অনেকদিন পর লিখতে বসেছি। নতুন স্কুলে ভর্তি হলাম, মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগছে, তাই লেখার সময় হয়ে উঠছিল না। চুল লম্বা হয়ে গেছে, কাটানোর সময় পাচ্ছিলাম না। দুদিন ছুটি পাওয়াতে আজ গিয়েছিলাম চুল কাটাতে। চুল কাটানো নিয়ে আমার জীবনে অনেক ধরণের অভিজ্ঞতা হয়েছে। দেশে ছোটবেলা বাবার সাথে যেতাম সেলুনে চুল কাটাতে। একটু বড় হতেই জানতে পারলাম সেলুনে যেহেতু পুরুষ নাপিত থাকে কাজেই আমার সেলুনে চুল কাটা চলবে না। পুরুষ নাপিত একজন মেয়ের চুল কাটছে, ব্যাপারটা আমার ‘অতি উন্নত’ সমাজ ভালোভাবে নেয় না। কিন্তু আমার চুলের কাট তো পার্লারের মেয়েরা জানে না। একজনকে দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করাতে পার্লারে নিয়ে আমি নির্দেশনা দিয়ে তার চুল কাটালাম। উদ্দেশ্য, তারটা যদি ঠিকভাবে কেটে দিতে পারে তবে আমিও কাটাতে বসব। কিন্তু না, পার্লারে আমি যেমনটা চাচ্ছিলাম সেভাবে কাটতে পারলো না। তাই আমি সেই সেলুনেই ফিরে গেলাম। সেলুনের নাপিতেরা আমাকে ছেলে হিসেবে নিয়ে চুল কাটতো। কারও কোনও সমস্যা হতো না।
আজকে একটা ইন্ডিয়ান সেলুনে গিয়েছিলাম চুল কাটাতে। এখানে চুল কাটার দাম অনেক। একটু কম দামে কাটতেই মূলত ইন্ডিয়ান সেলুনে যাওয়া। এখানে ছেলে মেয়ে সবাই চুল কাটাচ্ছে। ছেলে নাপিত যেমন আছে, মেয়ে নাপিতও আছে। ছেলের চুল মেয়ে কাটছে, মেয়ের চুল ছেলে। এতে কারও কোন সমস্যা হচ্ছে না।
আমার চুল যে কাটলো সে জানে আমি মেয়ে। বয় কাট দিতে বললাম। দিলো। বয় কাটের দামটা অন্যগুলোর তুলনায় কম আর মেয়েদের জন্য কিছু কাটের নাম দেখলাম, সেসব অনেক টাকার। কাটানো শেষে বিল দিতে গিয়ে হঠাৎ ক্যাশিয়ারের মনে হল আমি মেয়ে। পরমূহুর্তেই সে আমার কাছ থেকে বয় কাটের তিনগুন দাম চাইল। জিজ্ঞেস করলাম, ‘বয় কাটের দাম তো এত না, আপনি তো একটু আগেই সেই দাম নিচ্ছিলেন। এখন আবার তিন গুন দাম চাইছেন কেনও?’ সে বলল ‘ওটা তো ছেলেদের জন্য। মেয়েদের জন্য অন্য দাম।’ বললাম, ‘দাম তো নির্দিষ্ট হবে। একই কাট ছেলের মাথায় হলে এক দাম, মেয়ের মাথা হলে অন্য দাম কেনও হবে? আপনারা তো কাটের দাম নিবেন, আমি ছেলে নাকি মেয়ে তাতে আপনাদের কী আসে যায়?’ জানালো, এটাই নাকি তাদের নিয়ম। বললাম, ‘এই কাট যদি কোন ট্রান্স জেন্ডারের মাথায় যায় তাহলে কোন দাম দিয়ে তার মাথা ভেঙে খাবেন সেটা তো লিখেন নি’। তারপর সে বলল, ট্রান্সজেন্ডার নাকি মানুষের মনের ভুল। একজন হ্যান্ডসাম,শিক্ষিত লোকের মুখে একথা শুনে তো আমি অবাক! তাকে জানালাম, সে যেই দেশে বসবাস করছে এখানে ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকারের পক্ষে আইন রয়েছে। এমনকি তার নিজের দেশ ইন্ডিয়াতেও ট্রান্সজেন্ডারদের বৈধতা দেয়া হয়েছে। কোনও উত্তর খুঁজে না পেয়ে বলল, তাদের নিয়মই এটা। নিয়মের বাইরে সে যেতে পারবে না। নিয়ম চেইঞ্জ করার পরামর্শ দিয়ে বেরিয়ে এলাম।
প্রথমত, একই কাট ছেলের মাথায় দিলে এক দাম, মেয়ের মাথায় সেটার তিনগুন দাম কীভাবে হয় সেটা আমার কোনও ভাবেই বোধগম্য হলও না। আর দ্বিতীয়্ত, ওই সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত লোকের মুখে ট্রান্সজেন্ডারের সংজ্ঞা শুনে আমাদের সমাজের অধিকাংশের মানসিকতা আসলে কেমন, সেটা বুঝলাম।
আমার ছোট চুল নিয়ে আমি যথেষ্ঠ স্বাচ্ছেন্দ্যে থাকলেও আমার আশেপাশের মানুষ প্রতিনিয়ত আমার ছোট চুলের ব্যাপারে তাদের ঘোর আপত্তি প্রকাশ করতো। বলতো, এমন ছোট চুল রাখলে আমার ক্লাসে ছেলেরা আমাকে পছন্দ করবে না। নিজেকে অস্বস্তিতে রেখে অন্যের চোখে সুন্দর হওয়ার কাজটা আমার দ্বারা কখনোই হয়ে উঠে নি। বিশাল চুলের যত্ন করার সময় ও ইচ্ছে কোনটাই আমার নেই। আর কারও চোখের সুখের জন্য আমি আমার মাথাকে উকুনের আবাস ভূমি বানাতে রাজি না।
অন্যের কাছে ভালো মেয়ে খেতাব পেতে আমাদের দেশের মেয়েরা প্রচন্ড গরমেও মাথায় কাপড়ের পাহাড় বানিয়ে চুল ঢাকছে, বোরখা পরছে। নিজের স্বাচ্ছন্দ্য অনুভবের বিষয়টি সম্পর্কেই তাদের ধারণা নেই। একটিই জীবন, সেটাই কাটিয়ে দিচ্ছে অন্যের ইচ্ছেকে মেনে নিয়ে, নিজে কষ্টে থেকে অন্যকে সুখী করে। সমাজে ‘ভালো মেয়ে’ হওয়াটা জরুরী কিনা!
আজকে একটা ইন্ডিয়ান সেলুনে গিয়েছিলাম চুল কাটাতে। এখানে চুল কাটার দাম অনেক। একটু কম দামে কাটতেই মূলত ইন্ডিয়ান সেলুনে যাওয়া। এখানে ছেলে মেয়ে সবাই চুল কাটাচ্ছে। ছেলে নাপিত যেমন আছে, মেয়ে নাপিতও আছে। ছেলের চুল মেয়ে কাটছে, মেয়ের চুল ছেলে। এতে কারও কোন সমস্যা হচ্ছে না।
আমার চুল যে কাটলো সে জানে আমি মেয়ে। বয় কাট দিতে বললাম। দিলো। বয় কাটের দামটা অন্যগুলোর তুলনায় কম আর মেয়েদের জন্য কিছু কাটের নাম দেখলাম, সেসব অনেক টাকার। কাটানো শেষে বিল দিতে গিয়ে হঠাৎ ক্যাশিয়ারের মনে হল আমি মেয়ে। পরমূহুর্তেই সে আমার কাছ থেকে বয় কাটের তিনগুন দাম চাইল। জিজ্ঞেস করলাম, ‘বয় কাটের দাম তো এত না, আপনি তো একটু আগেই সেই দাম নিচ্ছিলেন। এখন আবার তিন গুন দাম চাইছেন কেনও?’ সে বলল ‘ওটা তো ছেলেদের জন্য। মেয়েদের জন্য অন্য দাম।’ বললাম, ‘দাম তো নির্দিষ্ট হবে। একই কাট ছেলের মাথায় হলে এক দাম, মেয়ের মাথা হলে অন্য দাম কেনও হবে? আপনারা তো কাটের দাম নিবেন, আমি ছেলে নাকি মেয়ে তাতে আপনাদের কী আসে যায়?’ জানালো, এটাই নাকি তাদের নিয়ম। বললাম, ‘এই কাট যদি কোন ট্রান্স জেন্ডারের মাথায় যায় তাহলে কোন দাম দিয়ে তার মাথা ভেঙে খাবেন সেটা তো লিখেন নি’। তারপর সে বলল, ট্রান্সজেন্ডার নাকি মানুষের মনের ভুল। একজন হ্যান্ডসাম,শিক্ষিত লোকের মুখে একথা শুনে তো আমি অবাক! তাকে জানালাম, সে যেই দেশে বসবাস করছে এখানে ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকারের পক্ষে আইন রয়েছে। এমনকি তার নিজের দেশ ইন্ডিয়াতেও ট্রান্সজেন্ডারদের বৈধতা দেয়া হয়েছে। কোনও উত্তর খুঁজে না পেয়ে বলল, তাদের নিয়মই এটা। নিয়মের বাইরে সে যেতে পারবে না। নিয়ম চেইঞ্জ করার পরামর্শ দিয়ে বেরিয়ে এলাম।
প্রথমত, একই কাট ছেলের মাথায় দিলে এক দাম, মেয়ের মাথায় সেটার তিনগুন দাম কীভাবে হয় সেটা আমার কোনও ভাবেই বোধগম্য হলও না। আর দ্বিতীয়্ত, ওই সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত লোকের মুখে ট্রান্সজেন্ডারের সংজ্ঞা শুনে আমাদের সমাজের অধিকাংশের মানসিকতা আসলে কেমন, সেটা বুঝলাম।
আমার ছোট চুল নিয়ে আমি যথেষ্ঠ স্বাচ্ছেন্দ্যে থাকলেও আমার আশেপাশের মানুষ প্রতিনিয়ত আমার ছোট চুলের ব্যাপারে তাদের ঘোর আপত্তি প্রকাশ করতো। বলতো, এমন ছোট চুল রাখলে আমার ক্লাসে ছেলেরা আমাকে পছন্দ করবে না। নিজেকে অস্বস্তিতে রেখে অন্যের চোখে সুন্দর হওয়ার কাজটা আমার দ্বারা কখনোই হয়ে উঠে নি। বিশাল চুলের যত্ন করার সময় ও ইচ্ছে কোনটাই আমার নেই। আর কারও চোখের সুখের জন্য আমি আমার মাথাকে উকুনের আবাস ভূমি বানাতে রাজি না।
অন্যের কাছে ভালো মেয়ে খেতাব পেতে আমাদের দেশের মেয়েরা প্রচন্ড গরমেও মাথায় কাপড়ের পাহাড় বানিয়ে চুল ঢাকছে, বোরখা পরছে। নিজের স্বাচ্ছন্দ্য অনুভবের বিষয়টি সম্পর্কেই তাদের ধারণা নেই। একটিই জীবন, সেটাই কাটিয়ে দিচ্ছে অন্যের ইচ্ছেকে মেনে নিয়ে, নিজে কষ্টে থেকে অন্যকে সুখী করে। সমাজে ‘ভালো মেয়ে’ হওয়াটা জরুরী কিনা!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন