প্রতিবার যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকরের পর ফাঁসির পক্ষে বিপক্ষে মতভেদের সৃষ্টি হয়। যারা যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির বিপক্ষে তবে নাস্তিকদের ফাঁসি-কতল চান তাদের কথা বলছি না। যারা মানবতাবাদী, যারা মনে করেন প্রত্যেক মানুষের বাঁচার অধিকার আছে আমি তাদের কথা বলছি।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে এ নিয়ে কম আলোচনা তর্ক বিতর্ক হয় নি। এমনই এক আলোচনায় একজন বলছিলেন, ‘এখন যদি বাংলাদেশ রাষ্ট্র থেকে চট্টগ্রাম মুক্ত হয়ে নিজেদের স্বাধীনতা চায় তবে তুমি কি এর পক্ষে থাকবে নাকি বিপক্ষে?’
বললাম, ‘বিপক্ষে’।
‘ঠিক একই অপরাধটাই করেছিল ৭১ সালে জামায়েত শিবিরের নেতারা। তারা পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল, তাই আজকে আওয়ামীলীগ এটাতে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়ে তাদেরকে ফাঁসি দিচ্ছে।’
আমি সাথে সাথে আপত্তি জানালাম। তাকে জানালাম যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা না চাওয়ার জন্য তাদেরকে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে না। ৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে তারা নিরীহ বাঙালীদের উপর যে বর্বরতা করেছে, তাদের সেসকল মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হচ্ছে।
এসব যুদ্ধাপরাধীরা কেবল ৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেই ক্ষান্ত হয় নি। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে দেশে এসে মেজর জিয়ার শাসনামলে পুনর্বাসিত হয়ে বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস না করে স্বাধীন দেশে তারা দেশবিরোধী রাজনীতি করেছে। বড় রাজনৈতিক দলগুলোর আশ্রয়ে, ধর্মভীরু জনগণের সহানুভূতি’কে কাজে লাগিয়ে তারা আজ অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ভাবে যথেষ্ট পরিমাণ শক্তিশালী। তারা তাদের মৃত্যুকে শহীদি মৃত্যু বলে ঘোষণা দিলেও ফাঁসি থেকে বাঁচতে কিন্তু কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছে। শেষপর্যন্ত ফাঁসি আটকাতে না পেরে শহীদি মৃত্যুর সান্ত্বনা নিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় হয়েছে। তারা মনে করে, ৭১এর মুক্তিযুদ্ধে তারা ইসলাম রক্ষার জন্য গণহত্যা করেছে। একইভাবে বর্তমানে তাদের ফাঁসিকে তারা ইসলামের জন্য মৃত্যু বলেই মনে করে।
যদিও আমি মনে করি প্রত্যেক মানুষেরই বাঁচার অধিকার আছে, অপরাধী অনুতপ্ত হলে তার সাজা কমিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনের অধিকার থাকা উচিত। কিন্তু এ মৃত্যুতে আমি কোনোভাবেই দুঃখিত নই। এসকল অপরাধীরা মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত তাদের অপরাধ স্বীকার করে নি, তাদের কৃত কর্মের জন্য তারা মোটেই অনুতপ্ত নয়। মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও কাদের মোল্লা‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়ে গেছে। কামারুজ্জামানের মৃত্যুর পর তার পরিবার মিডিয়ায় ‘ভি’ চিহ্ন প্রদর্শন করেছে। সাকা-মুজাহিদ ক্ষমা চাওয়ার নাটক করে একদিন বেশি বাঁচার আশা করেছিল। কিন্তু যখন দেখল এতে কাজ হচ্ছে না, তখন তার পরিবারের সদস্যরা বাইরে এসে জানিয়ে দিলো তাদের বাবা ক্ষমা চায় নি। এসব ভয়ংকর অপরাধীদের যদি কোনোভাবে ক্ষমা করা হয় তবে ভবিষ্যতে সরকার বদলের পরই তারা জেল থেকে মুক্ত হয়ে হয়তো ট্রাইব্যুনালের বিচারকার্যের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেক সদস্যকে হত্যা করবে। বিচার চলাকালীনই কিছু সাক্ষীকে হত্যা করা হয়েছে, আহত করা হয়েছে। কাজেই যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি মানবতা দেখানোর কোনও কারণ আমি খুঁজে পাই না।
তবে প্রশ্ন হল, এই কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দিলেই কি দেশের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? জঙ্গিবাদ নির্মূল হবে? জামায়েত নিষিদ্ধ হলেই কি দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চিরতরে মুছে যাবে? না।
কিছুদিন আগে ইউটিউবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি টেলিফিল্ম দেখছিলাম। এটাকে টেলিফিল্ম না বলে ডকুমেন্টারি ফিল্মও বলা যায়। কারিগর নামে পরিচিত এক লোক তার গ্রামে মুসলিম ছেলেদের মুসলমানি করাতেন। ৭১এ গ্রামে গ্রামে যখন হিন্দুদের হত্যা করা হচ্ছিল, তখন কারিগর ও তার স্ত্রী মিলে একটি বুদ্ধি বের করলেন। তারা রাত জেগে সকল হিন্দুদের একটি মুসলিম নাম বানিয়ে লিস্ট করলেন। পাকিস্তানি মিলিটারি এলে কারিগর তাদেরকে লিস্টটি দিয়ে জানালেন এরা সবাই মুসলিম, তিনি নিজে এদের মুসলমানি করিয়েছেন। কথার সত্যতা যাচাই করতে মিলিটারিরা তাঁকে কোরান মাথায় নিয়ে একথা বলতে বলল। তিনি বললেন। ওই গ্রামের অনেক হিন্দুই নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে কোরান মাথায় নিয়ে মিথ্যে বলার কারণে তাঁকে এক ঘরে করা হয়। স্বাধীন দেশে বিচার বসিয়ে তাঁকে অপমানিত করা হয়। আসলে আমরা পাকিস্তান থেকে মুক্ত হলেও সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা থেকে মুক্ত হতে পারে নি।
৪৪ বছর ধরে যেই জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িক বীজ বপন করা হয়েছে তা এত সহজে দমন হওয়ার নয়। মুক্তমনা, সংখ্যালঘুদের হত্যার পর সরকারের ভূমিকায় আমি হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু গুলশানের ঘটনার পর জঙ্গি দমনে সরকারের ভূমিকা কিছুটা আশা জাগিয়েছে। যদিও জানি যে আবার একজন মুক্তমনাকে হত্যা করা হলে নির্লজ্জ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিহতের লেখা খতিয়ে দেখার বিষয়কে গুরুত্ব দিবেন। হাসিনা জানাবেন, লেখার কারণে মেরে ফেললে তার সরকার এর দায় নিতে পারবে না। ঠিক এ কারণেই স্বাধীন দেশে যুদ্ধাপরাধীরা রাজনীতি করার সাহস পেয়েছিল। আমাদের সমস্যা হল, আমরা এক পা এগিয়ে গেলে আবার তিন পা পিছিয়ে যাই।
দেশ নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখতে চাই, স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখতে চাই। তাই যুদ্ধাপরাধীদের রায় কার্যকরে সরকারের সাহসী ভূমিকার প্রশংসা করার পাশাপাশি সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম বাতিলের দাবী জানাই, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক, মুক্তমনা-সংখ্যালঘু হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হোক, ভিন্নমতের মানুষেরাও স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার পাক।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকে এ নিয়ে কম আলোচনা তর্ক বিতর্ক হয় নি। এমনই এক আলোচনায় একজন বলছিলেন, ‘এখন যদি বাংলাদেশ রাষ্ট্র থেকে চট্টগ্রাম মুক্ত হয়ে নিজেদের স্বাধীনতা চায় তবে তুমি কি এর পক্ষে থাকবে নাকি বিপক্ষে?’
বললাম, ‘বিপক্ষে’।
‘ঠিক একই অপরাধটাই করেছিল ৭১ সালে জামায়েত শিবিরের নেতারা। তারা পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল, তাই আজকে আওয়ামীলীগ এটাতে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়ে তাদেরকে ফাঁসি দিচ্ছে।’
আমি সাথে সাথে আপত্তি জানালাম। তাকে জানালাম যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা না চাওয়ার জন্য তাদেরকে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে না। ৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে তারা নিরীহ বাঙালীদের উপর যে বর্বরতা করেছে, তাদের সেসকল মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হচ্ছে।
এসব যুদ্ধাপরাধীরা কেবল ৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেই ক্ষান্ত হয় নি। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে দেশে এসে মেজর জিয়ার শাসনামলে পুনর্বাসিত হয়ে বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস না করে স্বাধীন দেশে তারা দেশবিরোধী রাজনীতি করেছে। বড় রাজনৈতিক দলগুলোর আশ্রয়ে, ধর্মভীরু জনগণের সহানুভূতি’কে কাজে লাগিয়ে তারা আজ অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ভাবে যথেষ্ট পরিমাণ শক্তিশালী। তারা তাদের মৃত্যুকে শহীদি মৃত্যু বলে ঘোষণা দিলেও ফাঁসি থেকে বাঁচতে কিন্তু কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছে। শেষপর্যন্ত ফাঁসি আটকাতে না পেরে শহীদি মৃত্যুর সান্ত্বনা নিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় হয়েছে। তারা মনে করে, ৭১এর মুক্তিযুদ্ধে তারা ইসলাম রক্ষার জন্য গণহত্যা করেছে। একইভাবে বর্তমানে তাদের ফাঁসিকে তারা ইসলামের জন্য মৃত্যু বলেই মনে করে।
যদিও আমি মনে করি প্রত্যেক মানুষেরই বাঁচার অধিকার আছে, অপরাধী অনুতপ্ত হলে তার সাজা কমিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনের অধিকার থাকা উচিত। কিন্তু এ মৃত্যুতে আমি কোনোভাবেই দুঃখিত নই। এসকল অপরাধীরা মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত তাদের অপরাধ স্বীকার করে নি, তাদের কৃত কর্মের জন্য তারা মোটেই অনুতপ্ত নয়। মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও কাদের মোল্লা‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়ে গেছে। কামারুজ্জামানের মৃত্যুর পর তার পরিবার মিডিয়ায় ‘ভি’ চিহ্ন প্রদর্শন করেছে। সাকা-মুজাহিদ ক্ষমা চাওয়ার নাটক করে একদিন বেশি বাঁচার আশা করেছিল। কিন্তু যখন দেখল এতে কাজ হচ্ছে না, তখন তার পরিবারের সদস্যরা বাইরে এসে জানিয়ে দিলো তাদের বাবা ক্ষমা চায় নি। এসব ভয়ংকর অপরাধীদের যদি কোনোভাবে ক্ষমা করা হয় তবে ভবিষ্যতে সরকার বদলের পরই তারা জেল থেকে মুক্ত হয়ে হয়তো ট্রাইব্যুনালের বিচারকার্যের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেক সদস্যকে হত্যা করবে। বিচার চলাকালীনই কিছু সাক্ষীকে হত্যা করা হয়েছে, আহত করা হয়েছে। কাজেই যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি মানবতা দেখানোর কোনও কারণ আমি খুঁজে পাই না।
তবে প্রশ্ন হল, এই কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দিলেই কি দেশের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? জঙ্গিবাদ নির্মূল হবে? জামায়েত নিষিদ্ধ হলেই কি দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চিরতরে মুছে যাবে? না।
কিছুদিন আগে ইউটিউবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি টেলিফিল্ম দেখছিলাম। এটাকে টেলিফিল্ম না বলে ডকুমেন্টারি ফিল্মও বলা যায়। কারিগর নামে পরিচিত এক লোক তার গ্রামে মুসলিম ছেলেদের মুসলমানি করাতেন। ৭১এ গ্রামে গ্রামে যখন হিন্দুদের হত্যা করা হচ্ছিল, তখন কারিগর ও তার স্ত্রী মিলে একটি বুদ্ধি বের করলেন। তারা রাত জেগে সকল হিন্দুদের একটি মুসলিম নাম বানিয়ে লিস্ট করলেন। পাকিস্তানি মিলিটারি এলে কারিগর তাদেরকে লিস্টটি দিয়ে জানালেন এরা সবাই মুসলিম, তিনি নিজে এদের মুসলমানি করিয়েছেন। কথার সত্যতা যাচাই করতে মিলিটারিরা তাঁকে কোরান মাথায় নিয়ে একথা বলতে বলল। তিনি বললেন। ওই গ্রামের অনেক হিন্দুই নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে কোরান মাথায় নিয়ে মিথ্যে বলার কারণে তাঁকে এক ঘরে করা হয়। স্বাধীন দেশে বিচার বসিয়ে তাঁকে অপমানিত করা হয়। আসলে আমরা পাকিস্তান থেকে মুক্ত হলেও সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা থেকে মুক্ত হতে পারে নি।
৪৪ বছর ধরে যেই জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িক বীজ বপন করা হয়েছে তা এত সহজে দমন হওয়ার নয়। মুক্তমনা, সংখ্যালঘুদের হত্যার পর সরকারের ভূমিকায় আমি হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু গুলশানের ঘটনার পর জঙ্গি দমনে সরকারের ভূমিকা কিছুটা আশা জাগিয়েছে। যদিও জানি যে আবার একজন মুক্তমনাকে হত্যা করা হলে নির্লজ্জ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিহতের লেখা খতিয়ে দেখার বিষয়কে গুরুত্ব দিবেন। হাসিনা জানাবেন, লেখার কারণে মেরে ফেললে তার সরকার এর দায় নিতে পারবে না। ঠিক এ কারণেই স্বাধীন দেশে যুদ্ধাপরাধীরা রাজনীতি করার সাহস পেয়েছিল। আমাদের সমস্যা হল, আমরা এক পা এগিয়ে গেলে আবার তিন পা পিছিয়ে যাই।
দেশ নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখতে চাই, স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখতে চাই। তাই যুদ্ধাপরাধীদের রায় কার্যকরে সরকারের সাহসী ভূমিকার প্রশংসা করার পাশাপাশি সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম বাতিলের দাবী জানাই, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক, মুক্তমনা-সংখ্যালঘু হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হোক, ভিন্নমতের মানুষেরাও স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার পাক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন