সোমবার, ২০ জুলাই, ২০১৫

ধর্ম অধর্ম সর্বত্র পিতৃতন্ত্রের রাজত্ব

আমার ছেলেবন্ধুদের কাছে প্রায় শুনি, মেয়েরা নাকি স্বার্থপর প্রমান দিতে বললে বলে, মেয়েরা পরীক্ষায় দেখায় না, একজন কোন নোট পেলে অন্যদের দেয় না অথচ ছেলেরা এর সম্পূর্ন ব্যতিক্রম হয় আমার কাছে ও মাঝে মাঝে মনে হয় আসলেই কি তাই! মেয়েরা কি আসলেই স্বার্থপর? তারপর অনেক ভেবে বুঝতে পারলাম, মেয়েরা স্বার্থপর হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়

মেয়েরা কেমন হয় সেটা আমার সাথে তুলনা দিয়ে লাভ নেই আমি এবং আমার বন্ধুরা সব ক্লাসের অন্য মেয়েদের তুলনায় ভিন্ন তো একদিন আমার মেয়ে বন্ধুরা আলোচনা করছিল, 'দেখ, ছেলেরা কত সুন্দর ক্লাস পালায়, কেউ ধরা পরলে অন্যেরা তাকে বাঁচিয়ে দেয় আর মেয়েগুলাকে দেখ, নিজেরা তো ক্লাস পালায় না, আমরা পালালে একটু যে সহযোগিতা করবে সেই মানসিকতাটুকু ও নেই, স্যারের এক থাপ্পড়ে সব কথা গড়গড় করে বলে দিবে মেয়েগুলা সব বোরিং, খালি লেখাপড়া- সাজগোজ-মেইকাপ-সিরিয়াল সহ আরও দুনিয়ার যত ন্যাকা ন্যাকা বিষয় আছে এসবই তাদের আড্ডার বিষয় বস্তু ক্লাসের ছেলেরা সবাই পিছনের বেঞ্চে বাসার জন্য মারামারি করে, আর ঢঙ্গী গুলা ফার্স্ট বেঞ্চে বসার জন্য মারামারি করে। মারামারি আর করে কই! পারে তো খালি কান্নাকাটি আর ঝগড়া করতে

আমাদের ক্লাসে এমন মেয়েদের সংখ্যাই বেশি আর আমার মত হাতে গোনা কয়েকজন আছে, যারা ক্লাস পালানো- কলেজ পালানো- মারামারি- দলগত পরীক্ষা ইত্যাদি কাজের জন্য বিখ্যাত তো এই দুই শ্রেণির মেয়ে একদিকে লেখাপড়া- সাজগোজ- নিয়ে থাকা ভীতুর ডিম, যাদেরকে আমাদের ভাষায় আমরা স্বার্থপর বলি এই বয়সেই তাদের মধ্যে একটা মহিলা মহিলা ভাব চলে এসেছে এদের কৈশোর-তারুন্য বলতে কিছু নেই এরা শৈশব পার করেই প্রাপ্ত বয়স্কদের মত আচরণ করে আর অন্যদিকে আমরা কজন উড়নচণ্ডী, যা খুশি তাই করে বেড়াই, লেখাপড়ায় আমাদের ভয়াবহ অ্যালার্জি এই দুই শ্রেণির মধ্যে পার্থক্য কোথায়? কেন এমন হয়?

আমি এর কারণ খুঁজে পেয়েছি কিছুটা যেই মেয়েগুলোকে আমরা স্বার্থপর- ঢঙ্গী -ন্যাকা বলি, তারা আসলে বেশিরভাগ চার দেয়ালে আবদ্ধ কিছু প্রানী আমাদের সমাজে মেয়েরা অধিকাংশই এমন চার দেয়ালে আবদ্ধ, শারিরীক ভাবে না হলেও মানসিক ভাবে তো অবশ্যই  তাদের স্বাধীনতা কলেজ আর স্যারের বাসার মধ্যেই সীমাবদ্ধ তাদের অধিকাংশকেই কলেজে, স্যারের বাসায় আনা নেয়া করার জন্য লোকের দরকার পরে এই মেয়েদেরই সমবয়সী একটি ছেলেকে বাবা মা কলেজে নিতে আসলে সেটা তার জন্য ভয়ংকর অপমানের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় আমি দেখেছি এইসব মেয়েদের বন্ধুদের সাথে একদিন বাড়ির বাইরে ঘুরতে যাওয়ার জন্য বাবা মার কাছে অনুমতি পেতে কত কষ্টই না করতে হয় আর মেয়েকে বাইরে পাঠিয়ে বাবা মা সারাক্ষণ চিন্তায় থাকে, মেয়ে ফিরল কিনা এই নিয়ে আর একই সমবয়সী একটি ছেলের কথা ভাবুন! ছেলে বাইরে যাবে, এতে আবার অনুমতি নেয়ার কি আছেতাহলে বলুন, এমন মেয়েরা স্বার্থপর হবে না তো কি হবে? তারা জগতের কতটুকুই দেখেছে? বাইরের জগতটি তো তাদের কাছে নিষিদ্ধ কিছুর মত তারা শুধু এটুকুই জানে বাইরের  জগতটি তাদের জন্য নিরাপদ নয় বাইরের জগতে ঘুরে বেড়ানোর অধিকার তাদের নেই তাদের সব কাজ ঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ একটিমাত্র কাজের জন্য তাদের বাইরে যেতে হয় তা হল লেখাপড়া আসলে তারা  বন্দী, তারা আসলে দেয়ালের ভিতরেরই কিছু প্রানী আর যারা আকাশ বলতে দেয়াল বুঝে, মাঠ বলতে মেঝে বুঝে এমন চার দেয়ালে আবদ্ধ থেকে কিভাবে কেউ আকাশের মত উদার হবে ?  যে যত দেয়ালের ভিতর থাকবে সে তত সংকীর্ন মনের হবে, স্বাভাবিক কথা

এই যে তারা লেখাপড়া করছে এই লেখাপড়ার মধ্যে ও কি তাদের মুক্তি সম্ভব? আমার মনে হয় না কারণ তাদের লেখাপড়া করা এবং তাদের বাবা মায়েদের মেয়েকে লেখাপড়া করানোর একমাত্র উদ্দেশ্য ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার দেখে, ধনী একটি পরিবারে মেয়ে বিয়ে দেয়া আমাদের সমাজে পরিবারে অতিরিক্ত অর্থের দরকার না পরলে ঘরের বউদের চাকরি করার অনুমতি মিলে না সুতরাং বিয়ের মধ্যে দিয়েই মেয়েদের জীবনের সকল সম্ভাবনার ইতি ঘটে


আমাদের শহরের সেরা কলেজটিতে মেধা তালিকায় প্রথম ১৫০ জনের মধ্যে ১১০জন মেয়ে, ৪০জন ছেলে আমাদের স্কুলের বন্দী প্রানীরাই সব ওই কলেজে চান্স পেয়েছে আমার এক বান্ধবি একদিন মজা করে বলছিল, 'ওদেরকে ভালো কলেজ টাতে চান্স দেয়ার কোন মানে হয়? গার্জিয়ান ছাড়া হাঁটতে পারে না, ঘোমটা ছাড়া চলতে পারে না, এই মেয়েগুলা তো বড় বড় ডিগ্রি নিয়ে সেই হাড়ি পাতিলই মাঝবে শুধু শুধু কিছু সিট অপচয়'  বলা হয়ে থাকে দেশের সেরা ছাত্রছাত্রীরা ডাক্তারিতে চান্স পায় এইবার মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়েছে একটি মেয়ে ডাক্তারিতে বেশিরভাগ চান্স পায় মেয়েরা কিন্তু বাংলাদেশের সেরাসেরা ডাক্তারদের মধ্যে কয়জন মেয়ে? রাস্তা ঘাটে ডাক্তারদের সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়, সেখানে এই পর্যন্ত কয়জন মেয়ে ডাক্তারের নাম পেয়েছেন? জানি খুবই কম সংখ্যকই মেয়ে পাবেন আমি তো শুধু ডাক্তারি পেশা দিয়ে একটি উদাহরণ দিলাম এমন সব পেশার ক্ষেত্রেই ঘটে ছেলেদের ক্যারিয়ার যখন শুরু হয়, মেয়েদের ক্যারিয়ারের তখন ইতি ঘটে বিয়ের মাধ্যমে


শিক্ষাখাতে সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করছে এই আশা নিয়ে যে, আজকের শিক্ষার্থীরাই ভবিষ্যতে দেশের উন্নয়নমূলক কাজে লাগবে তারাই তাদের মেধা দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে অথচ এই শিক্ষার্থীদের বিরাট একটি অংশের মেধা অবহেলায় নষ্ট  হয় তাদের মেধার অপচয়, সরকারের অর্থের অপচয়-- লাভ বলতে ঘরে ঘরে কিছু শিক্ষিত দাসীর সৃষ্টি হচ্ছে এইটুকুই না, আমি বলছি না লেখাপড়ার উদ্দেশ্য কেবলই চাকরি করা তবে পুঁজিবাদীদের যুগে যাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নেই, তাদের দাসী ছাড়া আর কি বা বলতে পারি? তো এই দাসীদের দাসী হওয়ার পিছনে দায়ী কি? দায়ী আমাদের মানসিকতা, ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা, সমাজ ব্যবস্থা 


আর আমাদের নোংরা মানসিকতা, ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থা, বৈষম্যপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থার পিছনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে দায়ী ধর্ম আর এই ধর্মের ছায়া তলেই পিতৃতন্ত্র আজও রাজত্ব করে চলছে সমাজে

তারিখঃ ৭/২/২০১৫

৩টি মন্তব্য:

  1. লিসেন নারীবাদি পিস অফ শিট, তুমিও নাস্তিক বোঝা যাচ্ছে। আমি কোয়ালিফিকেশনে বিশ্বাসী। আমি নারীর শিক্ষায়ও বিশ্বাসী। কারন, মা যদি শিক্ষিত না হয় ছেলে হয় তারেকের মতো। দেশ হয় দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু পুরুষ হিসেবে আমি মনে করি যত সম্ভব টাকা আয় করা হচ্ছে আমার দায়িত্ব। এর জন্য কি আমার মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়?? না, তবে আমার মেধা বিক্রি করতে হয়। একটু বেশী কাজ করতে হয়, মাথা খাটাতে হয়। আমি মনে করি, যদি আমি বিয়ে করার পর কোন ধরনের সমস্যার কারনে আমার পরিবার যেন ফাইন্যান্সিয়াল চাপে না পড়ে। আমার এখোনো বিয়ে হয় নাই, কিন্তু আমি অসাধারন এক পরিবারের প্রস্তুতি গ্রহন করছি। এখন, কোন মেয়ে কি এই কাজটা করতে পারবে? তুমি নিজে তো মেয়ে... তোমার ভবিষ্যতের পরিবারের জন্য তুমি কি করতেসো? যে নিজের পরিবার নিয়ে ভাবে না তারা স্বার্থপর, অর্থাৎ যারা কম আয় করে তারা সবাই স্বার্থপর এবং অলস... শুধু তাই না তারা ভিতুও বটে! এক কথায় পিস অফ শিট, হাগুর দলা।

    তুমি নারীবাদি বোঝা যাচ্ছে, যদিও তোমার বিশেষ একটা লিঙ্গ নাই... তারপরও তুমি নিজেই পারলে পরিবারের বাবা হতে চাও!! ঠিক আছে, পারলে পরিবারের পুরুষের দায়িত্ব (প্রচুর আয় করে ফ্যামিলির প্রত্যেকটা মেম্বারের চাহিদা, প্রত্যাশা, বিলাসিতা পুরন করা এবং নিজের অবর্তমানে আর্থিকভাবে সচ্ছল রাখা) পালন করে দেখাও।

    শুধু তুমি না, তোমার মতো অনেক অর্ধ পুরুষ আছে যারা নিজের বউকে কাজে পাঠিয়ে টাকা আয়ের লোড কমাতে চায় এবং নিজের বাচ্চাদের জীবন না বুঝেই শেষ করে দেয়।

    ফাক অল অফ ইউ ফেমিনিস্ট কমিউনিস্ট বাস্টার্ডস। ফাক অফ।

    -আমেরিকা থেকে একজন ক্যাপিটালিস্ট।

    উত্তরমুছুন
  2. তুমি কিন্তু ভালো লিখছ।
    চালিয়ে যাও।

    উত্তরমুছুন
  3. কিছু ক্ষেত্রে কথা গুলো সম্পূর্ন সত্য। মেয়ে বলতেই গৃহপালিত প্রানি বুঝায়। যা অামি মোটেই মানতে পারি না। সবারই স্বাধীনতা থাকা উচিত। তবে তাকে ঐ স্বাধীনতা দেওয়ার অাগে অবশ্যই স্বাধীনতারর মূল্য বুঝাতে হবে। রাতভর নাইট পার্টি করলেই কিন্তুু স্বাধীনতা হল না। যাদের দেখলে স্বাধীনতার অপমান হয়। মনে হয় তাদের বাসায় অভিবাবক নাই। সব দিক বিবেচনা করেই স্বাধীনতা দেওয়া উচিত। শুধু স্বাধীনতা দিলেই হবে না জবাবদিহিতা থাকতে হবে।

    উত্তরমুছুন