বুধবার, ২৯ জুলাই, ২০১৫

চুল আমার, ঘুম হারাম অন্যের!

আমার আত্মীয় স্বজন-ক্লাসমেইট-শিক্ষক-মাবাবা সবারই আমার চুল নিয়ে বিশেষ সমস্যা লক্ষ্য করে আসছি ছোটবেলা থেকেই। এমনকি প্রথম দেখায় অধিকাংশ মানুষই আমার চুল নিয়ে আপত্তি তুলেছেন-তুলছেন, অনধিকার চর্চা করে যাচ্ছেন। তাদের কথাবার্তা শুনলে মনে হয়, তাদের যাবতীয় সুখ সমৃদ্ধি আমার ওই ছোট চুলেই আটকে আছে। বয়সে অতি ছোট ছিলাম বলে আগে কিছু বলতাম না। এখন মাঝে মাঝে পাল্টা কথা বলে ফেলি বলে, ‘বেয়াদপ’ খেতাব পাচ্ছি। আগে মা বাবা এসব নিয়ে অনেক বকেছে, কিন্তু আমি আমার অবস্থান থেকে এক ‘চুল’ ও নড়ি নি। যুক্তি না দেখিয়ে কেবল মানুষ খারাপ বলে, দেখতে সুন্দর লাগে না, এইসব বললে আমি মানব কেন? মানুষ খারাপ বললে আমার কী? ভালো খারাপ কি চুল দিয়ে হয়? অন্যের সুন্দর লাগে কি লাগে না সেসব জেনে আমি কী করব? 

মা বাবা এখন অনেকটাই অভ্যস্থ হয়ে গেছেন, তাই আর কিছু বলেন না। স্কুলটা মিশনারি হওয়ায় খুব বেশি সমস্যায় পরতে হয়নি স্কুল জীবনে। তবে কলেজের প্রথম দিন থেকেই এই নিয়ে আমি নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি-হচ্ছি। ক্লাশ মেইটরা যখন বলে, তোমার চুল ছোট কেন? বলি, আমার চুলগুলো লম্বা হয় না, একটু টেনে দাও না প্লিজ, আরাম লাগে মত,এতে চুল লম্বা হয়ে যাওয়ার একটা সম্ভবানা আছে। আমার কাছ থেকে এমন ব্যঙ্গানিক উত্তর পেয়ে তারা আরও সিরিয়াস হয়ে জানতে চায়, ‘চুল ছোট কেন?’ আমি পাল্টা প্রশ্ন করি, তোমার চুল লম্বা কেন? ওরা বলে, ভালো লাগে তাই। আমি বলি, আমার ও ভালো লাগে তাই। তারপর বলে, কিন্তু মেয়েরা তো চুল বড় রাখে এটাই নিয়ম। আমি বলি, আমি রাখি না, এই নিয়ম পছন্দ না। কোন সমস্যা? তারপর বলে, না সমস্যা নেই, তবুও...

কলেজের শুরু থেকেই একজন ম্যাডাম আমার চুলের পিছনে লেগে আছেন। ওনারও সব সুখ সমৃদ্ধি আমার চুলে আটকে আছে। উনি সেই প্রথম থেকেই আমাকে এই নিয়ে নানান উপদেশমূলক কথাবার্তা শুনাচ্ছেন, আমি ম্যাডামের সামনে ‘ইয়েস ম্যাম, ইয়েস ম্যাম’ করলেও আমার কোন পরিবর্তন দেখতে না পেয়ে উনি বেশ হতাশ হয়েছেন। ক’দিন আগে ডেকে নিয়ে গিয়ে কিছু প্রথাগত কথাবার্তা বলে আমাকে বুঝানোর বিশেষ চেষ্টা করলেন। আমি তো সেই আগের মত, 'ইয়েস ম্যাম, ইয়েস ম্যাম'। ম্যাডামের সাথে এই বিষয় নিয়ে পাল্টা কিছু বলে বিপদে পরতে চাই না। কারন আমার যুক্তি তার হিজাবের উপর দিয়ে চলে যাবে। আবার আমার যুক্তিকে তিনি অশ্রদ্ধা মনে করলে তো মহাসমস্যা। অশ্রদ্ধা তো আমি করি না তাঁকে। শুধু ম্যাডাম কিংবা মা বাবার কথা বলছি কেন! তারা না হয় প্রথাগত চিন্তা ধারার মানুষ। এসব নিয়ে ফেইসবুকের 'প্রথা বিরোধী'(?)-দের ও তো বেশ আপত্তি লক্ষ্য করেছি। ‘চুল বড় করলে সুন্দর দেখাবে’-- লম্বা চুল আমার ভয়ংকর বিরক্ত লাগে, কানের নিচে চুল লাগলেই মনে হয় ঝাড়ু কানে লাগছে। নিজেকে অস্বস্তিতে রেখে অন্যর চোখে সুন্দর হওয়ার মত যন্ত্রণাদায়ক আর কিছু আছে?

বুধবার, ২২ জুলাই, ২০১৫

কোথায় গিয়ে থামবে এই লাশের মিছিল?

অনলাইন জুড়ে আজ শোক। অনন্ত বিজয় দাস কে নিয়ে কথা, আলোচনা। এর আগে অভিজিৎ রায়, বাবু ভাই আমার পরিচিত ছিলেন, তাদের লেখা আমি নিয়মিত পড়তাম। অভিজিৎ রায় প্রায় আমার লেখায় লাইক দিতেন, একদিন কমেন্ট ও করেছিলেন, তবে ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছিল না।  বাবু ভাইয়ের সাথে তো আলাপ হয়েছিল বেশ কয়েকবার। কিন্তু অনন্ত বিজয় দাস সম্পর্কে আমি কিছুই জানতাম না বলে তার ব্লগগুলো ঘাটাঘাটি করলাম। অনেকেই হয় তো জানেন না অনন্ত সহ তার নয় সহযোদ্ধা ২০০৮ সালে মরণোত্তর চক্ষু দান করেছিলেন। অনন্ত কিন্তু তার চোখগুলো দানের ক্ষেত্রে আস্তিক নাস্তিক ভাগ করেন নি। ধর্মের দোহায় দিয়ে এমন মানবতাবাদী মানুষটিকেই কিনা খুন করল ধার্মিকেরা? আমি ভাবছিলাম, তাকে যেভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তার চোখ গুলো কি অক্ষত আছে? কোন মানুষকে তার চোখ গুলো দিয়ে পৃথিবীর আলো দেখতে পাবে?


ফেব্রুয়ারীতে অভিজিৎ হত্যা, মার্চে বাবু হত্যা, এপ্রিলে টিএসসিতে যৌন সন্ত্রাস যার উদেশ্য ছিল বাঙ্গালী সংস্কতির উপর আঘাত, মেতে অনন্ত হত্যা। বাংলাদেশটাকে বাকিস্তান বানানোর জন্য তারা সম্ভবত প্রতি মাসে মাসে এমন হত্যা যজ্ঞের কর্মসুচী হাতে নিয়েছে। কারা করছে এইটা নিয়ে সম্ভবত কোন বিতর্কের প্রয়োজন পরে না। এই দেশে সব জঙ্গি সন্ত্রাসীদের দল জামায়েত ইসলাম। তারা কখনো হেফাজতে ইসলাম নামে 
দেশে জঙ্গি মিছিল করে, লুটপাট চালায়, কখনো আনসার উল্লাহ বাংলা টীম নামে ব্লগার হত্যা করে, এক নামে ফেইল করলে নতুন নামে নতুন দল করে। মুল কিন্তু একই থাকে।

অভিজিৎ হত্যার প্রায় দুই মাস পর আলকায়দা ভিডিও বার্তা পাঠায় যে, তারাই নাকি অভিজিৎকে হত্যা করেছে। আলকায়দা হত্যার দায় স্বীকার করার পর সরকার অনেকটা চাপমুক্ত, কারন আলকায়দার বিচার তো তারা করতে পারবে না। কিন্তু অভিজিৎকে কি বিদেশ থেকে জঙ্গি আমদানি করে হত্যা করা হয়েছে? দেশে এত জঙ্গি কারখানা মাদ্রাসা থাকতে বিদেশ থেকে জঙ্গি আনার কি দরকার পড়েছে? অভিজিতের হত্যাকারীরা এদেশীয় জঙ্গি। তাদের সাথে আলকায়দার যোগসুত্র তো থাকবেই, এতে অবাক হওয়ার কি আছে? ওরা ভাই ভাই। এক ভাইয়ের বিপদে আরেক ভাই দায় স্বীকার করে জানান দিয়েছে যে ভাই ভাইয়ের পাশে আছে।

অনেকে বলছেন, কি দরকার ছিল এসব লেখালেখি করার, লিখেছে কোপ খেয়েছে। কিন্তু লেখালেখি না করলে কি কোপ খেত না? নিশ্চয়ই খেত, সেটা ব্লগিং করার জন্য না হয়ে অন্য কোন কারনে হত হয়তো। যারা অভিজিৎ বাবু অনন্তদের হত্যাকে কেবলই ব্লগার হত্যা বলে নিজেরা নিরাপদে আছেন বলে মনে করছেন, তাদের জানিয়ে রাখি, তারা ব্লগার হত্যা দিয়ে শুরু করেছে। সব ধ্বংস না করে কিন্তু তারা শেষ করবে না এই হত্যা যজ্ঞ। এখন তারা নাস্তিক ব্লগার হত্যা করে ধার্মিকদের সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করছে। তারা প্রথমে মুকচিন্তার পক্ষের সব নাস্তিকদের একে একে হত্যা করে নাস্তিক মুক্ত দেশ গড়বে, অতপর বিধর্মী মুক্ত দেশ গড়বে। তারপর মোডারেটদের ধরবে, এভাবে ধীরে ধীরে শিয়া-সুন্নী-কাদিয়ানী নিজেদের মধ্যে এমন বিভেদ করে নিজেরা নিজেদের হত্যা করবে। এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের মসজিদ বোমা মেরে উড়িয়ে দিবে যেমনটা পাকিস্তান আফগানিস্তান ইত্যাদি দেশগুলোতে ঘটছে। কাজেই ব্লগার হত্যা বলে বলে এই হত্যাযজ্ঞকে হালকা ভাবে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। দেশকে জঙ্গিবাদীদের হাত থেকে রক্ষা করতে চাও তো আস্তিক নাস্তিক ধর্ম বর্ণ সব ভেদাভেদ ভুলে সবাই এক হও। নয়তো দেশ বাংলাস্তান হতে আর বেশিদিন নেই বলে রাখলাম

১২//২০১৫

যাদের তোমরা মানুষ ভাবো না, তারাই আজ শিখিয়ে দিলো মানুষের সংজ্ঞা !

মুক্তমনা ব্লগার ও অনলাইন একটিভিস্ট ওয়াশিকুর বাবুর হত্যাকারীদের ধরিয়ে দেন দুইজন ভিন্ন লিঙ্গের মানুষ। তাদের মধ্যে একজনের নাম লাবন্য। রাজধানী ঢাকার একটি গিঞ্জি এলাকায় বাস করেন লাবণ্য। তিনি বলেন- আমরা হিজড়া সম্প্রদায়আমরা এই সমাজে কোন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ হোক তা চাই না। তিনি জানান- ঘটনার দিন ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় পালিয়ে যাওয়া খুনিদের দেখে তিনি ঝাপটে ধরে ফেলেন। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে একজন পালিয়ে গেলেও বাকি দুইজনের টি-শার্ট আঁকড়ে ধরে রাখতে সক্ষম হন। ওই অবস্থায় পুলিশ ও স্থানীয় জনতা দৌড়ে এসে তাদের ঘিরে ফেলে। এসময় সাথে তাঁর গুরু স্বপ্না ও ছিলেন।


যাদের মানুষ ভাবতে আমাদের বড্ড অস্বস্তি লাগে, তারাই আজ আমাদের শিখিয়ে দিলেন মনবতা কাকে বলে.. লাবন্য বলেন, লাবণ্যর বয়স যখন ৯ বছর, তখন আবিষ্কৃত হয় তিনি অন্য ৮/১০ জনের মত না, তিনি এমন একটি লিঙ্গের মানুষ যার জন্য তাঁর সব আত্মিয় স্বজন তো বটেই তাঁর নিজের বাবা-মাও অস্বস্তিবোধকরে দূরে সরে যায়। পুরুষ কিংবা নারী এই দুই লিঙ্গের বাইরে হবার কারণে তিনি পড়ে যান এক নির্মম অমানবিক অবস্থায়। কচি বয়সে সামাজের লৈঙ্গিক বৈষম্যের শিকার হয়ে পরিবারের বাইরে চলে যেতে বাধ্য হন। কতটা বর্বর আমরা, কতটা অসভ্য আমাদের সমাজ ব্যবস্থা।

পুরুষতান্ত্রিক সমাজ পুরুষকে করেছে প্রথম লিঙ্গ। নারী ছাড়া তাদের চলে না বলে নারীকে দয়া করে দ্বিতীয় লিঙ্গ করেছে। আর যাদের দরকার পরে না, যাদের ছাড়াই তারা চলতে পারে বলে মনে করে তাদেরকে সমাজ থেকেই আলাদা করে দিয়েছে। তাদেরকে মানুষ বলেই মনে করে না আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। আমার ধারনা যদি নারীকে তাদের বংশ বৃদ্ধির কাজে, তাদের দাসীগিরি করার কাজে, তাদের মনোরঞ্জনের কাজে প্রয়োজন না হতো, তবে নারীকেও তারা সম্ভবত সমাজ থেকে আলাদা করে দিতো, মানুষ বলে গণ্য করতো না। এখনো কি নারীকে তারা মানুষ বলে মনে করে??

কেবল মাত্র নারী পুরুষের বাইরে ভিন্ন কোন লিঙ্গ নিয়ে জন্মের অপরাধেই (!) আমরা তাদের আমাদের পরিবার সমাজ থেকে বের করে দিলাম। রাষ্ট্রের মানবধিকার, মৌলিক অধিকার নামক শব্দগুলো তাদের জন্য নয়। কারন তারা আমাদের দৃষ্টিতে মানুষ (?) নয় বলে?? মানুষের সংজ্ঞা আমরা নিজেদের সুবিধামত করে নিজেরাই বানিয়ে নিলাম। আমাদের নিজেদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারনে আমরা, মানুষ শব্দটির সীমা সৃষ্টি করে দিলাম। আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণেই আজ কিছু মানুষকে যন্ত্রনাময় জীবনযাপন করতে হচ্ছে। 


আমি হিজড়া বলি না, তৃতীয় লিঙ্গ বলে তাদের অপমান করতে চাই না, ভিন্ন লিঙ্গ বলি। আমি সমাজের লিঙ্গবাদ প্রথা বিরোধী। আমাদের দৈনন্দিন কাজগুলোতে কি লিঙ্গের প্রয়োজন আছে? নেই অবশ্যই। লিঙ্গ বৈষম্য সৃষ্টির জন্যই মুলত সৃষ্টি হয়েছে লিঙ্গবাদ। আর এই লিঙ্গবাদের নির্মম স্বীকার শিখণ্ডী সম্প্রদায়ের মানুষগুলো। নারী তো প্রতিনিয়ত অত্যাচারিত, নির্যাতিত, অধিকার বঞ্চিত হচ্ছেই, সেসব কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

কে ধর্ম মানল, কে মানল না এসব নিয়ে আমাদের এত মাথাব্যাথা। ধার্মিকদের মতে তো ঈশ্বর সর্বশক্তিমান, তিনি মহান, দয়ালু, দয়ার সাগর। ধর্ম বিশ্বাসী নয় বলে, দয়ালু ঈশ্বরের দয়ালু বান্দারা রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর বাবুকে দয়ালু ভাবে হত্যা করেছে। কেউ কি আমাকে বলবেন এই ভিন্ন লিঙ্গের মানুষগুলোকে কোন ধর্মে মানুষের সম্মান দিয়েছে? কোন ধর্মের ঈশ্বর তাদের সৃষ্টি করেছে? কোন ধর্ম পালন করবে তারা?



কেবল মাত্র আমাদের মত নয় বলেই তাদেরকে আমরা পরিবার সমাজ থেকে আলাদা করে দিলাম, কেড়ে নিলাম তাদের সকল অধিকার। দিন শেষে আমরাই নাকি ধার্মিক, ধর্মের সমালোচনাতে আমাদের অনুভূতি ওলট পালোট হয়ে যায়, আমরাই রাত দিন মানবিকতার গীত গাই, নিজেদের এক একজন বিশাল মানবতাবাদীর সার্টিফিকেট দিয়ে দিই।

লজ্জায় মাথা নুয়ে আসে, নিজের উপর ঘেন্না হয় আমার নিজেকে এই সমাজের একজন ভাবতে। 

আজব শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি কামনা করছি

প্রশ্নপত্র ফাঁস অতি ভালো জিনিস এতে শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ভিটামিন A+ পাওয়া যায় পিতামাতাদের বলি, আপনারা তো আপনাদের সন্তান সোনার ডিম (গোল্ডেন) পাড়বে এই আশা নিয়ে নিয়মিত ছেলেমেয়দের হরলিক্স খাওয়ান অথচ পরীক্ষার আগের রাতে শুধু মাত্র ফাঁস প্রশ্ন গুলোই সন্তানদের ঠিকমত খাওয়াতে পারলে, সোনার ডিম অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায় তাহলে আর দেরি কেন?

''হরলিক্সকে না বলুন, প্রশ্নপত্র সেবন করুন''

প্রশ্ন ফাঁসের কারণে শিক্ষামন্ত্রী ফেইসবুকই দায়ী মনে করেন পরীক্ষার সময় ফেইসবুক বন্ধ করে রাখা গেলে প্রশ্নপত্র নাকি ফাঁস হবে না ফেইসবুক বন্ধ করলে  twitter, whats app, we chat, robi chat room, mobile সহ আরও অনেক বিকল্প পথ আছে বলেন, কয়টা বন্ধ করবেন??

তার চেয়ে পরীক্ষাটাই বন্ধ করে দিলেই তো সব ঝামেলা শেষ হয়ে যায় পরীক্ষা ছোটছোট ছেলেমেয়েদের মধ্যে হিংসা-বন্ধুদের মধ্যে শত্রুতার শিক্ষা দেয় কি দরকার কার চেয়ে কে ভালো করবে এই রেইস লাগিয়ে ছোট ছোট বাচ্চাদের মনে হিংসা সৃষ্টি করার? ছোটবেলায় বাচ্চাদের মনে এভাবেই পরীক্ষার নম্বরের প্রতিযোগিতা শিখিয়ে তাদের মধ্যে হিংসা সৃষ্টি করি, সবাইকে বাদ দিয়ে শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবতে শেখায়। এভাবেই আমরা একের পর এক হিংসুক এবং স্বার্থপর প্রজন্ম সৃষ্টি করছি। তারা ভবিষ্যতে দেশ কিংবা মানুষ কোন কিছু নিয়েই ভাববে না। ভাববে শুধুই নিজের কথা। কারন সেই শিক্ষাই তো ছোট থেকে তারা পেয়েছে।

লেখাপড়া নাকি এখন সৃজনশীল পদ্ধতিতে, মুখস্থ করার কিছু নেই এই যদি হয়, তাহলে ওপেন বুক টেস্ট শুরু করলেই পারেন অনেকে গর্ব করে বলেন, 'না বুঝে মুখস্থের দিন শেষ।' সৃজনশীল পদ্ধতিতে নাকি বুঝে মুখস্থ করতে হয়, আগে নাকি না বুঝে মুখস্থ করা যেত মুখস্থ তো করতেই হচ্ছে, সেটা বুঝে হোক বা না বুঝে  লেখাপড়া মাথায় বোঝা করে রাখতে হবে কেনআমি পড়ব, বুঝব, বুঝে সেটা নতুন কিছুতে প্রয়োগ করব সেক্ষেত্রে বইয়ের সাহায্য নিলে ক্ষতি কোথায়?

৪০ নম্বরের নৈবক্তিকে ভালো করতে হলে, আপনাকে জানতে হবে- কোন কবি কত সালে জন্ম গ্রহন করেছে, সে জীবনে কখন কি পুরষ্কার পেয়েছে, কয়টা গ্রন্থ লিখছে, কোন বিজ্ঞানী কখন মারা গেছে, সে চাইনিজ নাকি জাপানিজ, বিজ্ঞানী হওয়ার আগে সে ট্রাক চালাতো নাকি ভ্যান গাড়ি, বাংলাদেশে কয়টা চিনির কল আছে, সেখানে কয় কেজি চিনি হয়........... সহ আরও অনেক অনেক কিছু এসব বুঝি মুখস্থ করতে হয় না?


সবাইকেই শুধুমাত্র লেখাপড়াতে সেরা হতে হবে এমন কোন কথা আছে নাকিযে যেই বিষয়ে পারদর্শি সে সেখানে ভালো করবে কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাটা এমন যে, এখানে লেখাপড়াকেই মানুষের একমাত্র মেধা হিসেবে ধরে নেয়া হয় এমন শিক্ষা ব্যবস্থায় লেখাপড়ার চাপে কার কোন দিকে মেধা আছে সেটাই ভুলে যেতে শুরু করে স্টুডেন্টরা তারপর বড় হয়ে বলে, আমি ছোটবেলায় খুব ভালো গাইতে/ লিখতে/ খেলতে........... পারতাম এভাবেই অবেহেলায় নষ্ট হয়ে যায় মেধাগুলো 
বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের বলা একটা লাইন, সেটা অনেকটা এরকম যে, 'তুমি যদি একটা মাছকে মই বেয়ে উপরে উঠতে বল, তবে সে সারা জীবন নিজেকে অযোগ্য ভেবেই কাটিয়ে দিবে' যে যেই বিষয়ে ইন্টেরেস্টেড সে সেই বিষয়ে ভালো করবে, এটাই স্বাভাবিক

বর্তমানে সবাই লেখাপড়া করছে যাতে ভালো একটা চাকরি পায়, শিক্ষিত একটা বউ পায়, পয়সাওয়ালা একটা জামাই পায়, বাবা মা যাতে মানুষের সামনে গর্ব করে রেজাল্ট বলতে পারে এইসব কারনেই মূলত সবাই লেখাপড়া করছে শিক্ষার উদ্দেশ্য কি এইসব?


লেখাপড়াটা যেন হয় নিজের জন্য, পরীক্ষায় পাস করার জন্য না আমি আমার জন্য পড়ব, আমার যেটা পড়তে ইচ্ছে হয় সেটা পড়ব জোর করে কিছু পড়া মগজে ঢুকিয়ে ভালো রেজাল্ট করলেই কি শিক্ষা হয় যায়??? থ্রি ইডিয়েস মুভি থেকে আমার পছন্দের একটা লাইন বাংলায় বলি, ' চাবুকের ভয় দেখিয়ে বনের বাঘকে ও হয় তো চেয়ারে বসানো শিখিয়ে ফেলা যাবে, কিন্তু তাকে আমরা ওয়েল ট্রেইন্ড বলতে পারি, ওয়েল এডুকেইটেড নয়'


এই বছর থেকে তথ্য প্রযুক্তি নামে নতুন একটি আবশ্যিক বিষয় যোগ করা হয়েছ অথচ কোন স্কুল কলেজে এই বিষয়ে অভিজ্ঞ কোন শিক্ষক নেই, শহরেই এই অবস্থা, গ্রামের কথা তো বাদ ই দিলাম আমার স্যার ভালো বুঝায় বলে , বিষয়টা আমার ভালো লাগে কিন্তু না বুঝলে এইটা বড়ই যন্ত্রণাদায়ক একটা সাবজেক্ট সরকার নাকি কিছুদিনের মধ্যে সব কলেজ থেকে একজন একজন শিক্ষককে ঢাকায় এই বিষয়ে ট্রেনিং দিবেন শিক্ষকদেরই বুঝা এখনো শেষ হয় নি, তাইলে ছাত্ররা কি আধ্যাত্মিক ভাবে বুঝবে এই সাবজেক্টএকে তো ত্রুটি পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা, তার উপর সরকারি ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষায় গোল্ডেন পাওয়া ছাত্ররা ফেইল করে কেন, সেটা নিয়ে ছাত্রদের দোষ ধরা হয়, সেসব নিয়ে কত ব্যঙ্গ, যেন নিজেরা কত যোগ্য!


এস সি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল ২ তারিখ থেকে, অথচ এই দিনেই ২০ দল হরতালের ডাক দিলো!! মানুষ পোড়ানোর এই হরতাল যারা করে তারা কি অশিক্ষিত? মোটেই না তারা এক এক জন বড় বড় ডিগ্রীধারী তবে কোন কাজে লাগছে তাদের এই শিক্ষা?? এই হল আমাদের দেশের শিক্ষা এবং শিক্ষিতের নমুনা

আমার মনে হয় এইবার অন্তত ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থাটি নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত


৩০/১১/২০১৪

সোমবার, ২০ জুলাই, ২০১৫

সব পুরুষ এক না!

অনলাইনে আমার লেখায় কমেন্টগুলোর মধ্যে একটা কমন কমেন্ট হল, সব পুরুষ এক রকম না’। মানে হল, সব পুরুষ খারাপ না। তাদের মতে, হাতে গোনা কয়েকজন পুরুষের জন্যই তাদের বদনাম হয়। হাতে গোনা কয়েকজনের জন্যই কি দেশের প্রতিটা নারী, প্রতি মুহুর্তে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে? 

১৪ এপ্রিল টিএসসিতে লিটনরা কিন্তু মাত্র কয়কেজন ছিলেন। লক্ষ লক্ষ লোকের মাঝে কয়েকজন লিটন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেদিন লড়াই করেছেন কিছু পশুর সাথে।


সব পুরুষ নারীবিদ্বেষী- লম্পট-ধর্ষক-প্রতারক এই ভয়ংকর ভাবনা আমি স্বপ্নে ও ভাবতে চাই না। কিন্তু ভালো পুরুষগুলো কি কেবল ফেইসবুকেই পাওয়া যায়! নাকি তারা ফেইসবুকেই ভালো, বাস্তব জীবনে তারাও একেকজন চরিত্রহীন-লম্পট। আমার বাস্তব জগতের চারপাশে তো পশু পুরুষে পরিপুর্ণ! 

এখন হয়তো বলবেন, তোমার বাপ-ভাই ও কি খারাপ? 

- আমার বাবা-ভাই আমার জন্য ভালো, তারা আমার জন্য নিরাপদ। কিন্তু তারা আমার মত আর পাঁচজন নারীর জন্য নিরাপদ এই কথা তো আমি বুকে হাত রেখে বলতে পারি না। কারন তারা ছোটবেলা থেকে পুরুষতান্ত্রিক চিন্তা চেতনা দেখে-শিখে-চর্চা করতে করতে বড় হয়েছে। সমাজের ধর্ষক-লম্পট গুলো তো সম্পর্কে কারো না কারো বাবা-ভাই-সন্তান হয়।





জন্মের পর থেকেই কেউ ধর্ষক নারীবিদ্বেষী হয় না। শিশু বড় হতে হতে ধীরে ধীরে পরিবার সমাজের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজের জীবনে সেসবের চর্চা করে। সমস্যা কিন্তু পুরুষের না, সমস্যা চিন্তা চেতনার, সমস্যা সমাজ ব্যবস্থার! আমাদের চিন্তাচেতনার পরিবর্তন দরকার। সমাজের কুপ্রথা-নিয়মগুলো ভাঙ্গার সাহস দরকার। কিন্তু আমাদের দেশে তো আবার কেউ নিয়ম ভাঙ্গতে গেলে, নিয়মের বাইরে কিছু ভাবলে, কিছু করলে তার জন্য চাপাতি শান দেয়া হয়। তবে পরিবর্তনটা আসবে কি করে? আমরা কি তবে হাঁটি হাঁটি পা পা করে পিছনের দিকেই যাবো?

ধর্ম অধর্ম সর্বত্র পিতৃতন্ত্রের রাজত্ব

আমার ছেলেবন্ধুদের কাছে প্রায় শুনি, মেয়েরা নাকি স্বার্থপর প্রমান দিতে বললে বলে, মেয়েরা পরীক্ষায় দেখায় না, একজন কোন নোট পেলে অন্যদের দেয় না অথচ ছেলেরা এর সম্পূর্ন ব্যতিক্রম হয় আমার কাছে ও মাঝে মাঝে মনে হয় আসলেই কি তাই! মেয়েরা কি আসলেই স্বার্থপর? তারপর অনেক ভেবে বুঝতে পারলাম, মেয়েরা স্বার্থপর হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়

মেয়েরা কেমন হয় সেটা আমার সাথে তুলনা দিয়ে লাভ নেই আমি এবং আমার বন্ধুরা সব ক্লাসের অন্য মেয়েদের তুলনায় ভিন্ন তো একদিন আমার মেয়ে বন্ধুরা আলোচনা করছিল, 'দেখ, ছেলেরা কত সুন্দর ক্লাস পালায়, কেউ ধরা পরলে অন্যেরা তাকে বাঁচিয়ে দেয় আর মেয়েগুলাকে দেখ, নিজেরা তো ক্লাস পালায় না, আমরা পালালে একটু যে সহযোগিতা করবে সেই মানসিকতাটুকু ও নেই, স্যারের এক থাপ্পড়ে সব কথা গড়গড় করে বলে দিবে মেয়েগুলা সব বোরিং, খালি লেখাপড়া- সাজগোজ-মেইকাপ-সিরিয়াল সহ আরও দুনিয়ার যত ন্যাকা ন্যাকা বিষয় আছে এসবই তাদের আড্ডার বিষয় বস্তু ক্লাসের ছেলেরা সবাই পিছনের বেঞ্চে বাসার জন্য মারামারি করে, আর ঢঙ্গী গুলা ফার্স্ট বেঞ্চে বসার জন্য মারামারি করে। মারামারি আর করে কই! পারে তো খালি কান্নাকাটি আর ঝগড়া করতে

আমাদের ক্লাসে এমন মেয়েদের সংখ্যাই বেশি আর আমার মত হাতে গোনা কয়েকজন আছে, যারা ক্লাস পালানো- কলেজ পালানো- মারামারি- দলগত পরীক্ষা ইত্যাদি কাজের জন্য বিখ্যাত তো এই দুই শ্রেণির মেয়ে একদিকে লেখাপড়া- সাজগোজ- নিয়ে থাকা ভীতুর ডিম, যাদেরকে আমাদের ভাষায় আমরা স্বার্থপর বলি এই বয়সেই তাদের মধ্যে একটা মহিলা মহিলা ভাব চলে এসেছে এদের কৈশোর-তারুন্য বলতে কিছু নেই এরা শৈশব পার করেই প্রাপ্ত বয়স্কদের মত আচরণ করে আর অন্যদিকে আমরা কজন উড়নচণ্ডী, যা খুশি তাই করে বেড়াই, লেখাপড়ায় আমাদের ভয়াবহ অ্যালার্জি এই দুই শ্রেণির মধ্যে পার্থক্য কোথায়? কেন এমন হয়?

আমি এর কারণ খুঁজে পেয়েছি কিছুটা যেই মেয়েগুলোকে আমরা স্বার্থপর- ঢঙ্গী -ন্যাকা বলি, তারা আসলে বেশিরভাগ চার দেয়ালে আবদ্ধ কিছু প্রানী আমাদের সমাজে মেয়েরা অধিকাংশই এমন চার দেয়ালে আবদ্ধ, শারিরীক ভাবে না হলেও মানসিক ভাবে তো অবশ্যই  তাদের স্বাধীনতা কলেজ আর স্যারের বাসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ তাদের অধিকাংশকেই কলেজে, স্যারের বাসায় আনা নেয়া করার জন্য লোকের দরকার পরে এই মেয়েদেরই সমবয়সী একটি ছেলেকে বাবা মা কলেজে নিতে আসলে সেটা তার জন্য ভয়ংকর অপমানের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় আমি দেখেছি এইসব মেয়েদের বন্ধুদের সাথে একদিন বাড়ির বাইরে ঘুরতে যাওয়ার জন্য বাবা মার কাছে অনুমতি পেতে কত কষ্টই না করতে হয় আর মেয়েকে বাইরে পাঠিয়ে বাবা মা সারাক্ষণ চিন্তায় থাকে, মেয়ে ফিরল কিনা এই নিয়ে আর একই সমবয়সী একটি ছেলের কথা ভাবুন! ছেলে বাইরে যাবে, এতে আবার অনুমতি নেয়ার কি আছেতাহলে বলুন, এমন মেয়েরা স্বার্থপর হবে না তো কি হবে? তারা জগতের কতটুকুই দেখেছে? বাইরের জগতটি তো তাদের কাছে নিষিদ্ধ কিছুর মত তারা শুধু এটুকুই জানে বাইরের  জগতটি তাদের জন্য নিরাপদ নয় বাইরের জগতে ঘুরে বেড়ানোর অধিকার তাদের নেই তাদের সব কাজ ঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ একটিমাত্র কাজের জন্য তাদের বাইরে যেতে হয় তা হল লেখাপড়া আসলে তারা  বন্দী, তারা আসলে দেয়ালের ভিতরেরই কিছু প্রানী আর যারা আকাশ বলতে দেয়াল বুঝে, মাঠ বলতে মেঝে বুঝে এমন চার দেয়ালে আবদ্ধ থেকে কিভাবে কেউ আকাশের মত উদার হবে ?  যে যত দেয়ালের ভিতর থাকবে সে তত সংকীর্ন মনের হবে, স্বাভাবিক কথা

এই যে তারা লেখাপড়া করছে এই লেখাপড়ার মধ্যে ও কি তাদের মুক্তি সম্ভব? আমার মনে হয় না কারণ তাদের লেখাপড়া করা এবং তাদের বাবা মায়েদের মেয়েকে লেখাপড়া করানোর একমাত্র উদ্দেশ্য ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার দেখে, ধনী একটি পরিবারে মেয়ে বিয়ে দেয়া আমাদের সমাজে পরিবারে অতিরিক্ত অর্থের দরকার না পরলে ঘরের বউদের চাকরি করার অনুমতি মিলে না সুতরাং বিয়ের মধ্যে দিয়েই মেয়েদের জীবনের সকল সম্ভাবনার ইতি ঘটে


আমাদের শহরের সেরা কলেজটিতে মেধা তালিকায় প্রথম ১৫০ জনের মধ্যে ১১০জন মেয়ে, ৪০জন ছেলে আমাদের স্কুলের বন্দী প্রানীরাই সব ওই কলেজে চান্স পেয়েছে আমার এক বান্ধবি একদিন মজা করে বলছিল, 'ওদেরকে ভালো কলেজ টাতে চান্স দেয়ার কোন মানে হয়? গার্জিয়ান ছাড়া হাঁটতে পারে না, ঘোমটা ছাড়া চলতে পারে না, এই মেয়েগুলা তো বড় বড় ডিগ্রি নিয়ে সেই হাড়ি পাতিলই মাঝবে শুধু শুধু কিছু সিট অপচয়'  বলা হয়ে থাকে দেশের সেরা ছাত্রছাত্রীরা ডাক্তারিতে চান্স পায় এইবার মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়েছে একটি মেয়ে ডাক্তারিতে বেশিরভাগ চান্স পায় মেয়েরা কিন্তু বাংলাদেশের সেরাসেরা ডাক্তারদের মধ্যে কয়জন মেয়ে? রাস্তা ঘাটে ডাক্তারদের সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়, সেখানে এই পর্যন্ত কয়জন মেয়ে ডাক্তারের নাম পেয়েছেন? জানি খুবই কম সংখ্যকই মেয়ে পাবেন আমি তো শুধু ডাক্তারি পেশা দিয়ে একটি উদাহরণ দিলাম এমন সব পেশার ক্ষেত্রেই ঘটে ছেলেদের ক্যারিয়ার যখন শুরু হয়, মেয়েদের ক্যারিয়ারের তখন ইতি ঘটে বিয়ের মাধ্যমে


শিক্ষাখাতে সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করছে এই আশা নিয়ে যে, আজকের শিক্ষার্থীরাই ভবিষ্যতে দেশের উন্নয়নমূলক কাজে লাগবে তারাই তাদের মেধা দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে অথচ এই শিক্ষার্থীদের বিরাট একটি অংশের মেধা অবহেলায় নষ্ট  হয় তাদের মেধার অপচয়, সরকারের অর্থের অপচয়-- লাভ বলতে ঘরে ঘরে কিছু শিক্ষিত দাসীর সৃষ্টি হচ্ছে এইটুকুই না, আমি বলছি না লেখাপড়ার উদ্দেশ্য কেবলই চাকরি করা তবে পুঁজিবাদীদের যুগে যাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নেই, তাদের দাসী ছাড়া আর কি বা বলতে পারি? তো এই দাসীদের দাসী হওয়ার পিছনে দায়ী কি? দায়ী আমাদের মানসিকতা, ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা, সমাজ ব্যবস্থা 


আর আমাদের নোংরা মানসিকতা, ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা, বৈষম্যপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থার পিছনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে দায়ী ধর্ম আর এই ধর্মের ছায়া তলেই পিতৃতন্ত্র আজও রাজত্ব করে চলছে সমাজে

তারিখঃ ৭/২/২০১৫

শুক্রবার, ১৭ জুলাই, ২০১৫

আমার মায়ের মোটর বাইক এবং কিছু শুকর ছানার আচরন


আমার মা একসময় বেশ কয়েকবছর ব্র্যাকের চাকরি করেছিল। সম্ভবত সেসব আরো ২০ বছর আগের কথা। তো ব্র্যাকে তাদের চাকরিতে অফিস থেকে সবাইকে একটি করে বাইক দেয়া হত। আমার মাও পেয়েছিল, আমার মা সহ তার আরও অনেক নারী সহকর্মীরা বাইক পেয়েছিল এবং তারাও বাইক চালাতো। বাইক চালিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গার ব্র্যাকের অধীনে থাকা স্কুলগুলো ভিজিট করতো। তাদের বাইক চালাতে যেই সমস্যায় পরতে হয়েছিল, সেটা হল, রাস্তায়ঘাটে তো কোন মেয়ে সচরাচর বাইক চালাতে দেখা যায় না, এখনই দেখা যায় না, আরও বিশ বছর আগে তো সেটা কল্পনাই করা যায় না। রাস্তায় ঘাটে সবাই অবাক হতো, এসব মেয়েদের বাইচালাতে দেখে কেউ কেউ বাজে ভাবে তাকাতো, কেউ বাজে কথা বলতো, অঙ্গভঙ্গি করতো। এসব পাত্তা না দিয়েই তারা বাইক চালাতো।

কিন্তু সবচেয়ে ভয়ংকর যেই কাজটি কিছু লোকে করতো, সেটা হল, কিছু ট্রাক, বাস, ট্যাক্সির ড্রাইভার তাদের গাড়ি বাইকের দিকে চাপিয়ে দিতো, বাইকের গা ঘেঁষে যেতো, ফলে বাইক চালক মেয়েগুলো বিচলিত হয়ে পরতো। এসবে বেশ কয়েকবার কয়েকজন এক্সিড্যান্ট ও করেছে। এইভাবেই একবার সিরিয়াস এক্সিড্যান্ট করে তাদের সহকর্মী, সুচরিতা নামে একটা মেয়ে মারা যায়। সেই মেয়ের তখন বিয়ে ঠিক হয়েছিল, আশীর্বাদ ও নাকি হয়ছিল। মেয়ে মারা যাওয়ার পর, পাত্রপক্ষ এসে মেয়ের পরিবারের কাছে মেয়ে দাবী করা শুরু করল। যেই মেয়ে মারা গেছে তাকে কিভাবে দিবে? এতো সম্ভব না। সেটা তো সবাই বুঝে, পাত্র পক্ষ ও বুঝে। তা হলে তাদের মেয়ে চাওয়ার কারণটা কি?? তাদের মেয়ে চাওয়ার কারন ছিল ভিন্ন। শেষ পর্যন্ত মেয়ে না দিতে পারলে, বিয়েতে যেসব যৌতুক দেয়ার কথা ছিল সেসব দিয়ে দিলে তারা আর ঝামেলা করবে না এই শর্তে তাদের লাখ খানেক টাকা সহ আরও কিছু ঘর সাজানোর সরঞ্জাম (সোফা, টিভি ইত্যাদি...) দিয়ে দেয়া হল।

মৃত মেয়েটির বিয়ের যৌতুকের টাকা দিয়ে পাত্র তার ঘর সাজালো, টাকা ব্যবসায় খাটিয়ে ব্যবসার উন্নতি করল, ঢাক ঢোল পিটিয়ে নতুন আরেকটি বিয়ে করল। এইদিকে মেয়ের পরিবার, মেয়ে হারালো, সাথে অর্থ সম্পদও।

এবার আপনি একবার ভাবুন তো, কি দোষে মেয়েটির প্রান হারাতে হল, কি দোষ করেছিল? বাইক চালানো কি কোন অপরাধ? নিশ্চয়ই না। তবে কি অপরাধ তার? তার একটিই অপরাধ, সে মেয়ে। মেয়ে হয়ে পুরুষের মত বাইক চালায় এরচেয়ে বড় অপরাধ আরেকটি আছে নাকি??
পুরুষেরা আসলে নারীদের কিভাবে দেখতে চায়? তারা চায় মেয়েরা সবসময় এমনভাবে থাকুক যাতে মেয়েদের নিয়ে তারা হাসাহাসি করে পুরুষ বলে নিজেদের নিয়ে গর্ব করতে পারে। যেমন ধরুন, ছেলেদের মধ্যে বন্ধুরা কাউকে হেয় করতে চাইলে বলে, ব্যাটা, তুই একটা লেডিস কিংবা বলে, মেয়েদের মত করছিস কেন? ছেলেদের মধ্যে কাউকে মেয়েদের সাথে তুলনা করা হলে সেটা হয় তাদের কাছে সবচেয়ে বেশি অপমানের। কেউ কোন কাজ না পারলে, বলে, তোমার দ্বারা এসব হবে না, যাও ঘরে গিয়ে চুরি পরে বসে থাকো। তার মানে যাদের দ্বারা কোন কাজ হয় না তারাই চুরি পরে। ছেলেদের মধ্যে কেউ ক্রিকেট ফুটবল ভাল খেলতে না পারলে বা হেরে গেলে, তারা বলে, যাও তুমি গিয়ে কুতকুত খেলো গিয়ে, ক্রিকেট ফুটবল তোমার জন্য না। মানে হল, ক্রিকেট ফুটবল বীরপুরুষদের খেলা। মেয়েদের খেলা নয়। মেয়েরা কুতকুত খেলবে, তাদের এই খেলা নিয়ে ছেলেরা ব্যঙ্গ করবে, হাসাহাসি করবে।

আচ্ছা কোন মেয়ে যদি বলে, আমি চুরি পরে ঘরে বসে থাকবো না, আমি কুতকুত না ক্রিকেট কিংবা ফুটবল খেলব, তবে কি পুরুষেরা খুশি হবে? মোটেই না, পুরো সমাজ মেয়েটির খেলা বন্ধ করতে, মেয়েটিকে চুরি পরিয়ে রাখতে উঠে পরে লাগবে। সুচরিতা নামের সেই মেয়েটিকে যেমন মেয়ে হয়ে বাইক চালানোর অপরাধে প্রান হারাতে হয়েছে..........।

নারী অক্ষম, নারী পারে না এবং নানান কাজে নারী পুরুষের তুলনা দিয়ে বিতর্ক টেনে নারীকে তারা পদানত করে রাখতে চায়। যারা এই ধরনের তুলনামুলক বিশ্লেষন গুলো করে, তাদের চিন্তা চেতনায় চরম চরম পুরুষতন্ত্র ছাড়া আর কিছু নেই। দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে অনেক প্রগতিশীলরাও এই বৈষম্যমুলক মানসিকতা থেকে মুক্ত নয়। এসব প্রগতিশীল পুরুষদের যাবতীয় প্রগতিশীলতা শুধু মাত্রই পুরুষদের জন্য।

পুরুষেরা শক্তির সব কাজগুলো দখলে নিয়ে নিজেরা শক্তির চর্চা করে নিজেদের শক্তিশালী করে নারীকে দুর্বল করে রাখে যাতে নারীর দুর্বলতা নিয়ে তারা হাসাহাসি করতে পারে, নারী যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে না পারে, পুরুষ ছাড়া যেন চলতে না পারে। যাতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ টিকে থাকে যুগ যুগ ধরে। পুরুষের এই ষড়যন্ত্র সব নারীর বুঝতে আর কতকাল লাগবে??

নারীর সচেতন হবার এখনই সময়, ধর্মের দোহায় দিয়ে, শলীনতার দোহাই দিয়ে নারীর পথচলা তারা প্রতিনিয়ত থামিয়ে দিতে চায়। নারীর শালীনতা নিয়ে পুরুষের এত মাথা ব্যথা। পুরুষের শালিনতা তবে কিসে?? ধর্মের নিয়ম কি শুধুই নারীর জন্য?? ধর্ম যে পুরুষের তৈরি, পিতৃতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার একটি হাতিয়ার, নারীরা এসব কবে বুঝবে??


২৫/৪/২০১৫