতুনের একটি ইন্টারভিউ থেকে জেনেছি, তাদের প্র্যাকটিসের জন্য কোনও মাঠ পর্যন্ত বরাদ্দ নেই, ঠিকমত স্পন্সর পাওয়া যায় না। মেয়েদের কোনও খেলা টিভিতে দেখানো হয় না। ফেসবুকে পুরুষ ক্রিকেটারদের ছবির পোস্টে লাখ লাখ লাইক-কমেন্টের বন্যা। ‘মাশাল্লা ভাই, আপনি এভাবেই খেলে যান’ আর মেয়েদের খেলার কোনও ছবি পোস্ট করলে, ‘চেহারা তো কামের বেটির মত’ ‘**গুলা খুব সুন্দর’ ‘ওইগুলা এত বড় কেন?’। মেয়েরা কেমন খেলছে বা খেলায় উৎসাহ দেয়ার ধারে কাছেই কেউ যায় না! কারণ ‘মেয়েরা আবার কেমনে ক্রিকেট খেলবে?’
কিছুদিন আগে ঢাকায় মেয়েদের ম্যারাথন নিয়ে বিবিসির একটি রিপোর্টের কমেন্ট সেকশন দেখে বমির উদ্রেক হয়েছিল। মানুষের চিন্তাধারা এত নোংরা কীভাবে হয়? একজন সুস্থ মানুষ কীভাবে এমন মন্তব্য করতে পারে? প্রোফাইল ঘাঁটলে দেখা যাবে তাদের বেশিরভাগই শিক্ষিত, চাকরি জীবনে প্রতিষ্ঠিত, সমাজে সম্মানিত ব্যক্তি। ভেবেছিলাম তাদের কমেন্টের স্ক্রিনশট নিয়ে যদি তাদের ওয়ালে পোস্ট করি তাহলে কেমন হবে? লজ্জা হবে নিশ্চয়ই? তারপর আবার ভাবলাম, লজ্জা হবে কীভাবে? আমাদের দেশের অধিকাংশ পুরুষেরা তো এমন চিন্তাধারাই লালন করে।
এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে কিছুদিন আগে। মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় রেজাল্ট ভালো করেছে। এইচএসসির ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিং করানো হয়। যেহেতু স্টুডেন্টের তুলনায় পাবলিক ভার্সিটির সংখ্যা নগন্য, তাই বেশির ভাগ ছাত্ররা দেশের প্রায় সব ভার্সিটিতেই পরীক্ষা দেয়। আমার বান্ধবীরা এবার এইচএসসি দিয়েছে। অনেকেই জানিয়েছে, নিজেদের শহরের বাইরে পরীক্ষা দেয়ার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে তাদের। ভার্সিটি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ঢাকার ভালো কোনও কোচিংয়ে ভর্তি করানো হচ্ছে না। মেয়ে মানুষ, কোথায় থাকবে, কী করবে এসব নিয়ে বাবা মায়ের চিন্তা। ছেলেরা কিন্তু বন্ধুবান্ধব দলবল সমেত কিংবা একা মেসে থেকে কোচিং করছে, নিজেদের শহর থেকে অনেক দূরে এসে সেরা কোচিং সুবিধাটুকু নিচ্ছে। আমার এক বান্ধবী জানালো, সে নিজ শহরের বাইরে অন্য শহরেও পরীক্ষা দিবে। যেখানে চান্স পাবে, সেখানেই পড়বে। তারা বাবা-মায়ের এতে কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু আপত্তি সমাজের মানুষের। আত্মীয়-প্রতিবেশিরা তার বাবা-মাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে, মেয়েকে দূরে একা ছেড়ে পড়ানো উচিত না। এক্ষেত্রে নিরাপত্তা সমস্যাটাই আমার কাছে প্রধান মনে হয়েছে। আবার অনেক বাবা মায়েরা পড়ালেখা চলাকালীন অথবা অনার্সটা পাশ হলেই ভালো পাত্র পেয়ে গেলে বিয়ে দেয়ার প্ল্যান করেন। তাই মেয়েদের ভালো ভার্সিটিতে ভর্তির ব্যাপারে আগ্রহী নন। এভাবে এইচএসসিতে দারুণ রেজাল্ট করা অনেক মেয়েরই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। ছেলেরা যখন ক্যারিয়ার শুরু করে, ঠিক সেসময়েই একটি মেয়ের ক্যারিয়ারের ইতি ঘটে বিয়ের মাধ্যমে।
চমক হাসানের ফেসবুক পেজে একটি পরিসংখ্যান পেলাম। সেটি অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭৪ লাখ। এদের মধ্যে নারী ২১%, পুরুষ ৭৯%। নারীর সংখ্যা এত কম শুনে অনেকেই রিপোর্টিকে নকল মনে করতে পারেন। রিপোর্টটির সত্যতা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীর সংখ্যা যে ২১-২৫ শতাংশের বেশি নয়, এই তথ্যে কোনও ভুল নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীরা নানাভাবে হেনস্থার শিকার হয়। নকল ছবি, নকল আইডি বানিয়ে অনেক নারীদের বিব্রত করা হয়। আর নারীদের ইনবক্সে যা খুশি তাই লেখার স্বাধীনতা যেন সব পুরুষের মৌলিক অধিকার। এসব কারণে নারীদেশ একটি বড় অংশ ফেসবুক থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পছন্দ করেন। বাইরের জগতে নারীকে ধর্ষণ, তথাকথিত সম্ভ্রমহানির(?) ভয় দেখিয়ে বাইরের স্বাধীন পরিবেশ থেকে বঞ্চিত করা হয়। ভার্চুয়াল জগতে সাইবার ক্রাইম করে নারীদের প্রযুক্তির সুবিধা লাভ থেকে বঞ্চিত করা হয়।
জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী ঠিক কী কারণে একমাত্র সংসদের স্পিকার আসনে বসলেই ঘোমটা দেন তার কারণ আমার এখনও জানা হল না। তাকে সংসদ ছাড়া অন্য কোনও জায়গায় ঘোমটা দিতে দেখা যায় না। তবে সংসদে মাথা ঢাকাটা জরুরি কেন? যখন বর্তমান রাষ্ট্রপতি সংসদের স্পিকার ছিলেন, তখন তো তাঁকে মাথায় টুপি দিয়ে বসতে দেখি নি। আর বিরোধী দলীয় নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী তো জনসমক্ষে কখনো ঘোমটা ছাড়া আসেনই না। কাজেই প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার সব নারী হওয়ায় নারীর ক্ষমতায়ন হয়ে গেছে বলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার কোনও সুযোগ নেই।
সমস্যা যেমন আছে, সমাধানও আছে। সমস্যা নিয়ে লিখছি কিন্তু সমাধান নিয়ে লিখছি না কেন? কারণ সমস্যাগুলো এতছর ধরে চলতে চলতে এতটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে যে, সমস্যাগুলোকে মানুষ নিয়ম মনে করে। তাই সমস্যাগুলো নিয়ে বেশি লিখি, মানুষকে জানাতে যে এগুলো নিয়ম নয়, ‘সমস্যা’। সমস্যাকে সমস্যা মনে করলে সমাধান দ্রুত ঘটবে বলেই মনে করি।
খেলাধূলা ব্যাপারগুলো মেয়েদের বিষয় না- সোজাসাপটা এটাই মনে করা হয় আমাদের সমাজে। মেয়েরা বড়জোর পুতুল খেলা, এক্কা দোক্কা এসব খেলতে পারে, তবে ক্রিকেট ফুটবল তো একদমই না! ওসব ছেলেদের খেলা। আমার ক্রিকেট ক্লাবে মেয়ের সংখ্যা ছিল ছেলেদের ১০ ভাগের এক ভাগ। অধিকাংশ মেয়েদের খেলার সরঞ্জাম ঠিকমত ছিল না। না, আর্থিক সমস্যার জন্য নয়। মেয়ের খেলার পেছনে টাকা খরচ করাটা বাবা-মায়েরা অপচয় মনে করে বলেই তাদেরকে ঠিকমত সরঞ্জাম কিনে দেয়া হত না। অনেকেই তাদের বড় ভাইদের খেলার সরঞ্জাম নিয়ে খেলত।
খেলাশেষে মেয়েরা খেলোয়াড়ের পোশাকে বাড়ি ফেরার সময় নানান অশ্লীল মন্তব্য ও অঙ্গভঙ্গির মুখোমুখি হতো। এ অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে কয়েকজন বোরকা পরে মাঠে আসতো এবং খেলার পর বোরখা চাপিয়ে বাড়ি ফিরত। বাংলাদেশে একজন নারী খেলোয়াড়ের কী ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা করে টিকে থাকতে হয়, সেসবই আমি নিজে দেখেছি বলে সেদিন নারী ফুটবলারদের সঙ্গে যা ঘটেছে তা আমাকে মোটেই অবাক করেনি। আমাদের দেশে শিক্ষিত-অশিক্ষিত অধিকাংশের কাছেই ‘মেয়েদের খেলাধূলা’ শব্দটি একটি হাস্যরসাত্মক শব্দ। “মেয়েরা খেলবে? খেলতে হলে শক্তি লাগে, মেয়েদের খেলার শক্তি আছে নাকি, মেয়েদের শরীর তো নরম। খেলার জন্য শক্ত বডি লাগে। কাঠের বল একবার লাগলেই তো তারা চিত”। ২০৬টি হাড় ভাঙার মত ব্যাথা সহ্য করে, পেলেপুষে বড় করে মুখ ফুটার পর তাদের মুখে এ ধরনের মন্তব্য শুনলে ইচ্ছা করে অণ্ডকোষ বরাবর লাথি মেরে বুঝিয়ে দেই, নরম কী জিনিস আর চিত হওয়া কাকে বলে।
একদল ছোটবেলা থেকেই ব্যাটবল হাতে নিয়ে মাঠে ঘুরে বেড়ানোর স্বাধীনতা উপভোগ করে, আরেকদল শত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে গিয়ে খেলতে আসে। তাহলে দুজনের খেলায় পার্থক্য তো থাকবেই। ক্রিকেটার সালমা খাতুনের একটি ইন্টারভিউ থেকে জেনেছি, তাদের প্র্যাকটিসের জন্য কোনও মাঠ পর্যন্ত বরাদ্দ নেই, ঠিকমত স্পন্সর পাওয়া যায় না। মেয়েদের কোনও খেলা টিভিতে দেখানো হয় না। ফেসবুকে পুরুষ ক্রিকেটারদের ছবির পোস্টে লাখ লাখ লাইক-কমেন্টের বন্যা। ‘মাশাল্লা ভাই, আপনি এভাবেই খেলে যান’ আর মেয়েদের খেলার কোনও ছবি পোস্ট করলে, ‘চেহারা তো কামের বেটির মত’ ‘**গুলা খুব সুন্দর’ ‘ওইগুলা এত বড় কেন?’। মেয়েরা কেমন খেলছে বা খেলায় উৎসাহ দেয়ার ধারে কাছেই কেউ যায় না! কারণ ‘মেয়েরা আবার কেমনে ক্রিকেট খেলবে?’
কিছুদিন আগে ঢাকায় মেয়েদের ম্যারাথন নিয়ে বিবিসির একটি রিপোর্টের কমেন্ট সেকশন দেখে বমির উদ্রেক হয়েছিল। মানুষের চিন্তাধারা এত নোংরা কীভাবে হয়? একজন সুস্থ মানুষ কীভাবে এমন মন্তব্য করতে পারে? প্রোফাইল ঘাঁটলে দেখা যাবে তাদের বেশিরভাগই শিক্ষিত, চাকরি জীবনে প্রতিষ্ঠিত, সমাজে সম্মানিত ব্যক্তি। ভেবেছিলাম তাদের কমেন্টের স্ক্রিনশট নিয়ে যদি তাদের ওয়ালে পোস্ট করি তাহলে কেমন হবে? লজ্জা হবে নিশ্চয়ই? তারপর আবার ভাবলাম, লজ্জা হবে কীভাবে? আমাদের দেশের অধিকাংশ পুরুষেরা তো এমন চিন্তাধারাই লালন করে।
এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে কিছুদিন আগে। মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় রেজাল্ট ভালো করেছে। এইচএসসির ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিং করানো হয়। যেহেতু স্টুডেন্টের তুলনায় পাবলিক ভার্সিটির সংখ্যা নগন্য, তাই বেশির ভাগ ছাত্ররা দেশের প্রায় সব ভার্সিটিতেই পরীক্ষা দেয়। আমার বান্ধবীরা এবার এইচএসসি দিয়েছে। অনেকেই জানিয়েছে, নিজেদের শহরের বাইরে পরীক্ষা দেয়ার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে তাদের। ভার্সিটি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ঢাকার ভালো কোনও কোচিংয়ে ভর্তি করানো হচ্ছে না। মেয়ে মানুষ, কোথায় থাকবে, কী করবে এসব নিয়ে বাবা মায়ের চিন্তা। ছেলেরা কিন্তু বন্ধুবান্ধব দলবল সমেত কিংবা একা মেসে থেকে কোচিং করছে, নিজেদের শহর থেকে অনেক দূরে এসে সেরা কোচিং সুবিধাটুকু নিচ্ছে। আমার এক বান্ধবী জানালো, সে নিজ শহরের বাইরে অন্য শহরেও পরীক্ষা দিবে। যেখানে চান্স পাবে, সেখানেই পড়বে। তারা বাবা-মায়ের এতে কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু আপত্তি সমাজের মানুষের। আত্মীয়-প্রতিবেশিরা তার বাবা-মাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে, মেয়েকে দূরে একা ছেড়ে পড়ানো উচিত না। এক্ষেত্রে নিরাপত্তা সমস্যাটাই আমার কাছে প্রধান মনে হয়েছে। আবার অনেক বাবা মায়েরা পড়ালেখা চলাকালীন অথবা অনার্সটা পাশ হলেই ভালো পাত্র পেয়ে গেলে বিয়ে দেয়ার প্ল্যান করেন। তাই মেয়েদের ভালো ভার্সিটিতে ভর্তির ব্যাপারে আগ্রহী নন। এভাবে এইচএসসিতে দারুণ রেজাল্ট করা অনেক মেয়েরই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। ছেলেরা যখন ক্যারিয়ার শুরু করে, ঠিক সেসময়েই একটি মেয়ের ক্যারিয়ারের ইতি ঘটে বিয়ের মাধ্যমে।
চমক হাসানের ফেসবুক পেজে একটি পরিসংখ্যান পেলাম। সেটি অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৭৪ লাখ। এদের মধ্যে নারী ২১%, পুরুষ ৭৯%। নারীর সংখ্যা এত কম শুনে অনেকেই রিপোর্টিকে নকল মনে করতে পারেন। রিপোর্টটির সত্যতা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীর সংখ্যা যে ২১-২৫ শতাংশের বেশি নয়, এই তথ্যে কোনও ভুল নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীরা নানাভাবে হেনস্থার শিকার হয়। নকল ছবি, নকল আইডি বানিয়ে অনেক নারীদের বিব্রত করা হয়। আর নারীদের ইনবক্সে যা খুশি তাই লেখার স্বাধীনতা যেন সব পুরুষের মৌলিক অধিকার। এসব কারণে নারীদেশ একটি বড় অংশ ফেসবুক থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পছন্দ করেন। বাইরের জগতে নারীকে ধর্ষণ, তথাকথিত সম্ভ্রমহানির(?) ভয় দেখিয়ে বাইরের স্বাধীন পরিবেশ থেকে বঞ্চিত করা হয়। ভার্চুয়াল জগতে সাইবার ক্রাইম করে নারীদের প্রযুক্তির সুবিধা লাভ থেকে বঞ্চিত করা হয়।
জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী ঠিক কী কারণে একমাত্র সংসদের স্পিকার আসনে বসলেই ঘোমটা দেন তার কারণ আমার এখনও জানা হল না। তাকে সংসদ ছাড়া অন্য কোনও জায়গায় ঘোমটা দিতে দেখা যায় না। তবে সংসদে মাথা ঢাকাটা জরুরি কেন? যখন বর্তমান রাষ্ট্রপতি সংসদের স্পিকার ছিলেন, তখন তো তাঁকে মাথায় টুপি দিয়ে বসতে দেখি নি। আর বিরোধী দলীয় নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী তো জনসমক্ষে কখনো ঘোমটা ছাড়া আসেনই না। কাজেই প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার সব নারী হওয়ায় নারীর ক্ষমতায়ন হয়ে গেছে বলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার কোনও সুযোগ নেই।
সমস্যা যেমন আছে, সমাধানও আছে। সমস্যা নিয়ে লিখছি কিন্তু সমাধান নিয়ে লিখছি না কেন? কারণ সমস্যাগুলো এতছর ধরে চলতে চলতে এতটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে যে, সমস্যাগুলোকে মানুষ নিয়ম মনে করে। তাই সমস্যাগুলো নিয়ে বেশি লিখি, মানুষকে জানাতে যে এগুলো নিয়ম নয়, ‘সমস্যা’। সমস্যাকে সমস্যা মনে করলে সমাধান দ্রুত ঘটবে বলেই মনে করি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন