সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

বুক নিয়ে লজ্জা!



বুক নিয়ে লিখেছিলাম মাসখানেক আগে। মেয়েদের বুক নিয়ে কিসের এত লজ্জা, কী কারণে এ লজ্জা- এসব প্রশ্ন প্রায় আমার মাথায় ঘুরপাক খায়।

একবার কোচিং ক্লাসে কারেন্ট ছিলও না, আইপিএস নষ্ট হয়ে গেছে। প্রচন্ড গরমে ক্লাস করছি। ছেলেরা শার্টের বোতাম খুলে বসেছে। অন্যদিকে মেয়েরা সেলোয়ার কামিজ, ওড়না, হিজাব আরও ভালোভাবে পেঁচিয়ে বসেছে। কারণ ঘামে ভিজে যদি ভিতরের কিছু দেখা যায়! আমি শার্টের একটা বোতাম খুলে বসলাম দেখে স্যার জিজ্ঞেস করলেন, কী ইতু? খুব গরম লাগছে নাকি? আমি আরও দুটো বোতাম খুলতে খুলতে উত্তর দিলাম, ‘হ্যাঁ স্যার’। হয়তো ভেবেছিলেন, আমি স্যারের প্রশ্নে বিব্রত হয়ে বোতামটা লাগিয়ে নিবো। কিন্তু উল্টো আমাকে আরও দুটো বোতাম খুলতে দেখে স্যার-ই মনে হয় খানিকটা বিব্রত হয়েছিলেন।

আমি আমার শরীর নিয়ে একটুও লজ্জিত নই। ছেলে এবং মেয়ে বেড়ে উঠতে থাকলে ছেলেটির স্বাধীনতা বাড়তে থাকে, আর মেয়েটির কমতে থাকে। মেয়েটির স্বাধীনতা কমে মেয়েটির শরীরের কারণে। শরীর নিয়ে ভয়। এই বুঝি কেউ দেখে ফেলল, বাজে ইঙ্গিত করল, ধর্ষন করতে এলো। আমি ভেবে পাই না সারাক্ষণ এসব চিন্তা মাথায় নিয়ে মেয়েরা বাঁচে কীভাবে?

অনেকের কাছে শুনি, নারী স্বাধীনতা মানেই কি শরীরের স্বাধীনতা? অর্থনৈতিক স্বাধীনতা চাও, শিক্ষার অধিকার চাও ঠিক আছে। কিন্তু শরীরের স্বাধীনতা চেও না। শরীরটা পুরুষের কাছে বন্ধক রেখে বাকি স্বাধীনতা চাও। কিন্তু আমার মতে নারী যতদিন নিজের শরীরকে পুরুষতান্ত্রিক শেকল থেকে মুক্ত করতে না পারছে, ততদিন নারীর কোনও স্বাধীনতাই আসবে না। ধরুন, একজন শিক্ষিত মেয়ে। অর্থনৈতিক ভাবে স্বাধীন। সেও কিন্তু রাতের অন্ধকারে, ভীড়ের মাঝে পুরুষের নষ্ট মানসিকতা থেকে রক্ষা পায় না। ওই সচ্ছল মেয়েটিও ধর্ষনের শিকার হলে তার অন্যসব পরিচয় মুছে গিয়ে তার পরিচয় হবে ‘একজন ধর্ষিতা’। আর যতদিন পুরুষ নারীর শরীরকে নিজেদের সম্পত্তি বলে মনে করছে ততদিন এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।

আমি বাসায় গরমকালে সেন্ডোগেঞ্জি পরি। ছোটবেলায় এটা নিয়ে কারও আপত্তি না থাকলেও ধীরে ধীরে পরিবারের সবার আপত্তি শুরু হল। এই পোশাক পরে দরজা খুলতে যাবে না। একদিন বাসায় এক আত্মীয় এলে আমাকে বলা হল, ‘যাও গিয়ে নমস্কার করে এসো’। আমি তো আমার পোশাকেই রওনা হলাম। মা থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘উপরে কিছু একটা পরে নাও’। আমি রেগে গিয়ে বললাম, ‘যেই লোকের আমাকে সেন্ডো গেঞ্জি পরা অবস্থায় দেখলে মাথায় বদ মতলব আসতে পারে বলে তোমার মনে হয় তাকে আমি নমস্কার করতে যাবো? অসম্ভব’।

একদিন মা বললেন, ‘তুমি এখন বড় হচ্ছো, তোমার বাবার সামনে এধরণের পোশাক পরে চলা ঠিক না’ জিজ্ঞেস করলাম, ‘বাবা কি মাঝেমাঝে ভুলে যান যে আমি তার সম্পর্কে মেয়ে হই?’ এরপর থেকে মা আমাকে এসব বিষয় নিয়ে কিছু বলতে কিছুটা ভয় পেতেন সম্ভবত। কারণ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আমাকে দিয়ে কোন কিছু করাতে বাধ্য করা সম্ভব নয়। আর প্রশ্নের কোনও উত্তর দেয়াও সম্ভব নয়।

আমার ছোট বোনকেও আস্তে আস্তে ঢেকে চলার পরামর্শ দেয়া শুরু হল। মা’র খুব চিন্তা, বড় বোনের কাছ থেকে শিখে যদি ছোটজনও নষ্ট হয়ে যায়। ছোটবোনকে মা ঢেকে চলার উপদেশ দিতে গেলেই সে আমাকে ডাকতো। আর আমাকে ডাকা মানেই প্রশ্ন। কার জন্য আমাকে ঢাকতে হবে? তার কী কী সমস্যা হয়? তার সমস্যার জন্য আমাকে কেন কাপড়ের বস্তা জড়াতে হবে? মেয়েরা যদি এখন থেকে ছেলেদের ঠোঁট বুক কোমরের দিকে অস্বাভাবিক ভাবে তাকিয়ে থাকে, তবে ছেলেরাও কি বোরখা হিজাব জাতীয় ঢেকে রাখা পোশাক পরবে? নাকি নিজেকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করতে ব্যস্ত হবে?

যেসব মেয়েরা নিজের শরীর নিয়ে অত্যন্ত লজ্জিত, তারা কি একবার এসব প্রশ্ন ভেবে দেখবেন? যারা আপনাকে কাপড়ের বস্তা পেঁচাতে বাধ্য করে তাদের কাছ থেকে একবার এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইবেন?

অলম্পিকের ভারতীয় প্রতিযোগী দীপা কর্মকারের ছবি দিয়ে এক বাংলাদেশী মুসলমান ছেলে পোস্ট দিয়েছে, দীপা নাকি অশ্লীল সব ড্রেস পরে খেলছে। একজন বাঙালি হিসেবে ব্যাপারটা নাকি সে মেনে নিতে পারছে না, সে বাঙালি হিসেবে লজ্জা পাচ্ছে। সাধারণত এদেশীয় মুসলমানরা মনে করে, তারা আগে মুসলমান পরে বাঙালি। এখানে মেয়েটির ড্রেস নিয়ে দুটো জ্ঞানের বাণী শোনাতে নিজের মুসলমান পরিচয়কে পিছনে রেখে বাঙালি পরিচয় নিয়ে হাজির হয়েছেন ওই অসভ্য মালটি।

ফেসবুকে একজন প্র্যাগনেন্ট নারী তার পেটের ছবি দিয়ে জানিয়েছেন, ‘সাত মাস চলছে’। ছবির কমেন্টে দেখলাম ওই নারীকে গালাগাল দিচ্ছে, ছবি সরিয়ে নিতে বলছে। ছবিটি নাকি অত্যন্ত অশ্লীল। বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছে এমন ছবিও নাকি ভয়ংকর অশ্লীল। যাদের চিন্তাচেতনা অন্ডকোষ দিয়ে পরিচালিত মস্তিষ্ক দিয়ে নয়, তারা সব কিছুতেই অশ্লীলতা খুঁজে পাবেন। স্বাভাবিক।

কিন্তু কোনও অসুস্থ চিন্তা চেতনার মানুষের ভয়ে কেন আমি নিজেকে অস্বস্তিতে রেখে শরীরে কাপড়ের পাহাড় জড়াব? বুক ওড়না দিয়ে ঢেকে রাখা, মাথা কাপড়ের বস্তা দিয়ে পেঁচিয়ে রাখা, কাপড়ের উপর আবার বোরখা পরে পুরা শরীর ঢাকা। এত ঢাকাঢাকির কারণ আমি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারি না।

দেশে হিজাবের পরিমাণ বাড়ছে। হিজাব যেন একটি সংক্রামক ব্যাধি। একজন পরলে তার কাছ থেকে শিখে আরেকজন পরছে। এখন নাকি বোরখা নামক ব্যাধিতেও আক্রান্ত হচ্ছে দেশের মেয়েরা। হিজাব যদি সংক্রামক হয়, তবে নিজের শরীর নিয়ে লজ্জা না থাকা কোনও মেয়ে যদি তার ব্রা পরা ছবিটি প্রকাশ করে তবে কি অন্য মেয়েরাও এতে সাহস পাবে? এটিও সংক্রামক হবে? লজ্জা ভাঙবে? হয়তো কেউ কেউ সাহস পাবে, নিজের শরীর নিয়ে আর লজ্জিত হবে না। যদিও ‘ব্যাধিই সংক্রামক, স্বাস্থ্য নয়’ তবুও মেয়েরা আর নিজের শরীর নিয়ে লজ্জিত হচ্ছে না, ভয় পাচ্ছে না, স্বাধীন জীবন উপভোগ করছে এমন একটি সুন্দর সমাজের স্বপ্ন আমি সবসময় দেখি।

1 টি মন্তব্য:

  1. I THINK IN BD we face really big problem . when we search google we see in search list all r about boobs related. our country young generation always doing sex talk in this time . our most favorate subject is women boobs h, her vagina . how can i grow my penis. which sex position is best? how can i do 2 hrs sex. male female continious watching porn . they video their intimate scene and others are influing to see this. abortion is increase day by day . in every situation everyone talk about sex though our life become narrow day by day we loose our interest to know our past .freedom of speech is banned. it is like a .hell in this situation we r more become fudementalist ,bangaal,i r such a hypocrate

    উত্তরমুছুন